Mithun Mondal

Drama Romance Tragedy

3  

Mithun Mondal

Drama Romance Tragedy

ঃ-সোহাগ-

ঃ-সোহাগ-

4 mins
233



অনিমেষ ফেসবুকে প্রায় ঘণ্টা খানেক খুঁজেছে ঋদ্ধিমাকে। কখনও বাংলায় টাইপ করে কখনও বা ইংরাজিতে। সন্ধ্যের সময় যে ঋদ্ধিমা রায় কে দেখেছে তার সাথে মেলাতে পারছে না। দুএকজন ঋদ্ধিমার প্রোফাইলে হিরোইনের ছবিও রয়েছে। সাহস করে একজনকে ম্যাসেজ করল অনিমেষ। আপনি কি সেই ঋদ্ধিমা যার বাড়ি নৈহাটি রেল কলোনিতে। কিছুক্ষণ পর উত্তর এলো ‘না’। শেষে একটু হতাশ হয়েই ক্যান্টিনে খেতে গেল। খেতে গিয়ে আর এক রোমহর্ষক কথা শুনল।এক সপ্তাহ আগে রহিম শেখ নামে যে লোকটা গণপিটুনিতে মারা গিয়েছিল। সেই কেসে মনোজ কুমারকে ধরে নিয়ে গেছে। মনোজের এবার ফাইন্যাল ইয়ার। কি যে হবে ভগবান জানে!ক্যান্টিনেই শুনল সে শুধু দেখতে গিয়েছিল। ক্যান্টিন থেকে ফিরে এসে আবার ফেসবুক খুলল। দেখতে পেল একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এসেছে। নাম কুহেলী রায়। তাহলে তনিমাদি কি নামটা বলতে ভুল করেছিল।ঋদ্ধিমা রায় নাম না হয়ে কুহেলী রায় হবে।অনিমেষ একটু ভাবল। খুব তাড়াতাড়ি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করে, ম্যাসেজ লেখে, আমি তোমাকে প্রায় সন্ধ্যে থেকে খুঁজছিলাম। তোমার নামটা ভুল শুনেছিলাম তাই খুঁজে পাইনি। যাই হোক তুমি ঠিকঠাক পৌঁছে গিয়েছিলে তো? মিনিট পাঁচেক পরে উত্তর এলো, ‘ঠিক বুঝলাম না, আমি তো আজ ঘর থেকে কোথাও যাই নি। অনিমেষ ম্যাসেজ করল, ‘তুমি আজ নীল রতন মেডিক্যাল কলেজে এসেছিলে না? প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর এলো ‘না’।এবার অনিমেষ কুহেলীর প্রোফাইলে গিয়ে অ্যাড্রেস দেখে, বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর। একজন মিউচুয়াল ফ্রেন্ড আছে। অনিমেষ ‘সরি’ লিখে ফেসবুক থেকে বেড়িয়ে আসে। পড়তে বসল, বই খোলা আছে মাথায় কিছু ঢুকছে না। ঘণ্টা খানেক চেষ্টা করেও যখন পড়ায় মন বসল না, তখন ছাদে উঠল। মৃদুমন্দ হাওয়া বইছে। তবে হস্টেলের বারান্দায় আজ কাউকে দেখা যাচ্ছে না। রহিম সেকের মৃত্যুর পর থেকেই সবাই বেস চাপে আছে। যদি পুলিশ সন্দেহ বশত কাউকে ধরে নিয়ে যায়। এরকম পরিস্থিতিতে কেউ বাড়িও যেতে পারছে না। যারা দেখতে গিয়েছিল তারা সবচেয়ে বেশি চাপে আছে। যে দু-একজনকে ধরে নিয়ে গেছে তারা যদি একে একে সবার নাম বলে দেয়? হোস্টেলে একটা থমথমে পরিবেশ। কিছুক্ষণ ছাদে পায়চারী করে নেমে আসে। বিছানায় শুয়েও ঘুম আসছে না। অনেকক্ষণ এপাশ ওপাশ করে ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম ভাঙে সকাল ৮টায়।


ঘুম থেকে উঠে একটা দৈনিক পত্রিকা পড়ছে অনিমেষ। ভেতরের পাতায় আবার সেই রহিম সেকের খবর। ডাক্তারদের এতোদিন মানুষ ভগবান রূপেই দেখেছেন, এবার তাদের নির্দয় রুপটাও দেখলেন। ভাবী ডাক্তারদের গণপিটুনিতে একটা সহায় সম্বলহীন মানুষের প্রান চলে গেল। এতোটা নিষ্ঠুর তো সাধারন মানুষও হতে পারে না!ভাবী ডাক্তারেরা কিভাবে করে? তাদের কি একবারও হাত কাঁপেনী । খবরটা পড়ে অনিমেষের মাথা গরম হয়ে গেল। মিডিয়া কতটা রং চড়াতে পারে, এই খবরটা পড়ে অনিমেষ বুঝতে পারে। গত ৬ মাসে দশটা দামী মোবাইল, দুটো ল্যাপটপ চুরি গেছে। মিডিয়া তার খবর রাখেনি। হয়তো চোরটা ধরে পুলিশে দিলেই হতো কিন্তু মানুষের ক্ষোভ সবসময় নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। সেটা ডাক্তারই হোক বা ঋষি মনিষি। অনেকদিন আগে একটা গল্প শুনেছিল অনিমেষ। মনে পড়ে গেল। অনেকদিন আগে এক রাজা হরিণ শিকারে বেড়িয়ে ছিল।রাজা এক হরিণকে দেখে বাণ ছোড়ে। কোন কারনে লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়। হরিণটা ঘন জঙ্গলে কোথায় যেন হারিয়ে যায়। রাজা হরিণ খুঁজতে খুঁজতে জঙ্গলের ভিতরে প্রবেশ করে। এক ঋষি সেখানে ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। রাজা তাকে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করেন হরিণটাকে দেখেছেন কিনা? সেই ঋষি মৌন ব্রত ছিলেন। তিনি কোন উত্তর দিলেন না। রাজা ক্রোধবশত একটা মরা সাপ ঋষির গলায় ঝুলিয়ে দেয়। এই খবর শুনে ঋষির ছেলে ভীষণ রেগে যায়। তিনি আবার খমতাশালী ঋষি। তিনি একবার অভিশাপ বা আশীর্বাদ দিলে সেটা কেউ খণ্ডণ করতে পারে না। তিনি বললেন, ‘সাত দিনের মধ্যে ঐ রাজা সাপের দংশনে মারা যাবে।রাজার কাছে এই খবর পৌঁছালে তিনি তৎক্ষণাৎ সেই ঋষির কাছে যায় এবং সেই দিনের ঘটনা বর্ণনা করেন। ঋষি বুঝতে পারেন তাঁর ছেলে ক্রোধের বশে লঘু পাপে গুরুদণ্ড দিয়েছে। তিনি ছেলেকে ভবিষ্যতে সংযত হওয়ার উপদেশ দেন। কিন্তু রাজাটি সত্যি মারা যায়। অনিমেষ মনে মনে ভাবে যতসব উটকো ঝামেলা। আজকে আবার ২৪ ঘণ্টা ডিউটি। দুপুর ২টো নাগাদ ইমার্জেন্সিতে একজন পেশেন্ট ভর্তি হয়। ঘরের পোষা কুকুরের সাথে বল নিয়ে খেলছিল। ছোট প্ল্যাস্টিকের বল। অন্যমনস্ক ভাবে কখন বলটাকে দুটি ঠোঁটের মাঝে রাখে। কুকুরটা ছেলেটার গায়ে ঝাপালে বলটা মুখে ঢুকে যায়। ছেলেটার বয়স ২০-২১ হবে। বাড়িতেও বলটা বার করার চেষ্টা করা হয়েছে। এর ফলে বলটা আরও বেশি করে গলার ভিতরে ঢুকে যায়। ফরসেপ দিয়ে বলটা বের করা গেল না। বলটা অনেকটা ভিতরে ঢুকে গেছে। ছেলেটাও আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে আসছে। গলা কেটে বল বার করতে হবে। ছেলেটার বাবার কাছ থেকে অনুমতি নিতে নিতেই ছেলেটা মারা যায়। ছেলেটার বাবা মৃত্যু সংবাদ শুনে একটা দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। চোখের পলক পড়ে না। প্রায় ঘণ্টা তিনেক এই ভাবেই ছিলেন। এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন। তাঁর চোখে একরাশ শুন্যতা। তাদের একমাত্র ছেলে, আদরের ‘পিন্টু’ আজ আর নেই। মৃত্যু এক অদ্ভুত নিষ্ঠুর বাস্তব।কখন কিভাবে আসবে, কেউ জানে না। মৃত্যুর পরে ঘণ্টা চারেক রাখা হয়েছিল। স্যারের লেখা ডেথ সার্টিফিকেটটা ছেলেটার মায়ের হাতে দিতে গিয়ে অনিমেষের চোখে জল এসে গেল। মনে হয় দূর থেকে অনিমেষের স্যার এটা লক্ষ্য করেছিলেন। অনিমেষকে পরে বলেছিলেন, ‘নিজের আবেগকে বাড়িতে রেখে এসে ডাক্তারি করতে আসবে’।

to be continued...


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama