Banabithi Patra

Drama

2  

Banabithi Patra

Drama

ফ্ল্যাশ ব্যাক

ফ্ল্যাশ ব্যাক

2 mins
1.2K


বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত নিম্নচাপের জেরে টানা তিনদিন ধরে সমানে বৃষ্টি চলছে। কে বলবে মার্চের শেষ! মনে হচ্ছে ঘোর বর্ষা। অন্যদিন রাত দশটা অবধি চেম্বারে থাকলেও, আজ আটটা বাজতে না বাজতে আর চেম্বারে থাকতে মন বসছে না দীপ্তেশের। কতক্ষণ এইভাবে একা একা বসে থাকা যায়। তারমধ্যে লোডশেডিং। জয়ন্ত এসে একটু আগেই বলে গেছে, আজ সাড়ে আটটায় জেনারেটার বন্ধ করে দেবে। সারাদিন একটানা চলে তার যন্ত্র নাকি ক্লান্ত। নতুন চেম্বার, এমনিতেই পেশেন্ট খুব একটা হয়না। আজ তো একটা পেশেন্টেরও দেখা নেই। গ্রামের মানুষ এমনিতেই নিজেদের স্বাস্থ্য সম্বন্ধে সচেতন নয়। একেবারে অপারগ না হলে ডাক্তারের কাছে আসা তাদের ধাতে নেই। বন্ধুরা যখন সরকারি চাকরি ছেড়ে শহরে ঝাঁচকচকে চেম্বার করছে, বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে মোটা টাকা কামাচ্ছে; দীপ্তেশকে তখন এই ধ্যাড়ধ্যাড়ে গ্রামে পোস্টিং নিয়ে এসে এখানেই চেম্বার করতে হয়েছে। দাদুর ওপর রাগ হলেও, দাদুর সিদ্ধান্তকে অবহেলা করতে পারেনি দীপ্তেশ। গ্রামের মানুষের চিকিৎসা ব্যবস্থার সত্যিই তেমন সুযোগ নেই। যদি থাকত.... চেম্বার বন্ধ করে বেরিয়ে পড়ে দীপ্তেশ। গ্রামের বাসস্ট্যাণ্ডের চেম্বার থেকে বাড়ি তো অনেকটা, ফিরবে কি করে! একটা ভ্যান-টোটো কিছুই তো নেই রাস্তায়। আনমনে ছাতা মাথায় হাঁটতে থাকে দীপ্তেশ। দীপ্তেশের গ্রামের স্কুলে তখনও উচ্চমাধ্যমিক চালু হয়নি। মাধ্যমিকের পর পাশের গ্রামে স্কুলে অথবা সদরের স্কুলে হতে হত। সদরের স্কুলে উচ্চমাধ্যমিকের সেরা ছাত্রের পরবর্তী উচ্চতর পড়াশুনোর জন্য একটা স্কলারশিপ ছিল ঐ স্কুলে। যাতায়াতের অসুবিধা হলেও স্কলারশিপটা পাওয়ার আশাতেই সদরের স্কুলেই ভর্তি হয়েছিল দীপ্তেশ। বাবা মারা যাওয়ার পর বেশ কষ্ট করেই দাদু মানুষ করেছে ওকে।


ও ভালো করেই জানত, ইচ্ছা থাকলেও ডাক্তারি পড়ানোর সামর্থ দাদুর নেই। তাই ডাক্তারি পড়তে গেলে ঐ স্কলারশিপটাই ভরসা। মন দিয়ে পড়াশুনো করলেও সৌমেনকে নিয়েই ভয় ছিল দীপ্তেশের। রসায়নে সৌমেনের দখল অনেক বেশি। -ডাক্তারবাবু, আসুন আমি পৌঁছে দিচ্ছি আপনাকে। একটা মোটর সাইকেল পাশে এসে থামে দীপ্তেশের। হেলমেট মাথায়, তার ওপর অন্ধকার, মানুষটাকে চিনতে পারেনা দীপ্তেশ। তবে গলাটা চেনা চেনা লাগে। ছোট থেকে গ্রামেই মানুষ, চেনা কেউই হবে। দ্বিমত না করে মোটর সাইকেলে উঠে বসে দীপ্তেশ। গ্রামের রাস্তা এই জলকাদায় যা হয়! পাকারাস্তা থেকে গ্রামে ঢোকার মুখেই চাকাটা আটকে গেল কাদায়। নামতে হলো দীপ্তেশকে। -ডাক্তারবাবু একটু হাত লাগাবেন! আমি গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে আছে, চাকাটা একটু তুলে দিন প্লিজ। বাধ্য হয়ে হাত লাগাতেই হলো দীপ্তেশকে। চাকাটা তুলতে অবশ্য বেশি কষ্ট হলো না। তবে দুহাতে কাদা লেগে গেছে। কি সে মুছবে এখন! তখনই চমকে ওঠে বিদ্যুৎ, চমকে ওঠে দীপ্তেশ। -এ কি দুহাতে রক্ত এলো কোথা থেকে! মোটর সাইকেল আরোহীকে দেখে আবারও চমকে ওঠে দীপ্তেশ। কি বিশ্রীভাবে হাসছে সৌমেন। -সেদিন ভ্যান থেকে তুই ঠেলা মেরে ফেলে না দিলে আমি পরে যেতাম না। মাথাটায় ভীষণ লেগেছিল জানিস। দীপ্তেশের চোখের সামনে ভেসে উঠছে সেই দৃশ্যটা। ভ্যান থেকে পরে গিয়ে মাথাটা লেগেছে পাশের লাইটপোস্টে। মাথা ফেটে রক্তে ভেসে যাচ্ছে সৌমেনের সারা শরীর। গ্রামের হাসপাতালে কোন ডাক্তার ছিল না তখন। বাঁচানো যায়নি সৌমেনকে....


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama