AYAN DEY

Romance Others

3  

AYAN DEY

Romance Others

রাগে অনুরাগে

রাগে অনুরাগে

3 mins
111


নদীর এপার ওপার দিন রাতের ফারাকে দুই শহর - আলাপ ও তারানা । দুই শহরেই একজন করে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত গায়ক বাস করে । আলাপ শহরে বাস করে ভৈরব । তারানা শহরে বাস করে নীলাম্বরী ।

ভৈরবের ঠাকুরদা ভৈরব ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর গলার স্বর শুনে ঠাকুরদা বললেন , " আরে এ যে রাগ ভৈরব । কী আশ্চর্য ! "

প্রথম ঊষার আলোয় দীপ্ত শিশুর মুখ দেখে ঠাকুরদা বললেন , " ভৈরব আমার বিখ্যাত গায়ক হবে । "

ওদিকে ঠিক একই লগ্নে তারানা শহরে গভীর রাত্রি । তার কান্নার স্বরে তার জেঠু অবাক হয়ে গেলো । তিনিও রাগপ্রধান গানের ভক্ত । তাই রাগটি বুঝতে বিলম্ব হলো না । " আমার নীলাম্বরী মা , কন্ঠে মা সরস্বতী বিরাজ করছেন যেন ! "

ছন্দা নদীর এপার ওপার , দুই পারের লোকই সঙ্গীতপ্রিয় । তবে এদ্দিন বিখ্যাত গায়ক বা গায়িকা ছিলেন না । ছোটোবেলা থেকেই কেবল শুনে শুনে এমন দক্ষ হলো ভৈরব আর নীলাম্বরী যে বলার নয় ।


ছন্দা নদী দুই শহরের মধ্য দিয়ে বইলেও তার উপরের আকাশে দিন রাত্রির বন্টন বড়োই অসমান । লহমায় মাঝিরা আলো থেকে আঁধারের অংশে নাও নিয়ে বিভ্রান্ত হয় । নদীর উপরের আকাশ কে যেন দাগ দিয়ে সমান দুই অর্ধেক করে রেখেছে । এক অর্ধেক দিনের আলো মুখর আরেক অর্ধেক রাতের আঁধারে ঘন ।

ভৈরব একটু বড়ো হতেই প্রতি প্রত্যুষে ছন্দা নদীর তীরে বসে গাইতে থাকে । তার সঙ্গীতে শহরের ঘুম ভাঙ্গে । প্রায় ২ ঘন্টার মতো সে ভরাট করে রাখে শহরকে ।

এদিকে ঠিক একই সময়ে রাত্রিবিলাসে নীলাম্বরী নিজের রাগে নিজের শহরকে নিদ্রামগন করে রাখে । সেও প্রায় সমান সমান সময়েই গাওয়া শেষ করে ।

এই দুজনই ওপারের শব্দ কানে এলেও থামেনি কোনোদিন । নিজেরা নিজ নিজ জগতে বিভোর হয়ে থাকে । অন্য কিছুর প্রতি হুঁশ নেই ।

আজ ভৈরব ও নীলাম্বরী দুজনেরই বয়ঃপ্রাপ্তির দিন । আজই দুজনের ছন্দে ঘটলো ব্যাঘাত । দুই শহরের আকাশেই আজ মেঘ করে এলো । আলাপ শহরের ভোরের আলো কাজল মেঘে গেলো ঢেকে । তারানা শহরের রাত্রির অন্ধকার লাজে রাঙা বধূর টকটকে লাল রঙে ভরে গেলো ।

একে অপরের গানে আজ ঘটতে লাগলো ব্যাঘাত । যেই কেউ গাইতে শুরু করে অন্যজন শুরু করতেই যায় থেমে । এরকম অসম ছন্দে বার তিনেক প্রচেষ্টার পর তারানা শহর থেকে কোনো একজনকে আলাপ শহরের দিকে আসতে দেখা গেলো । উনি নিজের ছোটো ভেলায় বসে রাগাশ্র​য়ী কি একটা গান ধরেছেন ! ভৈরবের এটা শোনা লাগলেও স্পষ্ট বুঝলো না ।


আলাপ শহরে ছন্দার তীরে আসতেই ভৈরব কাছে গিয়ে দেখলো ওই ব্যক্তিটিকে । " তুমি কে গো বাবা ? আগে তো নাও বাইতে দেখিনি এই ছন্দা নদীতে ! "

উনি বললেন , " দেখবে কেমনে আজই তো তোমার ও নীলাম্বরীর বয়ঃপ্রাপ্তির দিন । শুধু দুটি শূন্য মন্দিরে প্রেমদেবতার অভ্যুত্থান করতে আমার আবির্ভাব । আমি মালকোষ গো ... মালকোষ । একবার আকাশটা তাকিয়ে দেখো , মেঘ কেটে গেছে ... দেখো চেয়ে । "

সত্যই তো , অবাক বিস্ময়ে ভৈরব দেখলো আকাশপানে । নদীর উপরের আকাশে এবার দিনরাত্রির অসমবন্টন সরে একটা অতি দৃষ্টিনন্দন সুষম বন্টন হয়েছে । এই যেমন এখন তারানার প্রান্তে রাত । তো গভীর রাত থেকে কীভাবে ক্রমে ক্রমে অন্ধকার কেটে আলাপে এসে তা ভোরে রূপান্তরিত হয়েছে ... আহা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় আকাশের রূপ দেখে ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance