Meheli Ghosh

Tragedy

1  

Meheli Ghosh

Tragedy

পর

পর

3 mins
422



নাম : অণিমা ধর , 

বয়েস : চৌত্রিশ বছর , 

স্টাটাস : বিবাহিত 

সন্তান : একটি 

পেশা : বর্তমানে হাউস ওয়াইফ 


হ্যাঁ বর্তমানে সে হাউস ওয়াইফ । আসলে সে কোনোদিনই চায়নি হাউস ওয়াইফ হতে । নিজের যোগ্যতায় একটি নামী মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরিও জুটিয়েছিলো সে । বছরও ঘুরতে পারেনি ভালো কাজের জন্য পদোন্নতিও হয়েছিলো তার । কিন্তু সব ভালো যে সকলের জন্য নয়,তাই এই ভালোটা বেশীদিন সইলো না অণিমার কপালে । হ্যাঁ আমি এখানে কপালের কথাই বলবো । কপালে না থাকলে সব স্বপ্নই স্বপ্ন থেকে যায় , বাস্তব আর হয়না ।অণিমারও স্বপ্ন ছিলো কারুর মুখাপেক্ষী হয়ে না থাকা । নিজে রোজকার করে, অমুকের বউ, তমুকের মেয়ে হয়ে জীবন না কাটিয়ে, নিজের পরিচয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচা । কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে সে স্বপ্ন আর পূরণ হোলো না । অণিমার স্বামী কোনোদিনই চায়নি তার স্ত্রী চাকরী করুক তাই বিভিন্ন ভাবে তার উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করে গেছে ক্রমাগত । আর সেইদিন সার্বিকভাবে সফলও হোলো যেদিন তাদের সন্তানের মাথা ফাটল খেলতে গিয়ে । অণিমা তখন অফিসে তাই এর দায় তার কাজের উপরই এসে পরলো । তার স্বামীর বক্তব্য আজ যদি সে চাকরী না করে বাড়িতে থাকতো তাহলে তার সন্তানের মাথা ফাটত না ।""পরের হাতে সন্তান মানুষ হয়না"" এটা ছিলো তার স্বামীর বক্তব্য । যদিও বা তাদের সন্তান পরের হাতে নয় নিজের মায়ের কাছে রেখেই অণিমা যেতো কাজে । চারিদিকের পরিস্থিতির কথা ভেবে সে আয়ার ভরসায় সন্তান ছাড়েনি কোনোদিন । আমি অণিমার সন্তানকে সন্তানই বলছি মেয়ে কি ছেলে বলছিনা। কারণ আমি মনে করি আমাদের মানব জাতির সৃষ্টি করা সমাজে দুটি প্রজাতির প্রাণী আছে -- (১)মেরুদণ্ড যুক্ত এবং (২) মেরুদণ্ডহীন । হ্যাঁ আমি এখানে নারী পুরুষের ভেদাভেদ করছিনা । যদিও বা আমি ভেদাভেদ না করলে কী হবে , নারী পুরুষের ভেদাভেদ তো চরম সত্য যা প্রাচীনযুগ থেকেই চলে আসছে । একটি নারীর জীবন তার পারিপার্শিক পুরুষ দ্বারাই শাসিত । আবার নিজস্ব ভীতি থেকেই হোক বা অন্যকিছু থেকেই হোক কিছু মেরুদণ্ডহীন নারীও যুক্ত হয় এই শাসক দলের সাথে । আমাদের মধ্যবিত্ত মায়েরা তার মেয়ের সুখ খোঁজে স্বামীর ঘরে । তাদের ধারণা মেয়েদের আসল সুখ স্বামীর সংসারেই , তা সে স্বামী যতই অত্যাচারী হোকনা কেন । অত্যাচারের দুটি ভাগ হয় --মানসিক ও শারীরিক । আমি এক্ষেত্রে বলবো শারীরিক অত্যাচার অনেক ভালো ---কেন জানেন ..? শারীরিক অত্যাচারের প্রমাণ থাকে , অন্ততঃ পক্ষে চোটের দাগ দেখলে কিছু মানুষের সহানুভূতি জাগে। কিন্তু মানসিক অত্যাচারের তো আর কোনো প্রমাণ দেওয়া যায়না তাই সহানুভূতিও পাওয়া যায়না , বরং অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় তার উল্টোটাই হয় ।যা কিছু প্রমাণ সাপেক্ষ তা প্রতিবাদ যোগ্য কিন্তু বাকী .....? ? যাই হোক , অণিমাকে চাকরী ছাড়তে হোলো নিজের সন্তানের জন্য । সে অনেক চেষ্টা করেও কাউকে বুঝিয়ে উঠতে পারলো না এই দুর্ঘটনা সে বাড়িতে থাকলেও ঘটতে পারতো । তার মাও আর ভয়ে পরের বাচ্চার দায়িত্ব নিতে চাইলো না । ""হ্যাঁ পরের বাচ্চা"" ---কথাটা খুব কানে বাজলেও এটাই সত্যি। "পরের বাচ্চা "কেন জানেন ? মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেলে তারা পর হয়ে যায় । মেয়ের ঘরের সন্তানকে আদর করা যায় , তারা ক্ষণিকের আদরে আবদারে নাতি নাতনি কিন্তু দায়িত্ব নিয়ে রাখা খুব ভয়ের ! পাছে কিছু হয়ে গেলে পরের ছেলের মুখ শুনতে হবে । ভালো হলে কেউ নাম নেয়না কিন্তু খারাপ হলে কেউ কথা শোনাতে ছাড়েনা । অণিমার মা বাবাও তাই আর কারুর কথার তলায় থাকতে চায়না । আর থাকবেই বা কেন , তাদের মেয়ের টাকায় তো আর সংসার চলেনা ! মেয়েকে বেশী সাপোর্ট করলে লোকে বলবে নিশ্চই মেয়ের থেকে টাকা নেয় তাই চাকরী করার জন্য উষ্কানি দিচ্ছে । কেন অযথা বদনামের ভাগী হতে যাবেন তারা ...? তারা কোনো অবস্থাতেই মেয়ের ঘরের অশান্তির কারণ হতে চায়না তাই মেয়েকেই বোঝায় তার স্বামী যখন চায়না তালে চাকরী না করাই ভালো । ""মেয়ের ঘর "" --হ্যাঁ তাদের কাছে সেটা মেয়ের ঘর কিন্তু বাস্তবে সেই ঘরে সে পরের মেয়ে । যাই হোক তাদের সন্তানকে শিখণ্ডী করে তার স্বামী দুই পরিবারের সকলকেই নিজের তরফে করে নেয় আর অগত্যা উপায়হীন হয়ে অণিমা সবটাই মেনে নেয় । আর ভাবে তার আদৌ আপন কে আর কে পর ....? সে আদৌ আপন কার আর কার সে পর ....? আজও অণিমারা আপন পরের সাংবিধানে খুঁজে চলেছে নিজের ঘর । 


Rate this content
Log in

More bengali story from Meheli Ghosh

Similar bengali story from Tragedy