রিপোর্টের আড়ালে
রিপোর্টের আড়ালে


একটু আগেই ডাকে এল রিপোর্টগুলো। ডাক্তার পড়ছিলেন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। শিউলি উদ্ভ্রান্তের মত এসে ঢুকল, “দিদি, শিগগির লেবার রুমে আসুন।”
নমিতা সরকার শান্তচোখে তাকালেন, “আমি আসছি। তুমি একটু সামলে নাও।”
শিউলি দৌড়তে দৌড়তে বেরিয়ে গেল। ডাক্তারের আসতে আরও মিনিট পাঁচেক দেরি হল। শিউলি আপনমনে একবার ঠোঁট বাঁকাল। চোখদুটো ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না ডাক্তারের। যেন ডেলিভারি নয়, উনি করোনা পেশেন্ট দেখতে এসেছেন। তাও যদি না গ্রামীণ হাসপাতাল হত! সবেতেই বাড়াবাড়ি!
পরিত্রাহি চিৎকার করছে বৌটি। গর্ভের আঁধার ঠেলে বেরিয়ে আসছে নবজীবন। ডাক্তার খুব সাবধানে পৃথিবীর আলোতে বের করে আনলেন নবজাতককে। ওঁয়া ওঁয়া শব্দে তখন তারস্বরে প্রতিবাদ জানাচ্ছে সদ্যোজাত।
শিউলি সযতনে ধরল বাচ্চাটিকে। ডাক্তার সেলাই দিচ্ছেন বৌটিকে। কে জানে কেন, সে চুপচাপ সব সহ্য করে নিল। তারপরেই প্রশ্ন, “দিদি, ছেলে না মেয়ে?”
“মেয়ে। তোমার আমার মতন।”
“আমার মতো না। আপনার মতো যেন হয়!"
কাপড়চোপড়ের আড়ালে ডাক্তারের মুখের ভাব বোঝা দায়, “ডাক্তার হওয়ার কিন্তু ঝুঁকিও আছে।”
“তা হোক।”
“আশীর্বাদ রইলো। মেয়েকে ভালো করে পড়িও।"
ডাক্তার মুখ ফেরালেন, “শিউলি, আমি চললাম। ডক্টর বড়ুয়াকে বলে দিচ্ছি। এখুনি এসে পড়বেন। আমি ফোনে খোঁজ নেবো।”
গমনপথের দিকে তাকিয়ে ফের ঠোঁট বাঁকায় শিউলি। উনি চললেন বিশ্রাম নিতে!
কিছুক্ষণ পরে, ডাক্তারের টেবিলের রিপোর্টগুলো গোছাতে গিয়ে একদম ওপরের রিপোর্টে চোখ গেল শিউলির। লেখাগুলো জ্বলজ্বল করছে - নমিতা সরকার, কোভিড-১৯ পজিটিভ।