STORYMIRROR

Banabithi Patra

Drama

2.4  

Banabithi Patra

Drama

সাঁতারু

সাঁতারু

3 mins
1.7K


ট্রেন হাওড়া ঢুকতে আর বেশি দেরি নেই। আপার বার্থ থেকে নেমে নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে জানলার ধারে বসে শৈবাল। রাতের অন্ধকার একটু একটু করে আবছা হয়ে আসছে দিনের আলোয়। জীবিকার টানে জীবনে প্রথমবার সে কলকাতা আসছে।

শৈবালের সারাটা জীবন কেটেছে পাহাড়ঘেরা ছোট্ট গ্রামে। যেখানে কাল পাতলেই শোনা যায় পাহাড়ি নদীর বয়ে চলার আওয়াজ। ছোট ছোট পাহাড়ি ঝোরা, পাহাড়ের গায়ে নাম না জানা কত ফুল আর দিগন্ত বিস্তৃত চা ক্ষেত। শহরের ব্যস্ততার জীবন তার কাছে সম্পূর্ণ অজানা।

ঈশানের আসার কথা স্টেশনে। বাবার বন্ধুর জয়ন্তকাকুর ছেলে ঈশান। বহুবছর যোগাযোগ ছিল না জয়ন্তকাকুদের সাথে। তাঁরা আর পুরনো ঠিকানায় থাকে কিনা সেটাও জানা ছিলনা। তবু চাকরির খবরটা পাকা হওয়ার পর পুরনো ঠিকানাতে একটা চিঠি দিয়েছিল শৈবালের বাবা। সেভাবে পড়াশুনো শিখতে পারেনি শৈবাল, খুব সামান্য একটা চাকরী। শৈবালের কেমন একটা কুণ্ঠাবোধ হচ্ছিল সামান্য চাকরির খবরটা জানিয়ে এতদিন যোগাযোগ না থাকা মানুষগুলোর কাছ থেকে স্বার্থপরের মত সাহায্য প্রত্যাশা করতে। কিন্তু মা-বাবার দুশ্চিন্তা দেখে আর না বলতে পারেনি।

চিঠি পেয়ে শৈবালের ফোন নম্বরেই ফোন করেছিল ঈশান। জয়ন্তকাকু আর নেই খবরটা তখনই পেয়েছিল।

ঈশান নিজেই বলেছে, সে শৈবালকে নিতে আসবে হাওড়া স্টেশনে। তাদের বাড়িতেই শৈবালকে থাকার কথা বলেছে বারবার করে। তবে শৈবালের ইচ্ছা আছে নিজের একটা থাকার ব্যবস্থা করে নেবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।


বাবা-মায়ের সাথে ঈশান একবার ওদের গ্রামে গিয়েছিল। তখন ওরা সবাই ছোট, স্কুলের নীচু ক্লাসের ছাত্র। এতদিন পর চিনতে পারবে তো ঈশানকে! হাওড়া স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে ভাবছিল শৈবাল। তখনি একজন এসে বলল,

-তুমিই শৈবাল তো!

শৈবাল ঈশানকে চিনতে না পারলেও ঈশান সহজেই চিনে নিয়েছে শৈবালকে।

-চলো আগে বাড়ি যাই, তারপর জমিয়ে গল্প হবে।

ট্যাক্সিতে যেতে যেতে টুকটাক কথা হচ্ছিল দুজনের মধ্যে।

শৈবাল জানতে চায়,

-তুমি এখন কি করো?

শৈবালের কথায় হেসে ওঠে ঈশান। বলে,

-সাঁতার কাটি।

-সাঁতার কাটো মানে?

অবাক হয়ে জানতে চায় শৈবাল।

-আমি একজন সাঁতারু। ঐ সাঁতারের দৌলতেই একটা চাকরি জুটিয়েছি।

-ওহ্....

সাঁতার কাটার অর্থটা এবার যেন বুঝতে পারে শৈবাল।

-তবে ভাই, তুমি না থাকলে আমার সাঁতার শেখা হতো না।

ঈশানের কথার অর্থ বুঝতে পারেনা শৈবাল।

শৈবালের দিকে তাকিয়ে হেসে ওঠে ঈশান।

-মনে পড়ে, ছোটবেলায় একবার তোমাদের বাড়ি গিয়েছিলাম। তোমাদের বাড়ির কাছে সেই ছোট্ট পাহাড়ি নদীতে স্নান করতে নিয়ে গিয়েছিলে আমাকে। তোমার একজন বন্ধুও গিয়েছিল আমাদের সাথে।

মনে পড়ে যায় শৈবালের।


ঈশানকে নিয়ে নদীতে স্নান করতে গিয়েছিল। বন্ধু দুলাল ছিল সাথে। শহরের ছেলে ঈশান কতো পড়াশুনো পারে বলে কদিন ধরে বাবা-মায়ের কাছে অনেক কথা শুনতে শুনতে, মনে মনে রাগই হয়েছিল ঈশানের ওপর। বাড়ির কাউকে না বলে, ইচ্ছা করেই নদীতে স্নান করতে নিয়ে গিয়েছিল ঈশানকে। প্রথমে জলে নেমে আনন্দ পেলেও, একটু গভীরে গিয়ে ভয় পেয়ে গিয়েছিল ঈশান। আজ মনে পড়ে লজ্জা লাগছে শৈবালের। সে আর দুলাল মিলে জল ছিটিয়ে কিভাবে বিরক্ত করেছিল ঈশানকে। ঈশান সাঁতার জানে না, ডুবে যা ভেবে যত ভয় পাচ্ছিল, ওদের আনন্দ যেন তত বাড়ছিল। শেষে তো বেচারা কেঁদেকেটে যা তা কাণ্ড। বাড়িতে এসে বকা খেলেও ঈশানকে নাকাল করতে পেরে ভীষণ আনন্দ হয়েছিল ওদের।

ঘটনাটা মনে পড়তেই মাথা নীচু করে নেয় শৈবাল। সেদিন নিজের এলাকায় পেয়ে ঈশানের সাথে কত খারাপ ব্যবহার করেছিল, আর আজ সেই ঈশানই এই অজানা শহরে তার একমাত্র ভরসা।

ঈশানের হাতটা চেপে ধরে শৈবাল।

-ক্ষমা কোরো সেদিনের ব্যবহারের জন্য।

কোনরকমে হাতটা ছাড়িয়ে নেয় ঈশান।

-আরে বন্ধু, ক্ষমা কেন! আমারই তো তোমাকে থ্যাঙ্কস্ বলা উচিত। সেদিন আমাকে অমন পরিস্থিতি না ফেললে, ফিরে এসে সাঁতার শেখার জেদটা চাপতো না আমার। আর সাঁতারু হওয়াও হতো না।

দুই বন্ধুর মুখেই হাসির রেখা.....


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama