সেরা প্রাপ্তি
সেরা প্রাপ্তি


মানুষের জীবন কখনো সরলরেখায় চলে না। জীবনে নানা উত্থান-পতন থাকে। সেই জীবনে চলার পথে অনেক মানুষের নানা ধরনের প্রাপ্তি ঘটে। আমার জীবনে এরকমই একটি প্রাপ্তির কথা আজ আপনাদের সাথে ভাগ করে নিতে চাই। এটা শুধু প্রাপ্তি বললে হয়তো কম বলা হবে। কারণ, এটি আমার জীবনের একটি সেরা প্রাপ্তি। স্কুল জীবন থেকেই নানা বিষয়ে বন্ধুদের সামনে ঘরোয়া আলোচনায় বক্তব্য রাখতাম।স্বামী বিবেকানন্দ, এপিজে আবদুল কালাম, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস প্রমুখের বইয়ের পাতা যখন ওল্টাই এবং তাঁদের বক্তৃতা গুলো পড়তে শুরু করি, ঠিক তখন থেকেই আমারও তাঁদের মতো বাগ্মী হওয়ার ইচ্ছা জাগে। তার জন্য নানা ধরনের বই পড়তে শুরু করি। বাবার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে জ্ঞানার্জন করতে থাকি। এইভাবে নিজেকে তৈরি করতে শুরু করি। এখন আমি কলেজে পড়ি। একদিন শুনলাম কলেজে বসন্ত উৎসব হবে। খোলা মঞ্চ, সামনে বহু ছাত্র-ছাত্রী এবং অধ্যাপক-অধ্যাপিকা থাকবেন ভেবে মনে কিছুটা ভয় লাগছিল। কিন্তু স্বামীজীকে স্মরণ করে 'বসন্ত উৎসব' সম্পর্কে বলার জন্য নাম দিয়েই দিলাম। তারপর বাড়িতে এসে বাবাকে বলি "বাবা, বসন্ত উৎসব সম্পর্কে আমাকে কিছু বলো।" বাবা খুব ভালো বাগ্মী। এটি আমার একটি বড় পাওনা। বাবাও বলে দিলেন, আমিও শুনলাম। কিন্তু মনে হচ্ছিল ঠিক করে বলতে পারব না। বসন্ত উৎসবের দিন এলো, সবাই আবিরের রঙে রাঙিয়ে নিচ্ছিল নিজেদেরকে। কিন্তু আমার মধ্যে একটা ভীতি কাজ করতে থাকে এবং চুপ করে ক্লাসে বসে থাকি। এরপর আমার নাম ডাকলো। মনে ভয় নিয়ে উঠেই পড়লাম মঞ্চে। মঞ্চের সামনে অধ্যক্ষ মহাশয়সহ অধ্যাপক অধ্যাপিকাবৃন্দ বসে আছেন এবং অগণিত ছাত্রছাত্রীরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে স্বামীজীর নাম স্মরণ করে বলতে শুরু করলাম। তারপর বলে যখন নামছি,একমাত্র হাততালির আওয়াজই আমার কর্ণকুহরে প্রবেশ করল। শিক্ষক-শিক্ষিকারা ও আমার সহপাঠীরা বলে উঠলেন,"দারুন বলেছিস সাগ্নিক!" শুনে তো আমার আনন্দের সীমা নেই। এরপর মনে আরো ভরসা পেলাম। তারপর আমি ঠিক করলাম বাগ্মিতার সব ধরনের বিষয় ও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করব। কিছুদিন আগে সেই মতো আমি অংশ নিলাম ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মবর্ষ উপলক্ষে বাগ্মিতা প্রতিযোগিতায়। উঠলাম পোডিয়ামে। না সেই ধরনের ভয় আর নেই! নেই কোনো জড়তা! শুরু করলাম ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনের ওপর বলা। আমার মনে হলো যেন আমি নিজে বলছি না ভেতর থেকে কেউ যেন বলিয়ে দিচ্ছেন। প্রতিযোগিতা শেষ হলো, ফলাফল ঘোষণার পালা। বসে আছি কারা কারা প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করল শোনার জন্য। হঠাৎ আমার কানে এল আমার নাম দ্বিতীয় স্থান অধিকারী হিসেবে ঘোষণা হচ্ছে। আমি প্রথমে হতবাক হয়ে গেছি শুনে। আমার মনে হচ্ছিলো আমি ভুল শুনেছি। কিন্তু আমার ভুল ভাঙ্গলো। পুনরায় আমার নাম ডাকা হলো, তখন আমি তাড়াতাড়ি করে উঠে দাঁড়াই। সেদিন আমার মধ্যে এক অদ্ভুত আনন্দ হচ্ছিল। আমার এই দ্বিতীয় হওয়া এবং পরের দিনের পুরস্কার নেওয়ার মুহূর্তটি ছিল আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তি।