আইডেন্টিটি
আইডেন্টিটি


জোরে শাওয়ার চালিয়ে ঠাণ্ডা জলের নীচে শরীরটা ছেড়ে দিল শ্রেয়া। দিনের পর দিন ঘেন্না ধরে গেছে শরীরটার ওপর।ঠাণ্ডা জলের তোড়ে চোখের জল কিছুটা ধুয়ে গেলেও অপমান কি এভাবে ধুয়ে ফেলা যায়!
প্রতি রাতে শরীরী খেলার চরম মূহুর্তে রাতুল যখন এক একবার এক এক নাম নিয়ে শিৎকার করে ওঠে, শ্রেয়ার মনে হয় নিজের বিবাহিত স্বামীর কাছেই সে ধর্ষিতা হচ্ছে প্রতিবার।ঠিক ধর্ষিতাও নয়;এ যেন বলে বোঝানোর নয়!
শরীর তার, মন তার, ঘর তার, বর তার শুধু নাম অন্য কারোর।
রাতুল আশ্লেষে বলে ওঠে "ওহ!রিয়া....ইউ আর ডার্লিং.."
" হোয়াট হ্যাপেনড্ রাতুল?আয়্যাম শ্রেয়া ড্যাম ইট;নট রিয়া.."
" হোয়াটএভার ,ইউ আর!হোয়াট ডাজ ইট ম্যাটার ইফ ইউ রিয়া,প্রিয়া,জিয়া,সোনালী অর সুনন্দা ,আই ওনলি নিড মাই প্লেজার! গট ইট?"
"তা বলে রাতুল তুমি আমার সাথে ,আমার বেডরুমে আমায় নিয়ে খেলবে আর নাম করবে অন্যের ?আমি তোমার বিয়ে করা বউ রাতুল!আই হ্যাভ অ্যান আইডেন্টিটি অ্যাট লিস্ট।এইভাবে তুমি আমায় অপমান করতে পার না..."
"অপমান ,আইডেন্টিটি,মাই ফুট!আমি এমনিই থাকব।বিছানায় আমার মনে থাকেনা আমি কার সঙ্গে রয়েছি।সব মেয়েই আমার কাছে একটা শরীর বই তো নয়।এবার তোমার আমার বউ হয়ে থাকতে চাইলে থাক ,আমি রাতে বাড়ি ফিরব নয়ত আরও অনেক রাস্তা আছে আমার!
এমনিতেই তো মা তোমার ওই লক্ষ্মী ঠাকুরের মত মুখটি দেখেই আমার সাথে বিয়ে দিয়েছে।ভেবেছে বিয়ে দিলেই আমি শুধরে যাব।ফুঃ।আমি তো মায়ের বিয়ে বিয়ে প্যানপ্যানানি বন্ধ করতেই তোমাকে বিয়ে করেছি।প্রেম করেছি বলেই কি বিয়ে করতে হবে না কি?
আদারওয়াইস্ তুমি ঠিক আমার টাইপেরই নও।তোমায় দেখলে শরীরই জাগে না শালা!তার উপর আবার নাম নিলে তো মনে হবে ফোটোর দেবীর সামনে ধূপ-ধুনো দিচ্ছি" বলেই বিশ্রী খ্যাঁক খ্যাঁক শব্দে হাসতে থাকে রাতুল।
বরাবর কম কথা বলা শ্রেয়ার মুখে আর কথা জোগায় না এর পর।অপমানে শুধু থরথর করে কাঁপতে থাকে।
অসুস্থ রিটায়ার্ড বাবা আর মায়ের কথা ভেবে, মা এর থেকেও বেশি স্নেহ করা শাশুড়ির নিষ্পাপ মুখটার কথা ভেবে দিনের পর দিন দাঁতে দাঁত চেপে এক অপমান সহ্য করে চলে শ্রেয়া।
প্রথম দিনের কথা মনে পড়ে শ্রেয়ার।ছলছল চোখে শাশুড়ি বলেছিলেন "আমার ছেলেটা বড্ড পর হয়ে গেছে রে মা;আমি বেঁধে রাখতে পারিনি।বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে একদম লাগামছাড়া। তুই ভালোবাসায় যখন বেঁধেছিস,একটু সংসারেও বাঁধিস মা!"
কলেজ থেকেই ওদের প্রেম।অবশ্য রাতুলের তরফ থেকে কোনদিন ছিল কি না এখন ভাবলেই অবাক লাগছে শ্রেয়ার।রাতুলের এই মেয়েদের শরীর নিয়ে খেলা শ্রেয়ার যে অজানা তা নয়,তবুও সে ভেবেছিল বিয়ের পরে বোধ হয় রাতুল আর এসবে থাকবে না।ঠিক নিজের করে রাখবে সে রাতুলকে।কিন্তু আর নিতে পারছে না সে।
চোখের নীচে কালি পড়ছে দিন দিন, খাওয়া দাওয়ায় অনীহা।রাতুল দেখেও দেখেনা,শাশুড়ি বুঝেও বোঝেনা।সন্ধ্যে হলেই শাশুড়ি জিজ্ঞেস করে "রাতুল বাড়ি ফিরবে তো রে মা?"
রাতুলকে ঘরে ফেরাতে,বৃদ্ধাকে একটু চিন্তামুক্ত করতে প্রতি রাতে নিয়ম করে নিজের বিছানায় অন্যের নামে শরীর দেয় শ্রেয়া।
*****************
ডিম লাইটের আলো-আঁধারিতে মনের সমস্ত চড়াই-উৎরাই উপেক্ষা করে শরীরের চড়াই-উৎরাই এর খেলা চলতে থাকে।রাতুলের পেশীবহুল উন্মুক্ত পিঠ খামচে ধরে শ্রেয়ার গলা দিয়ে বেরিয়ে আসে আদুরে আহ্বান "ওহ!রাজ...লাভ মি হার্ড"
মূহুর্তে ছিটকে সরিয়ে দেয় রাতুল শ্রেয়াকে।
" কি বললে?রাজ?হু ইজ্ রাজ!"
" রাজ!ওহ ,রাতুল,নামে কি এসে যায় বলতো?অল অ্যাবাউট দুটো শরীর ড্যাম ইট! শুধু আনন্দ পেলেই হল।
সে রাজ হোক,রোশন হোক বা রাতুল রয়!তাই না?"
"তুমি কি রিভেঞ্জ নিচ্ছ আমার সাথে?আমি আর তুমি এক হলাম?তুমি আমার বিয়ে করা বউ!শুধু আমার।আর তুমি আমার কাছে অন্য পুরুষের নাম নিচ্ছ?লজ্জা করে না তোমার?ছিঃ ,সব মেয়েরাই নাথিং বাট আ ব্লাডি স্লাট!"
" তোমার করেছিল রাতুল রয়?না তুমি পুরুষ বলে লজ্জা, ঘৃনা ,ভয় থাকতে নেই।ধোয়া তুলসী পাতা তাই না?"
"শাট আপ।ছেলেরা হল সোনার আংটি বুঝলে ।ট্যাঁরা বা বাঁকা তাতে কিছু এসে যায় না।শোনোনি কোনও দিন?
আই কান্ট টলারেট দিস এনি মোর।আই নিড ডিভোর্স রাইট নাও।"
" মি টু ডিয়ার; তাহলে আর দেরী কেন?এই নাও কাগজপত্র সব রেডি।প্লিজ সাইন।"
"ও,সব গোছগাছ করেই রেখেছ দেখছি।আমি কিন্তু তোমায় এক কানাকড়িও দেব না।"
"আমার কিচ্ছু চাই না।শুধু আমার পেটে যে বড় হচ্ছে ,দয়া করে তার পিতৃত্ব তুমি কোনোদিন দাবী করতে আসবে না এই অঙ্গীকারটুকু চাই।"
"কি?তুমি প্রেগন্যান্ট?ছিঃ,দুশ্চরিত্রা কোথাকার!কার পাপ ওটা?তা কে সেই মহাপুরুষ এখন যার সাথে রাসলীলা করতে যাচ্ছ?সেই কি ওর বাবা?না অন্য কেউ?"
" ক্রমশ প্রকাশ্য..." মুচকি হেসে ঘর ত্যাগ করে শ্রেয়া।
মোটামুটি মিউচুয়াল ডিভোর্সই হয়ে যায় শ্রেয়া আর রাতুলের।শ্রেয়া কোন খোরপোষ দাবি করেনি।শুধু নিজের বাবা-মায়ের সাথে সাথে রাতুলের মায়ের দায়িত্বও নিজের কাঁধে তুলে নেয়।বুড়ো বয়সে সকলে একসাথে নাতি বা নাতনির সাথে খুনসুটি করে বাকি দিনগুলো কাটিয়ে দেবে।এই সুখ থেকে শাশুড়িকে বঞ্চিত করতে চায়নি শ্রেয়া।তাই এই ব্যাবস্থা।
ফাইনাল ডিভোর্সের দিন কোর্টের বাইরে রাতুলের মুখোমুখি হয়ে শ্রেয়া জানায়...."আমি শ্রেয়া রাতুল,শ্রেয়া সরকার।আমার আইডেন্টিটির জন্য কোন পুরুষের বা তার সারনেমের প্রয়োজন নেই।আমার সন্তানকেও আমি শুধুমাত্র মায়ের পরিচয়েই বড় করব।ওটাই ওর জন্য গৌরবের হবে।
আর একটা কথা, রাজ বা রোশন কোনও নামেই কেউ কোনোকালে ছিল না আমার জীবনে রাতুল,শুধু তুমি ছিলে।
এ সন্তান তোমারই।বিশ্বাস না হলে ডি.এন.এ টেস্ট করিয়ে স্যাঙ্গুইন হতে পার কিন্তু আমার সেই অপমানটা আমি আর হতে দেব না।
দয়া করে কোনোদিন ওর সামনে অধিকার ফলাতে এস না।
ভালো থেকো।"
গটগট করে আত্মবিশ্বাসী পায়ে এগিয়ে যায় শ্রেয়া।
রাতুলের গালদুটো যেন জ্বালা করে ওঠে।।