Mithun Mondal

Drama Romance Tragedy

3  

Mithun Mondal

Drama Romance Tragedy

ঃ-সোহাগ-

ঃ-সোহাগ-

5 mins
286


ঃ-সোহাগ-

            মিঠুন মণ্ডল

Part-4

সপ্তাহ দুয়েক হয়ে গেছে, ফেসবুকে ঋদ্ধিমাকে খুঁজে না পেয়ে অনিমেষ প্রায় ভুলেই গেছিল ঋদ্ধিমাকে। আউট ডোরে লম্বা লাইন। বর্ষার সময় ঠাণ্ডা লাগা জ্বর, আমাশয় খুবই সাধারণ ব্যপার। মাথা ধরেছে বা জ্বর জ্বর ভাব বা কাল রাত থেকে এখনও পর্যন্ত ৮-৯ বার হয়ে গেছে শুনলেই, অনিমেষ মুখ না তুলেই ওষুধ লিখে দিচ্ছে। ওষুধ লেখা হয়ে গেলে একটা কথা সবাইকে বলছে, ‘৫ দিনের ওষুধ লিখে দিলাম, না কমলে রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। অনিমেষ একটা বাচ্চার বুকে স্টেথো লাগিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে বলছে, হাসপাতালের একজন ডি-গ্রুপের কর্মী এসে বলল, ডাক্তারবাবু আপনাকে ১২ নম্বর রুমে তনিমাদি ডাকছেন। অনিমেষ লোকটার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তুমি ঠিক শুনেছ? ১২ নম্বরের দায়িত্ব সৌমেনের আছে, তুমি আরও একবার জিজ্ঞেস করে এসো আমাকে ডাকছে না সৌমেনকে’? মিনিট পাঁচেক পরে তনিমা ঘোষ নিজেই চলে আসেন আউট ডোর রুমে। ‘অনিমেষবাবু একবার আসতে পারবেন’?তনিমা ঘোষের সাথে অনিমেষের খুব সখ্যতা। অন্য সময় তনিমা ঘোষ অনিমেষের নাম ধরেই ডাকে। ‘তনিমাদি ১২ নাম্বারের দায়িত্ব তো সৌমেনকে দিয়েছে’।অনিমেষ রুগী দেখতেই দেখতেই বলল।আমি আপনাকে পেশেন্ট দেখার জন্য ডাকছি না। একজন অপেক্ষা করছে আপনার জন্য। হঠাৎ করেই যেন অনিমেষের হার্ট বিট কয়েক সেকেন্ডের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। যাকে এতো খুঁজছিল সেই এসেছে না অন্য কেউ? কোন রকমে ওষুধটা লিখে দিয়ে লাইনে দাঁড়ানো পেশেন্টের উদ্দেশ্যে বলল, ‘আমি দশ মিনিটের মধ্যে আসছি যদি তাড়া থাকে পাশের ঘরে ডাঃ পাল আছেন, যেতে পারেন’। ঘরের বাইরে আসতেই তনিমা ঘোষ ফর্মালিটি ছেড়ে বলল, ‘সেই দিন এতো করে জিজ্ঞেস করছিলে ঋদ্ধিমার কথা, আমাদের রেস্ট রুমে বসিয়ে রেখেছি, যাও দেখা করে এসো। তবেই গিয়েই ফ্লার্ট করতে শুরু করো না’। তনিমা ঘোষ কোন কিছু বলতে না দিয়েই হাসতে হাসতে সামনের ১০ নাম্বার রুমে ঢুকে যায়। যাকে দেখা করার জন্য এতো উতলা হয়েছে, যার নাম জানার জন্য লোকের পায়ে ধরতেও রাজী ছিল, সেই মেয়ে যখন তার অপেক্ষাই বসে আছে শুনে নিজেরই অস্বস্তি লাগছে। অনিমেষ ঘরে ঢুকেই দেখে লাল-সাদা মেশানো একটা চুড়িদার পরে এসেছে ঋদ্ধিমা। মন দিয়ে ক্যান্ডিপ্লাস খেলছে। কয়েক মুহূর্ত ঋদ্ধিমার মুখের দিকে চেয়ে থাকল অনিমেষ। তারপর গলা ঝাঁকিয়ে অনিমেষ জিজ্ঞেস করল, ‘অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছ বুঝি’? ঋদ্ধিমা মোবাইলের স্কীন থেকে মুখ তুলে অনিমেষের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘না, এই ৫-১০ মিনিট হবে’। চলো ক্যান্টিনে যাওয়া যাক! ওখানে গিয়ে কথা হবে। অনিমেষ ক্যান্টিনে দুটো চা বলার সঙ্গে সঙ্গেই ঋদ্ধিমা বলে, ‘আমি চা খাই না’।অনিমেষ একটা প্রজাপতি বিস্কুট এগিয়ে দিয়ে বলে, ‘এবার বলো না যে তুমি বিস্কুট ও খাও না’।ঋদ্ধিমা বিস্কুট নিয়ে হাসতে থাকে। অনিমেষ চায়ে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করে তোমার পড়াশুনা কলকাতায় না নৈহাটিতেই? ঋদ্ধিমা ঠোঁটে লেগে থাকা বিস্কুটের গুঁড়ো রুমালে করে মুছে বলল, ‘আমি হাইয়ার সেকেন্ডারি পর্যন্ত নৈহাটিতে পড়েছি তারপর এখানে বি.এস.সি নার্সিং করছি। জয়েন্ট দিলে না কেন? ‘না বাবা! এতো মেরিট নেই’।‘বিনয় করছ’? ‘না, না একদম নয়।যেটা সত্যি সেটাই বললাম। ছোট বেলায় মাকে দেখতাম অফিসে যেতে, সেই থেকে মনে মনেই ভেবেছিলাম বড়ো হয়ে চাকরী করব, স্বাবলম্বী হবো, ব্যাস এই টুকুই। সাধারণ মানুষ, ছোট স্বপ্ন। কোন রকমে খেয়ে পরে বেঁচে থাকা।অনিমেষ একবার ঘড়ি দেখল। মিনিট ২০-২৫ মিনিট হয়ে গেছে, এবার যেতে হবে। একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে অনিমেষ বলল, ‘যদি কিছু মনে না করো, তোমার ফোন নাম্বারটা পাওয়া যেতে পারে।ঋদ্ধিমা একটু মুচকি হেসে বলল, ‘তোমার নাম্বারটা বলো, আমি মিসড কল দিচ্ছি’।  

VIII

হোস্টেলে পাটি চলছে। পর পর তিনটে বিয়ারের বোতল খেয়েও অনিমেষের নেশা হয় নি। ‘সঞ্জয়দা কার দোকান থেকে বিয়ার গুলো এনেছ? এতে অ্যালকোহল ছিল তো? নেশাই হয় না’। বুম্বা একটা চিপস মুখে পুরে বলে, ‘শালা তুই আবসলুট অ্যালকোহল খেয়ে নে, তাতে যদি তোর নেশা হয়! অনিমেষ দাঁত বার করে হেসে জামা খুলে একটা বেডে শুয়ে পরে। সঙ্গে সঙ্গেই বুম্বা চিৎকার করে ওঠে, ‘এই শালা আমার বেডে শুবি না, তুই তোর রুমে চলে যা, লাস্ট টাইম তুই আমার বেডে বমি করেছিলি মনে আছে’? অনিমেষের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। বুম্বা, অনিমেষের হাত ধরে তোলার চেষ্টা করল। তুই আমাকে তুলে দিচ্ছিস বুম্বা? তোর গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে আমি প্যাচ আপ করে দিয়েছিলাম, তোর মনে আছে? বুম্বা অনেক চেষ্টা করেও অনিমেষকে বেড থেকে নামাতে পারে না। শেষে হাল ছেড়ে দেয়। অনিমেষ চোখ বন্ধ করেই বলে, ‘এখানে ভালো কারা বল, বুম্বা’? বুম্বা কোন উত্তর দেয় না, সে বাকী ছেলেদের সাথে কথা বলতে থাকে। অনিমেষ চিৎকার করে বলে, ‘তুই আর আমি, বাকী সব হারামি’। অনিমেষের ঘুম আসে না। কিন্তু উঠে বসতেও পারে না। চোখ বন্ধ করেই স্মৃতি রোমন্থন করতে থাকে।প্রতিমুহূর্তে লড়াই করে এই জায়গায় আসতে হয়েছে। আজও তাকে প্রতিদিন প্রমান দিতে হয়, সে গ্রাম থেকে উঠে আসলেও কলকাতার কোন ছেলের থেকে কম নয়। তবে লড়াই করার জন্য অনিমেষের আক্ষেপ নেই।সে জানে নিম্ন মধ্যবৃত্ত পরিবার থেকে বড়ো কিছু করতে হলে লড়াই করতেই হয়। বাবারা চার ভাই। জ্যাঠা আগেই বেড়িয়ে এসেছে। অল্প কিছু জমি আর বাবার টিউশন। গ্রামের টিউশন মাস্টারের মাইনে কম, তাও কেউ কেউ দু-তিন মাস করে বাকী রাখে। সংসারে ভাত কাপড়ের অভাব নেই আবার সেই রকম সচ্ছলতাও নেই। জয়েন্টে কোচিং এর জন্য মায়ের জমানো টাকা ভাঙতে হয়। পাশের গ্রামেই মামার বাড়ি। মামার সাথে মাঝে মাঝে শালবনীর জঙ্গলে ঘুরতে যেত অনিমেষ। একবার একাই বেড়িয়ে পড়েছিল শালবনীর জঙ্গলে।হঠাৎ করেই একটা কুকুর তাড়া করে। খুব জোরে জোরে সাইকেল চালাতে থাকে, এই বুঝি কুকুরটা ধরে ফেলল।

পিছন থেকে গাড়ীর হর্ন বাজছে। সিগন্যাল খুলে গেছে। বাড়ি ঢুকেই ঋদ্ধিমার মুখঝামটা, এতক্ষণে আসার সময় হল? আমি প্রায় ৪০ মিনিট হয়ে গেল রেডি হয়ে বসে আছি।অন্য দিন হলে অনিমেষ হয়তো কোন কথা বলত না, আজ নানা কারনে মাথাটা গরম হয়ে উঠেছে। সে চিৎকার করে বলে উঠে, ‘আমার কি দুটো পাখা আছে, যে উড়ে আসব, রাস্তায় জ্যাম থাকলে আমি কি করব। ঋদ্ধিমাও ছাড়বার পাত্রী নয়। সে অনেক দিন ধরেই এই রকম হিটেড আর্গুমেন্টের জন্যই যেন অপেক্ষায় ছিল। সে বলে, ‘তোমার পাখা গজিয়েছে সেটা দেখতেই পাচ্ছি। বেহালা গেলেই তোমার দেরি হয়ে যায়।সুন্দরী রুগী দেখে, বউ এর কথা ভুলে যাও তো’। ‘প্লীজ, টিপিক্যাল বউদের মতো শুরু করো না’! এই কথা শুনে ঋদ্ধিমা আরও রেগে যায়।‘আচ্ছা! ডাক্তারের বউ হতে হলে ঠিক কি কি গুন থাকা দরকার? ৬ মাস হয়ে গেল, একটা রুগীর বাড়ি যাচ্ছ, সে ভালোই হয় না। ভাল কথা! ভালো হচ্ছে না তো অন্য ডাক্তার দেখাক! তোমাকেই বার বার ডাকে কেন? কলকাতা শহরে কি আর কোন বড়ো সাইকিয়াটিস্ট নেই’। ‘থাকবে না কেন?ও ধিরে ধিরে রিকভার করছে। এটা তো জ্বর, পেটখারাপ নয়! মনের অসুখ, ঠিক হতে সময় লাগে।

 to be continued...


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama