রক্ত
রক্ত
ট্যাক্সি ধরলাম অফিসের সামনে থেকে। ক্লান্ত তাই উঠেই সিটে শরীরটা এলিয়ে দিলাম। অনেক রাত হয়ে গেল আজ। হটাৎ ড্রাইভারের সিটের পিছনে লেখা ট্যাক্সির নম্বরটা চোখে পড়তেই চমকে উঠলাম। দু-মাস আগে আনন্দবাজার পত্রিকায় পড়া ঘটনা মনে পড়ে গেল। তিরিশ বছরের এক মহিলা সেক্টর ৫ থেকে ট্যাক্সিতে উঠেছিল রাত্রি ১১টার সময়। শীতের রাত, রাস্তাঘাট ফাঁকা,চিংড়িঘাটা মোড়ে ট্যাক্সি ড্রাইভার একজনকে তোলে। গাড়ি চালাতে চালাতেই বিয়ারের ক্যানে মুখ, তারপর ফাঁকা জায়গায় গাড়ি থামিয়ে... । সেই ট্যাক্সির নম্বর আর এই ট্যাক্সির নম্বর এক। ভদ্রমহিলা পরেরদিন শিলতাহানির অভিযোগ এনেছিল বাড়ীর চাপে। সত্যি সমাজটা আজও পাল্টালোনা। উনি ধর্ষিত হয়েছিলেন সেটা জেনেছিলাম এক ডাক্তার বন্ধুর কাছে। দিন সাতেকের মধ্যে বেল পেয়ে যায়, এখন দিব্যি সবার সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মনের ভিতর ক্ষোভ, ঘৃণা আর কিছুটা ভয় ঘোরাফেরা করছে। আই .টি তে চাকরি করলেও ছোটবেলায় ক্যারাটে শিখেছিলাম। আমি নিজে মেয়ে হয়েও ছেলে বন্ধুদের সাথে ফুটবল খেলতে যেতাম। তাছাড়া কাঁচা পেয়ারা, আম খাওয়ার জন্য ব্যাগের ভিতরে একটা ছোটো বক্সে শুকনো গুঁড়ো লঙ্কা রাখাই থাকে। মনে হচ্ছে আজ সেটা কাজে লেগে যাবে।
গাড়িটা যখন চিংড়িঘাটায়, ড্রাইভারের মুঠো ফোনটা বেজে উঠল। ফোনের কথপোকথন শুনে আমার তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব কেটে গেল, বিশেষ করে শেষ দু-লাইন, দাদা আমরা পৌঁছেগেছি তুমি কখন আসছ? আমি আধঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাবো, তোরা বেডের ব্যবস্থা কর, টাকার জন্য ভাবিস না। এবার গাড়ির গতি ৬০ থেকে ৮০ হয়ে গেল। আর চুপ না থেকে বললাম গাড়ির গতি কমান, নাহলে আমাকে এখানেই নামিয়ে দিন। কোনো উত্তর পেলাম না, গাড়ি একই গতিতে চলতে থাকল। এখন আর মাথা কাজ করছে না, বাড়ীতে ফোন করলে বয়স্ক বাবা-মা দুঃসচিন্তা আর ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া কিছু করতে পারবেন না। ভাবছি লঙ্কা গুঁড়োটা দেবো চোখে ছিটিয়ে। কিন্তু তাতে যে দুর্ঘটনা ঘটবে, আমি নাও বাঁচতে পারি! হটাৎ করেই মনে পড়ল আমার পিশির ছেলে রঞ্জুদা কলকাতা পুলিসে চাকরি পেয়েছে। রঞ্জুদা কে ম্যাসেজ করে গাড়ির নম্বর আর কোথাই আছি জানালাম। শেষে লিখলাম খুব বিপদে পড়েছি দাদা বাঁচাও! মিনিট দশেক কোনো কথা বলিনি, মনে মনে শক্ত হওয়ার চেষ্টা করছিলাম এবং জানোয়ার গুলো ঝাঁপালে কিভাবে লড়াই করব সেটা ভাবছিলাম। ড্রাইভারের সামনে আইনাতে দেখতে পেলাম একটা পুলিশের গাড়ি একদম পিছনে চলে এসেছে। পুলিশের গাড়িটা আর একটু এগিয়ে ট্যাক্সিটাকে থামাতে বাধ্য করল। আমি গাড়ি থেকে নেমেই বললাম গ্রেপ্তার করুন স্যার, এই লোকটা মাস দুয়েক আগে একজনকে ধর্ষণ করেছিল আজ আমাকে নিয়ে যাচ্ছিল... । না স্যার আমি এই রকম নই, দিন পনেরো হল এই গাড়িটা চালাচ্ছি... আমি মাঝখানেই থামিয়েই এক চড় মারলাম, চুপকর মিথ্যাবাদী আমি ফোনের সব কথা শুনেছি। ড্রাইভারটা এবার কাঁদতে কাঁদতে বলল, স্যার আমার ছেলে ছাঁদ থেকে পড়ে গেছে, হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, ওকে এখনই দু-বোতল রক্ত দিতে হবে।