The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

Ajay Shaw

Classics

2  

Ajay Shaw

Classics

ফিরে পাওয়া

ফিরে পাওয়া

5 mins
1.0K


ব্রেকআপের আজ দু সপ্তাহ হতে চললো অথচ একবারের জন্য অনিক যোগাযোগের চেষ্টা করেনি। অনিক এভাবে ভুলে যাবে এটা মেনে নিতে পারছেনা রিতু। রিতুর খুব কষ্ট হচ্ছে। বারবার অনিকের কথা মনে পড়ছে। খোঁচা খোঁচা দাড়ির শ্যামলা ছেলেটার মায়া কাটাতে পারছেনা রিতু। অতি সাধারন চেহারার ছেলেটার বিদায় বেলার শেষ চাহুনি রিতুকে কুরে কুরে খাচ্ছে। আজকে অনিক শুভমের সাথে তাকে রিকশায় দেখেছে। শুভমের সাথে রিতুর সামনের মাসে বিয়ে। রিতু ভেবেছিলো অন্তত আজকে শুভমের সাথে দেখার কারনে অনিক ফোন করবে। বিশ্বাসঘাতক, ছলনাময়ী এসব বলার জন্য হলেও ফোন করবে। কিন্তু না রাত একটা বেজে গেছে এখনো অনিক ফোন করেনি। রিতুর কান্না পাচ্ছে, রাগ হচ্ছে। অনিকের উপর রাগ করা কি ঠিক হচ্ছে। ব্রেকআপ তো সেই করেছিলো। অনিক তো বলেছিলো, চল পালিয়ে যাই।

বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে রিতু পারেনি অনিকের সাথে পালিয়ে যেতে। আচ্ছা অনিক কি তাকে খারাপ মেয়ে ভাবে এখন। রিতুকে খারাপ মেয়ে ভাবা কি ঠিক। রিতু এতোদিন লেখাপড়া শেষ করার অযুহাতে বিয়েটা এড়িয়ে গেছে। এখন কি বলে বিয়ে আটকাবে সে। অনিকের কথা রিতু তার মা কে বলেছিলো। অনিক তার সাথে গ্রাজুয়েশন করেছে। এখনো বেকার। এসব শুনে মা না করে দিয়েছে। রিতু ফোনটা হাতে নিয়ে অনিককে কল করলো। অনিকের ফোন বন্ধ। রিতু মেসেজ করলো,


"ফোন বন্ধ কেন তোর?"

.

ফোনের অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পরেছিলো রিতু। খুব ভোরে ফোনের শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো রিতুর। অনিক ফোন করেছে। রিতু দ্রুত ফোন রিসিভ করলো। ফোনের দুপাশেই নিরবতা। নিরবতা ভাঙ্গলো অনিক,


-কিরে কেমন আছিস?

.

--হুম ভালো তুই?

.

-হঠাৎ কি মনে করে?

.

রিতু কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পরে বললো,


--তুই কি আমার সাথে একটু দেখা করবি?

.

-কেন?

.

--সেটা পরে বলবো। আজ দেখা করবি প্লিজ।

.

-আচ্ছা ঠিক আছে।

.

--বিকালে নদীর পাড়ে আয় তাহলে।

.

-আচ্ছা।

.

রিতু তার পছন্দের শাড়িটা পরলো। একসময় অনিক শাড়ি পরার জন্য রিতুকে খুব বিরক্ত করতো। রিতু রেগে বলতো,


--ঢং করিসনা তো। শাড়ি পরে আসলে মা সন্দেহ করবে। আর তাছাড়া আমি শাড়ি ঠিকমতো সামলাতে পারিনা।


অনিক তারপরেও শাড়ির কথা বললে রিতু বলতো,


--তোর মতলব কি বলতো। এতো শাড়ি শাড়ি করিস কেন। ও আচ্ছা এবার বুঝেছি।চুড়িদার,টপ পরার জন্য তো আমার পেট কোমর তো দেখতে পাসনা। শাড়ি পরলে দেখতে পাবি। পেট দেখার ধান্ধা তাইনা।


রিতু কথাগুলো মজা করে বললেও অনিক খুব রেগে যেতো। রেগে চলে যেতে চাইলে রিতু হাত টেনে ধরে বলতো,


--যাচ্ছিস কোথায়। তোকে কি আমি যেতে বলেছি। চুপচাপ বসে থাক। মাঝখানে এক হাত ফাকা জায়গা রেখে বসবি।


অনিক রেগে বলতো,


-বসবোনা। আমি বাড়ি গেলাম।

.

রিতু অনিকের হাত ছেড়ে দিয়ে বলতো,


--সাহস থাকলে যা।


অনিক কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে আবার বসে পরতো।

.কয়েকদিন রাত জাগার কারনে চোখের নিচে কালি জমেছে। রিতুর গায়ের রঙ উজ্জল ফর্সা হওয়ায় খুব বাজে দেখাচ্ছে। রিতু হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি পরলো। বাড়ি থেকে বের হবার সময় খুব সাবধানে মায়ের চোখ এড়িয়ে বের হলো।

নদীর পাড়ে এসে দেখলো অনিক বসে আছে। উদাস ভঙ্গিতে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে। রিতুর বুকে কেমন যেন মোচড় দিলো। মুহূর্তেই এলোমেলো করে দিলো। এই ছেলেটার প্রতি এতো মায়া কেন তার।

রিতু অনিকের পাশে গিয়ে গা ঘেঁষে বসলো। অনিক রিতুর দিকে তাকালো। রিতুকে খুব সুন্দর লাগছে। শুধু চোখের নিচে কালি জমেছে। তবুও সৌন্দর্যে যেন একটুও ভাটা পরেনি। অনিককের বাহুর সাথে রিতুর বাহু স্পর্শ হতেই অনিক একটু সরে বসলো। রিতু বললো,


--কি হলো সরে বসলি যে?

.

-তুই না গা ঘেঁষে বসতে বারন করিস।

.

--আজ বারন করবোনা। কাছে এসে বস।


দুজনে চুপচাপ বসে আছে। রিতুর খুব ইচ্ছা করছে অনিককে জড়িয়ে ধরে একটু কান্না করতে। রিতু অনিকের কাঁধে মাথা রাখলো। কিছুক্ষন পরে অনিক বুঝতে পারলো রিতু কাঁদছে। রিতুর চোখের জলে অনিকের শার্টটা ভিজে গেছে। অনিক বললো,


-কাঁদছিস কেন?

.

--এমনি।


রিতু নিজের চোখের জল মুছে বললো,

--আচ্ছা তুই না সবসময় আমাকে শাড়ি পরতে বলতিস। আজ তো শাড়ি পরে আসলাম। বললিনা তো আমাকে কেমন লাগছে???

.

-হুম সুন্দর লাগছে। আচ্ছা আমাকে কেন ডেকেছিস বললিনা তো।

.

--তোর কি তাড়া আছে?

.

-হুম…

.

--থাকুক সন্ধ্যা পর্যন্ত আমার সাথে এখানে বসে থাকবি।

.

-এসবের মানে কি রিতু? সামনের মাসে তোর বিয়ে। তুই নিজেই আমার সাথে ব্রেকআপ করলি। এখন আমার কাছে কি চাস?

.

--শুধু আজকের বিকালটা চাই তোর কাছে।

.

ঠান্ডা বাতাস বইছে। সূর্যটা পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। ক্রমশ সন্ধ্যা হয়ে আসছে। রিতুর মনে হচ্ছে সময়টা খুব দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। সময়টা যদি এখানেই থেমে থাকতো। সন্ধ্যাটা হতোনা। সে অনিকের কাঁধে এভাবেই মাথা রেখে বসে থাকতে পারতো।

অন্ধকারে রিতুর মুখটা দেখতে পাচ্ছেনা অনিক। রিতুর নিশ্বাস গলার কাছে অনুভব করছে। অনিক বললো,


-রিতু বাড়ি যা। অনেকক্ষন আগে সন্ধ্যা হয়েছে।

.

রিতু অনিকের কাঁধ থেকে মাথা তুলো চোখ মুছলো। অনিকের মুখটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছেনা। রিতু বললো,


--আসি তাহলে। ভালো থাকিস।

.

বাড়ি ফিরতেই রিতুর মা বকাবকি শুরু করলেন,


--না জানিয়ে কোথায় গেছিলি। আর ফোন ধরছিলিনা কেন। শুভম বাড়ি এসেছিলো। শুভমকে বলেছি তুই বান্ধবীর বাড়ি গেছিস।

.

রিতু মায়ের কথার উত্তর না দিয়ে নিজের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো। চেয়ারটা টেনে জানালার পাশে বসলো। রিতু এক দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে আছে। সে জানে তার মতো অনিক ও কষ্ট পাচ্ছে। রিতুর মনে হচ্ছে সে যদি স্বার্থপর হতে পারতো। বাবা মায়ের কথা না ভেবে অনিকের হাত ধরে চলে যেতে পারতো। বাইরে নিকষ কালো অন্ধকার। তারচেয়ে বেশি অন্ধকার রিতুর মনে। রিতুর কতো স্বপ্ন ছিলো। অনিক আর তার ছোট একটা সংসার হবে। অনিক কেমন যেন তাকে ভয় পায়। আচ্ছা অনিকের সাথে বিয়ে হলে বিয়ের পরেও কি অনিক তাকে ভয় পেতো। হলে অনেক মজা হতো। অনিককে অকারনে খুব রাগ দেখাতো। অনিক যখন কিছু বুঝতে না পেরে বোকার মতো তাকিয়ে থাকতো রিতু ফিক করে হেসে দিতো। যখন তখন দুহাতে অনিকের মুখটা ধরে বলতো, ভালোবাসি। অনিককে কেন এতোটা ভালোবাসে সে।

অনিকের কথা ভেবে আবারো কান্না পাচ্ছে রিতুর। ইচ্ছে করছে ছুটে অনিকের কাছে চলে যেতে।

রিতু ফোনটা হাতে নিয়ে অনিককে কল করলো,


-হ্যালো…

.

রিতু কান্না জড়ানো কণ্ঠে বললো,


--তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।

.

-বাড়ি থেকে বের হ।

.

--কি?

.

-বললি না দেখতে ইচ্ছা করছে। দেখতে চাইলে বাড়ি থেকে বের হ।

.

রিতু প্রায় দৌঁড়ে বাড়ি থেকে বের হলো। রাস্তার ওপাশে ল্যাম্পপোস্টটার নিচে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। রিতু দৌঁড়ে সেখানে গেলো। অনিক রিতুকে দেখে বললো,


-কিরে কাঁদছিস কেন?

.

--তুই এখানে কি করছিলি?

.

-কেন যেন মনে হচ্ছিলো তুই বাড়ি ফিরে ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে বলবি, তোকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে।

.

--তখন থেকে দাঁড়িয়ে আছিস?

.

-হুম…

.

--আমার কিছু ভালো লাগছেনা। পাগল পাগল লাগছে। তুই কিছু একটা কর না প্লিজ। আমি ওই ছেলেকে বিয়ে করতে পারবোনা। দেখিস আমার যদি বিয়ে হয় আমি কিন্তু মরে যাবো। সত্যি মরে যাবো।

.

-তোর বাবা বাড়িতে আছেন?

.

--কেন?

.

-একটা চাকরি পেয়েছি। আহামরি চাকরি না তবে তার মেয়েকে খাওয়াতে পারবো।

.

--তুই চাকরি পেয়েছিস? সত্যি?

.

-হুম গত সপ্তাহে এপয়েন্টমেন্ট লেটার পেয়েছি।

.

--তাহলে আমাকে বলিসনি কেন?

.

-অপেক্ষা করছিলাম তোর ফিরে আসার।

.

--বিকেলে বললিনা কেন তাহলে?

.

-তখনো পুরোপুরি ফিরে আসিসনি তাই।

.

ল্যাম্পপোস্টটার নিচে দুটো মানুষ একে অপরকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তারা কাঁদছে। ফিরে পাওয়ার কান্না কাঁদার মতো ভাগ্য সবার থাকেনা।।


Rate this content
Log in

More bengali story from Ajay Shaw

Similar bengali story from Classics