Suchismita Chakraborty

Romance Tragedy

3  

Suchismita Chakraborty

Romance Tragedy

রাখী

রাখী

2 mins
64



---"সাহিদা,তাড়াতাড়ি কর বিটিয়া,,,কি সেই সকাল থেকে কাগজ মুখে নিয়ে পাথরের মত বসে আছিস বল তো?

ভাইজান এল বলে...

এতদিন পর সাহিদ আসছে,,,,,এবারের ঈদেও তো আসতে পারেনি।

মাসে তো একবার ফোন করে,তাও মিনিট দশেক।শুধু ছুটি নেই আর ছুটি নেই, বলি বর্ডারে কি আর সেনা নেই!!

...আরে,এই বিটিয়া, শুনতে পাচ্ছিস্ কি বলছি তখন থেকে... বিরিয়ানীটা দম থেকে নামা,এবার তো পুড়ে ছাই হয়ে যাবে...আমার হাত জোড়া।"


--"ভাইজান আর আসবেনা ,আম্মী..."


" কি,আসবেনা?তোকে ফোন করেছিল বুঝি?

কেন আসবেনা শুনি! নিশ্চই বলবে ছুটি নামঞ্জুর হয়ে গেছে... আমি এই আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি,আমি তার আর কোনো বাহানা শুনব না...এবার না এলে আমি আর তার মুখও দেখবোনা..."


--"পুড়ে গেছে..."


ফিরনীর পোড়া গন্ধটা নাকে যেতেই, হায় হায় করে উঠল রেবেকা।

"যাঃ,ছেলেটা আমার খেতে ভালোবাসে বলে সেই কখন থেকে নাড়ছি,আর শেষে কিনা লেগে গেল ; পোড়া গন্ধে যে সে এক্কেবারে খেতে পারে না।"


--"পরশু বর্ডারে গুলি আর বোমাবাজিতে অনেক গুলো সেনা ছাউনি পুড়ে গেছে আম্মী,অনেক জওয়ান জখম হয়েছে।

বিশজন মারা গেছে...

তাদের মধ্যে 'সাহিদ আনসারী' একজন।


কাল রাতে আমিনাদের টি.ভি.তে দেখেছিলাম বর্ডারের গন্ডগোলটা,বুঝতে পারিনি,আমল দিইনি।

আজ সকালে পেপারে শহীদদের নাম দিয়েছে আম্মী...

ভাইজান হয়ত আজ-কালের মধ্যেই আসবে আম্মী, তিরঙ্গা মুড়ে..."


ফিরনীর রেকাবীটা পুরো পুড়ে কালো হয়ে ধোঁয়া উঠতে শুরু করেছে।আর একটু পরে বিরিয়ানীটাও

পুড়তে শুরু করবে...

চুলার ওধারে রেবেকার মুখটা টকটকে লাল,,,,কপাল, মুখ,চোখ দিয়ে গনগনে লাভা গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে...


--"সাহিদা দিদি, সাহিদা দিদি ,এই দেখো,আমি কি সুন্দর রাখী পরেছি। দিদি আমায় পরিয়ে দিয়েছে, তুমি পরাবেনা??

    জানো তো সাহিদা দিদি,পাড়ার মোড়ে মোড়ে সবাই সবাইকে রাখী পরাচ্ছে,টি.ভি.তে কত প্রোগ্রাম হচ্ছে।

আমার মা' না আজকে আমার আর দিদিয়ার জন্য পায়েস বানিয়েছে।আমি না চুপি চুপি আমার বাটি থেকে খানিকটা লুকিয়ে তোমার জন্য রেখে দিয়েছি।

তাইতো তোমায় ডাকতে এলাম।তুমি না চুপি চুপি আমাদের বাড়ির পিছন দিকটাতে আসবে,আমি তোমায় দেব...ঠিক আছে, এখন আমি যাই।

দেরী হলে মা আবার বকবে।

...ও সাহিদা দিদি, তোমার কি হয়েছে বলবে তো,কোনো কথা বলছ না কেন??

আর তোমাদের ওটা কি রান্না হচ্ছে? সব তো পুড়ে গেল..."


--"তুই এখন যা শরৎ,আমি বিকেলে গিয়ে তোকে রাখী পরিয়ে আসব।"


--"ঠিক আছে,আসবে কিন্তু পিছন দিকটায়,আমি কিন্তু পায়েস রেখে দিয়েছি।"


বিকেলে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি এল।

আর এল তিরঙ্গা জড়ানো,কফিনবন্দী সাহিদের মৃতদেহ।

বেজাত বলে দূরে ঠেলে রাখা পাড়ার লোক, আত্মীয়, মিডিয়া ভিড় করে এল সাহিদাদের ছোট্ট

বাড়িটায়।কেঁদে কেঁদে সাক্ষাৎকার দিচ্ছে চেনা,অচেনা অনেকেই।


সাহিদার মা' রেবেকা এখনও সেই চুলার সামনেটায় স্থির বসে,,,,,,তার চোখে একফোঁটা পানি নেই...


চুলাটা শরতের মা মঞ্জরী এসে নিভিয়ে দিয়েছে।


মঞ্জরী সাহিদাকে একপাশে ডেকে বলে,

--"এই নে রাখী,তোর ছোট্ট ভাইটার হাতে বেঁধে দে,অনেকক্ষন অপেক্ষা করছে,,,,,আর একটা সাহিদের হাতে..."

সাহিদার মনে হল ঐ মহিলাটির গলাটাও একটু যেন কেঁপে গেল।


--"ভাইটা নিজের থেকে বাঁচিয়ে তোর জন্য আধবাটি পায়েসও এনেছে...খেয়ে নিস।

রাখীটা তাড়াতাড়ি বাঁধ মা,ভালো সময়টা পেরিয়ে যাচ্ছে,ওকে যে অনেক বড় হতে হবে,বীর হতে হবে..."


স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে সাহিদা; জাত,ধর্ম, কুসংস্কার সব গুলিয়ে যাচ্ছে, এক মৃত্যু সব একাকার করে দিয়েছে...

সে তার সামনে আরেক পরম মমতাময়ী 'মা'কে দেখতে পাচ্ছে।


সাহিদা ধীরে ধীরে কফিনবন্দী তার ভাইজানের মৃতদেহের উপর একটা রাখী রেখে দ্বিতীয় রাখীটা শরতের হাতে পরিয়ে দিল।


                     


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance