SHUBHAMOY MONDAL

Drama Classics Inspirational

4  

SHUBHAMOY MONDAL

Drama Classics Inspirational

সেকুলার

সেকুলার

3 mins
210



প্রখ্যাত সাহিত্যিক Mark Twain সাহেবের একটা বহুশ্রুত কথন, সম্প্রতি যা জীবন দিয়ে উপলব্ধি করার অভিজ্ঞতা হলো আমার এক সহকর্মী দাদার ও তাঁর সূত্রে আমাদের কয়েকজনেরও - সে'টাই এই উপস্থাপনার মূল উপজীব্য। 


টোয়েন সাহেবের সেই বিখ্যাত Quotation টা আগে বলি - "Truth is stranger than fiction, but it is because Fiction is obliged to stick to possibilities; Truth isn't." অর্থাৎ বাস্তবে যা ঘটে তা' সত্য এবং সেটা কল্পনার চেয়েও বেশি অদ্ভুত হয়, কারণ কল্পনায় শুধু সম্ভাবনার কথাই বলা হয়ে থাকে; কিন্তু ঘটনায় তো সবটাই বাস্তব।


এবার একটু বলি, শিরোনামের এই বহু পরিচিত শব্দটার বিষয়ে। সেকুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ - এটা কোনও একটি বিশেষ মতাদর্শকে প্রচার করে না, কোন মতাদর্শকে তোষণের তো প্রশ্নই নেই। ধারণাটা আজকের দিনে অনেকটা সোনার পাথর বাটি মনে হলেও, ভুলে গেলে চলবে না জটায়ু কিন্তু সোনার কেল্লার দেশে গিয়ে তার দেখা পেয়েছিলেন!


যাই হোক, এসব কথা ছেড়ে এবার সাম্প্রতিক কালে প্রত্যক্ষ করা এবং গভীরভাবে ঐ বিষয়টাকে অনুভব করতে বাধ্য করলো যে ঘটনাটি সেই প্রসঙ্গে আসি।


আমার সিনিয়র অফিসার, হীরকদা, গত বছর লক ডাউনের সময় সব রকম প্রিকাওশন নেওয়ার পরও সম্ভবত কোভিড-১৯ এর শিকার হয়েছিলেন। সম্ভবত কথাটা এইজন্য বললাম, কারণ সিম্পটম দেখে তিনি নিজেই আইসোলেট হয়ে গিয়েছিলেন এবং তাঁর ডাক্তার বন্ধু তাঁকে যে মেডিকেল সিডিউলের মধ্যে দিয়ে চালনা করেছিলেন, তিনি তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে দিন পনেরো পরেই সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠছিলেন, কিন্তু টেস্ট করিয়ে পজিটিভিটির প্রুফ জোগাড় করতে যাননি।


হীরকদার পরিবারে তাঁর স্ত্রী পুত্র ছাড়াও, রয়েছেন দু'জন অতি সিনিয়র সিটিজেন। তাই অগ্রিম এবং আনুষঙ্গিক সতর্কতা তাঁরা প্রথম দিন থেকে মাইন্যুটলি মেনে চলেন। তবুও এবারে প্রায় একসঙ্গে, কয়েকটা দিনের ব্যবধানে, সমস্ত লক্ষণসহ অসুস্থ হয়ে পড়লেন তাঁর স্ত্রী ও পুত্র। তাঁর তিন কামরার ফ্ল্যাটে একঘরে স্ত্রী, একঘরে পুত্র এবং অন্য ঘরে বয়োজ্যেষ্ঠদের আইসোলেট করে রাখেন তিনি। নিজে থাকছিলেন ডাইনিংএর সোফায়। ভয় একটাই, তিনি নিজে হয়তো সামলে নিতে পারবেন কিন্তু ওনারা দু'জন বয়স্ক মানুষ...


নিজে কখনও রান্না ঘরের দিকে পাও রাখেননি আগে, কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সেখানেই কাটতে লাগল তাঁর দিনের সব থেকে বেশিরভাগ সময়। শুধু রান্নার কাজই নয়, ঘরের সাফ সাফাই, কাপড় চোপড় ধোয়া, মোছা সব কাজই তো তখন একা তাঁকেই করতে হচ্ছিল। ফলে, অস্বাভাবিক ক্লান্তি গ্রাস করছিল তাঁকে। তার ওপর মনে একটা গভীর উদ্বেগ আর অদ্ভুত এক অনিশ্চয়তা যেন ঘিরে ধরছিল তাঁকে।


রান্নাঘর থেকেই একদিন হঠাৎ দেখতে পেলেন দূরের এক মন্দিরের চূড়ার উপরের অংশ দেখা যাচ্ছে। আগে কখনও রান্না ঘরে যাননি তিনি আর কোনো ধর্মের প্রতিই তাঁর সেরকম আকর্ষণ বা বিশ্বাস কোনোটাই নেই বলেই হয়তো কখনও লক্ষ্যই করেননি যে এই দিকটায়, বাড়ির এত কাছেই একটা মন্দিরও আছে! 


যাই হোক, কখনও আগে যা করেননি বা করবেন বলে ভাবেনওনি, আজ সেটাই করে ফেললেন - মনে মনে করজোড়ে প্রার্থনা করলেন সেই মন্দিরের অধিষ্ঠিত / অধিষ্ঠাত্রী দেবতা / দেবীর উদ্দেশ্য, যেন তাঁর পরিবারের ওপর থেকে এই দুর্যোগের মেঘ দ্রুত কেটে যায়। রোজ ঐ রান্নাঘরে গেলেই সেই মন্দিরের চূড়ার পানে চেয়ে মনেপ্রাণে শুধু এই প্রার্থনাই করছিলেন তখন তিনি।


অবশেষে দিন কুড়ি যেতেই, সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলেন তাঁর স্ত্রী ও পুত্র দু'জনেই। বয়স্ক দু'জনও এখনও একদম সুস্থ ও স্বাভাবিক আছেন। শুধু হীরকদা নিজে মানসিক এবং শারীরিক প্রেসার নিতে নিতে প্রায় নুইয়ে পড়েছেন ততদিনে। শরীর যেন আর ধকল নিতে পারছিল না তাঁর, তবুও তিনি সে'দিনই দৌড়ালেন সেই মন্দিরের দিকে। জানা ছিল না তাঁর, সেটা কোন দেবতা বা দেবীর মন্দির কিন্তু আজ সেখানে তাঁকে একবার মাথা ঠেকিয়ে আসতেই হবে, কারণ তাঁর প্রাথনা তো সার্থক হয়েছে।


বাড়ির পিছন দিকের রাস্তা দিয়ে অলিগলি বেয়ে যখন পৌঁছলেন তাঁর দেখা সেই বিশেষ চূড়াবিশিষ্ট ভবনটির সামনে, দেখেন - সেটা মহম্মদ রহমতুল্লাহ নামের এক ব্যক্তির বাড়ির চিলেকোঠার চূড়া। আকার এবং অবস্থান দেখে মনে হলো তাঁর - হয়তো রহমত সাহেব ওখানে বসেই নমাজ পড়েন রোজ!


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama