সেই পুতুলটি
সেই পুতুলটি
প্রায় এক বছর হতে চলল বাংলোটি। কিন্তু বছরের শেষের দিকে বাংলোটি কেমন গা- ছমছমে লাগতো সেলি-র । আসলে গত ২৫-সে ডিসেম্বর সেলি একটি পুতুল উপহার পেয়েছিল তার কাকুমনি-র কাছ থেকে। পুতুলটি-র সোনালী কোঁকড়ানো চুল, নীল চোখ ও একটি লাল রঙের ফ্রক ছিল আর তাই তাকে দেখতেও খুব মিষ্টি লাগতো। সেলি আদর করে তার নাম রেখেছিল লিজা ।
তা বছরের শেষের দিকে বাংলোটি কেমন গা-ছমছমে লাগতো। এমনিতে বাংলো এখন প্রায় ফাঁকা - ফাঁকা । প্রায় সবাই বদলি হয়ে চলে গেছে। তা, সেলি-ও ভাবছিল বদলি হওয়ার কথা, আর কিছু দিন পরেই সে বদলি হয়ে অন্য জায়গায় চলে গেল। আর সেই বাংলো বাড়ি ও তার পুতুল লিজা -ও পড়ে রইল পরিত্যক্ত ভাবে।
এইভাবে কেটে গেল অনেক বছর আস্তে - আস্তে সেই সুন্দর বাংলো হয়ে গেল একটা ভগ্ন পোড়ো-বাড়ি ।সেলি-র এখন ৩৬ বছর বয়স । তার মনে পড়লো সেই বাংলোর কথা, আফিস থেকে সরাসরি ছুটি নিয়ে চলে এলো সেই বাংলাতে। কিন্তু সে তো আর বাংলো ছিল না, সে তো এখন পোড়ো-বাড়ি । তবুও সে আস্তে -আস্তে বাড়ির ভেতরে ঢুকলো । আস্তে - আস্তে সে তার ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। ঘরের ভেতর ঢুকে-ই সে অবাক হয়ে গেল। ঘরের আর সব জিনিসপত্র অগোছালো কিন্তু লিজা এখনো সেই সুন্দর ভাবে আছে, তার সোনালী কোঁকড়ানো চুল, নীল রঙের চোখ এবং ফ্রক এখনো সুন্দরভাবে আছে। সেলি নিয়ে কিছু মাথা ঘামালো না।আশপাশ থেকে কিছু কর্মচারী ডেকে এনে বাংলোর ভেতর ও বাইরে টা পরিষ্কার করালো। সেই রাত্রে এক অস্বাভাবিক কান্ড ঘটলো। সেলি মাঝ রাতে জেগে উঠল এক বিকট শব্দে, সে দেখল লিজা আর সেই পুতুল নেই এক জ্যান্ত মূর্তি ধারণ করে ঘরময় ছুটে বেড়াচ্ছে।সেলি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেল এবং চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে গেল।
সকালে যখন ঘুম ভাঙ্গলো সেলি-র তখন রাতের ঘটনাটা তার স্বপ্ন বলে মনে হল। সারাটা দিন বেশ ভালো ভাবেই কাটল রাত্রে ডিনার এ সেলি স্যান্ডউইচ এবং স্যুপ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
খুব সকালে সেলি-র ঘুম ভাঙলো, লোকজনের হট্টগোলে। চোখ খুলে দেখল সে ছাদে দাঁড়িয়ে আছে এবং বাগানে কিছু লোক কোন কিছুকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। সে তাড়াতাড়ি নিচে নামছিল। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে তার মনে হলো নিজেকে খুব হালকা মনে হচ্ছে, আর মনে হচ্ছে যেন সে হাওয়ায় উড়ছে ।
ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢুকে সেলি যা দেখল, তাতে সেলি- র হাড় হিম হয়ে গেল, এত তার নিজেরই মৃতদেহ। ভিড়ের মধ্যে সে শুনতে পেল কেউ যেন বলে উঠলো "মেয়েটা যেন কোনো ঘোরের মধ্যে ছিল, সাত সকালে হাঁটতে বেরিয়ে দেখি মেয়েটির ঝুলবরান্দার রেলিং এর উপরে উঠে...... উঃ কী ভয়ঙ্কর দৃশ্য । রেলিংয়ের একটা জায়গা খুব নড়বড়ে ছিল। আর একটা বিকৃত পুতুলকে অনুসরণ করেছিল মেয়েটি..... হঠাৎ নড়বড়ে জায়গাটা দিয়ে হাঁটতে গিয়ে পড়ে গেল মেয়েটি, রক্তে ভরে গেল বাগান"।
সেলি-র কাছে এবার ব্যাপারটা ভোরের আলোর মত পরিষ্কার হয়ে গেল। লিজা তার হাত ধরে চলে এলো বাগানের একদম শেষ প্রান্তে এবং আস্তে -আস্তে তারা অদৃশ্য হয়ে গেল।
আর সেই বাংলো বাড়ি পড়ে রইল আবার সেই পরিত্যক্ত ভাবে!!!!