পাহাড় সমুদ্রে ঘেরা ওয়ালটেয়ার
পাহাড় সমুদ্রে ঘেরা ওয়ালটেয়ার
বিশাখাপত্তনম, ভাইজ্যাগ আর ওয়ালটেয়ার, একই জায়গার অনেকগুলো নাম। আমাকে যদি বলা হয় পাহাড় ভালো লাগে না সমুদ্র দুটির মধ্যে কখনোই আমি একটিকে বাছতে পারি না।পাহাড়ের এবড়ো খেবড়ো প্রকৃতি, সুউচ্চ চূড়াগুলি যেমন আমাকে টানে, তেমনি সমুদ্রের গভীর রহস্যময়ী নীল জলরাশি,ফেনিল ঢেউয়ের আসা যাওয়া আমাকে পাগল করে দেয়।মাঝে মাঝেই মনে হতো এই দুটো যদি এক জায়গায় পাওয়া যেতো কি মজাটাই না হতো।এই দুটি একসাথে দেখার সুযোগ যে এত সহজেই এসে যাবে তা আগে কল্পনাও করিনি।তবে গত বছর পুজোয় যখন ভাইজ্যাগ যাওয়ার খবরটি বাবার মুখে শুনলাম তখন বুঝলাম আমার পাহাড় সমুদ্রে একসাথে যাওয়ার স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে।আমাদের ট্রেন ছিল করমন্ডল এক্সপ্রেস। যথা সময়ে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে দেখি ট্রেন লেট, দুপুর ২:৫০ এর ট্রেন আসতে বিকাল হয়ে গেলো। ট্রেনে গোটা রাস্তা বেশ বোর লাগছিল। এক সময় ক্লান্তি উধাও হয়ে গেল যখন জানলার বাইরে তাকিয়ে দেখি হঠাৎ করেই পৌঁছে গেছি পাহাড়ের রাজত্বে। পাহাড়ের কোলে বেশ ছোটো ছোটো শহর গড়ে উঠেছে। সে দেখতে ভারি মজার। জানলা দিয়ে তাই দেখতে দেখতে চলেছি। আমরা গিয়েছিলাম অষ্টমীর দিন তাই আসন্ন দশেরা উৎসবের জন্য গোটা অন্ধ্রপ্রদেশ তখন আলোর মালায় সেজে উঠেছে।ট্রেন থেকে আলোকউজ্বল রাজ্যটি দেখে মনে হচ্ছিল আমরা নখত্রখোচিত মহাকাশের দিকেই এগিয়ে চলেছি। একসময় বিশাখাপত্তনমে তো নামলাম। বিশাখাপত্তনম নাম এসেছে দেবী বিশাখার নাম থেকে। তা এই নিয়ে অনেক মত প্রচলিত আছে। পূর্বঘাট পর্বতমালা এবং বঙ্গোপসাগর বিশাখাপত্তনমকে ঘিরে রেখেছে।
ভারী সুন্দর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন স্টেশন চত্বর। কাছেই পাহাড় আছে। ঠাণ্ডা নেই তেমন, বরং বেশ আরামদায়ক আবহাওয়া। স্টেশনের বাইরে এসেও বেশ অবাক হয়ে গেলাম। দারুণ ঝকঝকে রাস্তা সব। তাতে গাড়ি চলছে। তবে কলকাতার মত এত গাড়ির লাইন নেই। ট্রাফিক জ্যামের সমস্যা নেই। দোকান-পাট, মানুষ জন সবই আছে কিন্তু জনসমুদ্র নেই।তখনো ভালো করে সূর্যের আলো ফোঁটেনি তাই গোটা শহরটা নানা রঙের আলোর ঢেউয়ে ভেসে যাচ্ছে।এই ভাইজ্যাগে এসেই সন্তু আর কাকাবাবু হারিয়ে গেছিল। সন্তু কোথায়? কাকাবাবু কোথায়? তোমরা হয়তো অনেকেই পড়েছো এই দারুণ অ্যাডভেঞ্চার।আমরা ছিলাম ছজনের টিম, আমি বাবা, মা আর আমার মাসী,মেসো আর মাসতুতো দাদা,
স্টেশন থেকে হোটেলে পৌঁছলাম অটোয় করে। হোটেলটি খুব ভালো না হলেও চলনসই ছিল। সামনের বারান্দা থেকে দেখা যেত সিনেমা হল।সিনেমা শেষ হওয়া আর শুরু হওয়ার সময় দেখা যেত বিশাল জনস্রোত।এখানে এরা নায়ক নায়িকাদের দেবতার মতো পূজো করে তাই অনেক নায়ক নায়িকার পোস্টারেই বিশাল বিশাল ফুলের মালা লাগানো।এসব আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতাম। যেদিন পৌছালাম সেইদিনটা আশপাশের রাস্তা আর মার্কেট ঘুরে দেখতেই কেটে গেলো।সেদিন রাতের নৈশ্য ভোজ হলো দোসা দিয়ে।আমরা আমাদের শহরে দোসা খেলেও এখানকার দোসার স্বাদ গন্ধই আলাদা।যারা সাউথ ইন্ডিয়ান খাবার পছন্দ করেন এই শহর তাদের কাছে স্বর্গরাজ্য।
পরের দিন সকালেই আমাদের গন্তব্য ছিল সিমাচলম মন্দির। নৃসিংহ দেবতার মন্দির হল সিমাচলম। বিষ্ণুর দশ অবতারের মধ্যে একটা হল এই নৃসিংহ অবতার। মুখটা সিংহের কিন্তু দেহটা মানুষের। পুরাণে আছে ভক্ত প্রহ্লাদ এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। প্রহ্লাদ খুব ছোটোবেলা থেকেই বিষ্ণুর আরাধনা করতেন। এর জন্য তাঁকে নিজের বাবা হিরণ্যকশিপুর কাছে প্রচুর অত্যাচারিত হতে হয়েছিল। বিষ্ণু শেষে নরসিংহ রূপ ধারণ করে হিরন্যকশিপুকে হত্যা করেন।
মন্দির বেশ প্রাচীন আমলের। আসন্ন দশেরা উৎসবের আগে এখানে পূজো দেওয়ার জন্য মানুষের ঢল নেমেছিল,যেমন ছিলো স্থানীয় মানুষের ভীড়,তেমনি আবার বাইরে থেকে আসা পর্যটক,লাইনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের সবারই ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছিল। আমরা সকলেই সকলের হাত শক্ত করে ধরে ছিলাম ভেতরে ঢোকার সময়। খুব ঠেলাঠেলি হয় তখন। মন্দিরের পরিবেশ খুব সুন্দর। এখানেও পাহাড় আছে। আসলে পাহাড় আমাদের সঙ্গে সঙ্গেই চলছে।
এখান থেকে গেলাম রামকৃষ্ণ বিচ। মন্দিরে পূজো দিতে দিতেই সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছিল।সমুদ্রের ধারে সন্ধ্যার অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে মন কোন সুদূর অতীতেই না ভেসে যায়। এখানে সমুদ্রের ধারে পাথরে ভরা,আর সমুদ্রের রূপও দীঘা বা পুরীর সমুদ্রের থেকে অনেক বেশী ভয়ংকর, তাই সমুদ্রে নামা যায় না, দূর থেকেই তাকে দুচোখে ভোরে নিতে হয় আর পাথুরে পাহাড়ের গায়ে তার মুহুর্মুহু আছড়ে পড়ার ফলে সৃষ্ট কান ফাটানো গর্জনে মনকেও তুষ্ট করতে হয়।
এখানে মা কালীর একটা মন্দির আছে। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণও আছেন যথারীতি সেখানে গিয়ে মনের আলাদা শান্তি পাওয়া যায়।সন্ধ্যা বেলা দশেরা উৎসবে এখানেই দেখা গেলো রাবনবধ অনুষ্ঠান । সেদিনের মতো ঘোরা আমাদের এখানেই শেষ হলো।সকাল থেকে সেইভাবে ভালো খাওদাওয়ার সুযোগ হয়নি তাই হোটেলে ফিরে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া করা হলো রাতে।
পরের দিন আমাদের দর্শনীয় ছিল স্থানীয় কিছু সাইট সিন ।প্রথমেই আমরা গেলাম আমাদের হোটেল থেকে অনতিদূরে শিবাজী পার্কে।সুন্দর সাজানো গোছানো বিশাল পার্কটির সৌন্দর্য মন জয় করবেই।আর বিভিন্ন ধরনের স্ট্যাচু দিয়ে সাজানো পার্কটি ফটো তোলার খুব আকর্ষণীয় স্থান। এরপর আমাদের গন্তব্য ছিল কৈলাশ গিরি। এটি পাহাড়ের মাথার উপর একটা পার্ক ।এই পার্কের মূল আকর্ষণ সাদা পাথরর্নির্মিত বিশালাকার শিব আর পার্বতীর মূর্তি। এখানে আমরা প্রচুর ফটো তুললাম কারণ এটা একটা অদ্ভুত জায়গা। এখানে একটা ভিউ পয়েন্ট আছে, যেখান থেকে পাহাড় আর সমুদ্রকে এক সাথে দেখতে যায়। আর এটাই ভাইজ্যাগের বিশেষত্ব, পাহাড়ের ওপর থেকে দেখতে পাবে অনেক নীচে সমুদ্রের ঢেউগুলো আছড়ে পড়ছে আর অল্পদূরেই পাহাড়ের সারি।তাছাড়া পাহাড়ের ওপর থেকে নিচের শহরের দৃশ্যও দেখা যায়।ভিউপয়েন্ট থেকে দেখে মনে হয় পাহাড়গুলো যেন বুক দিয়ে আগলে রেখেছে সমুদ্রকে। আমি কখনও এমন দৃশ্য দেখিনি আগে। তাই মুগ্ধ হয়ে কিছুক্ষণ বসে রইলাম। এখানেই আমরা সমুদ্রের ধারে একটি স্থানীয় সিনেমার শ্যুটিং হতেও দেখলাম ।এখানে প্রায়ই বিভিন্ন সিনেমার শ্যুটিং হয় ।কয়েকবছর আগে আমাদের এক আত্মীয় এখানে এসে দেখেছিলেন আফতাব শিবদেশানি আর আমিশা প্যাটেল অভিনীত "ক্যা ইয়হি প্যার হে" সিনেমার শ্যুটিং।উনি আমিশা প্যাটেলের সাথে দেখা করে ওনার অটোগ্রাফও নিয়েছিলেন । যাই হোক এরপর এই পার্কের সামনেই একটি রেস্টুরেন্ট এ আমরা বিশুদ্ধ বাঙ্গালী খাবার পেয়ে গেলাম।বেশ কিছুদিন পর ঘরোয়া খাবার খেয়ে খুব ভালো লাগলো।এরপর আমরা গেলাম ভুদা পার্কে।এত বিশাল পার্ক সত্যিই খুব কমই দেখা যায়। সমুদ্রের বিচ বরাবর খুব সুন্দর ভাবে পার্কটি তৈরি।এই পার্কের মূল আকর্ষণ স্কেটিং রিং এখানে স্থানীয় ছেলেমেয়েদের খুব দক্ষতার সাথে স্কেটিং করতে দেখা গেলো বিশেষ করে একটি বাচ্ছা মেয়ে এতো সুন্দরভাবে স্কেটিং করছিল যে দেখে মনে হচ্ছিল কোনো পরী হাওয়ায় ভেসে ভেসে নাচছে। ছোট্ট সুন্দর মিষ্টি মেয়েটিকে স্কেটিং করতে দেখে শুধু আমরা না অন্যান্য পর্যটকরাও মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছিলেন। এই পার্কেই আমরা দক্ষিণ ভারতীয় স্পেশ্যাল পানিপুরি অর্থাৎ ফুচকা খেলাম।
এই ফুচকার স্বাদ একদম আলাদা ধরনের কারণ এরা ফুচকার পুর হিসাবে আলু মাখার জায়গায় এরা একটা বিশেষ আলুর তরকারি ব্যবহার করে।এরপর আমরা গেলাম সেন্ট্রাল পার্ক, এর আসল নাম Dr.Y.S.Rajasekhara Reddy Park তবে স্থানীয় লোকেরা এটিকে সেন্ট্রাল পার্ক নামেই চেনে।এখানে আছে ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম মিউজিক্যাল ফাউন্টেন।সন্ধ্যে ছয়টা থেকে এখানে এই শো শুরু হয়।আমাদের রাজ্যে সাইন্স সিটি আরো অনেক জায়গায় মিউজিক্যাল ফাউন্টেন আছে কিন্তু এখানে যে মিউজিক্যাল ফাউন্টেন আছে তার কোনো তুলনা হয় না বিভিন্ন ধরনের সঙ্গীতের তালে আলো আর জলের মাধ্যমে যে নৃত্য শৈলী ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তা দেখলে মনে হয় আমরা স্বর্গের বাগানে বসে আছি আর আমাদের সামনে অপ্সরারা নানারকম নৃত্য ভঙ্গিমা ফুটিয়ে তুলছে।এই দিনের ঘোরা আমাদের এখানেই শেষ হলো।পরের দিন আমরা গেলাম ডলফিন নোজ দেখতে।এখানে দেখলাম শুকনো মাছ তৈরির কারখানা। সমুদ্রকে কেন্দ্র করেই কত মানুষের কত রকম জীবিকা গড়ে উঠেছে। এখানে মাছের খুব দুর্গন্ধ ছিল। তবু একটা অন্য রকম জিনিস দেখা গেল বটে।শুকনো মাছ এভাবেই তৈরি করে।এরপর গেলাম ঋষিকোণ্ডা বিচ।এখানে বেশ সমুদ্রে জলকেলী করা গেলো ।তবে আগেই বলেছি এখানে সমুদ্রে নেমে স্নান করা যায় না ।রামকৃষ্ণ বিচের মতই এই বিচটিও অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ। আর ছিল সাবমেরিন মিউজিয়াম। এটা আমরা যেতে পারিনি। বন্ধ থাকে সোমবার। অবশ্য এখানে যাওয়ার পথে গাড়িতে বেশ কিছুটা পাহাড়ে ওঠা গেলো।সেই পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছিল অসাধারণ আমরা বেশ কিছুক্ষন একটি ফাঁকা জায়গা দেখে গাড়ি থেকে নেমে, নিজেদের মতো ঘুরে বেড়ালাম একটু। মাছের একটা মিউজিয়াম আছে সেটা অবশ্য দেখেছি। বিভিন্ন রকম মাছ দেখতে পাওয়া যায় এখানে। বিভিন্ন রকম কচ্ছপও আছে। মৎস্যদর্শিনী এই মিউজিয়ামের নাম।এইদিন আমাদের একটা নৈশ্য ভোজের ন্রিমন্তন করেছিলেন মেসোর এক বাল্যবন্ধু। উনি ভাইজ্যাগের জাহাজ বন্দরে চাকরি করেন। তাদের পরিবারের সঙ্গে আমাদের সেই সন্ধ্যাটি কেটে গেলো খুব আনন্দের মধ্যে দিয়ে।
ভাইজ্যাগে এইদিনটিও শেষ হয়ে গেল। এবার আমরা রওনা দেব আরাকু ভ্যালির উদ্দেশে। পরের দিন খুব সকালে উঠতে হবে ট্রেন ধরার জন্য।
পরের দিন ভোর বেলা সাতটায় আমরা ট্রেনে উঠলাম। এই ট্রেন বেশ মজার। কু ঝিক ঝিক করে চলে। তোমরা হাসছ, ভাবছ সব ট্রেনই তো তাই। কিন্তু তবু এর একটু অভিনবত্ব আছে। সবুজ উপত্যকার মধ্যে দিয়ে ট্রেন ছুটে চলেছে। একটার পর একটা টানেল পার হচ্ছে। টানেলের ভেতর ট্রেন ঢুকলেই অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। আর টানেল থেকে বেরুলেই ঝলমলে দিন। এটাই হল মজা। একবার আলো তো পরের মুহূর্তেই আঁধার। ঠিক আমাদের জীবনের মত। টানেলগুলো গুণে দেখো তো মোট ক’টা আছে। আমি আবার গুণতিতে খুব কাঁচা।কু ঝিক ঝিক
সবুজ উপত্যকার মধ্যে দিয়ে চলতে চলতে কখনও কোনও ছোট্ট একটা স্টেশনে ট্রেনটা দম নেবার জন্য একটু থামছে। মাথায় ফলের ঝুড়ি নিয়ে ওঠানামা করছে গ্রাম্য কিছু নারী-পুরুষ। কেউ বাদাম, ঝালমুড়ি, চা এসবও বিক্রি করছে। আরাকু স্টেশানে আমরা নামলাম। এই ট্রেনজার্নিই এখানকার সব চেয়ে উপভোগ্য। আরক্যু এখানকার হিল স্টেশান। বেশ ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভাব। সবুজে সবুজ চারদিক। এখানে চা আর কফি বাগিচা আছে।
সবুজ আরাক্যু ভ্যালি (গাড়িতে যেতে যেতে এক ঝলক)
এখানে প্রধান দেখার জিনিস হল আদিবাসী মিউজিয়াম। এখানে আদিবাসীদের তৈরি বিভিন্ন জিনিস বিক্রি হচ্ছিল তবে দাম খুব বেশি। দরদাম করতে না পারলে ঠকে যাবে- এমনটাই আমাদের বললেন গাড়ির ড্রাইভার। আরক্যু ভ্যালিতে সেই দিনটা কাটিয়ে পরের দিনের আমাদের
দ্রষ্টব্য ছিল বড়া কেভ বা বড়াগুহালু। উইলিয়াম কিং ১৮০৭ সালে এই কেভ বা গুহা আবিষ্কার করেন। ভারতের বড় বড় গুহাগুলোর মধ্যে এটা অন্যতম। এখানে প্রকৃতি নিজেই সৃষ্টি করেছে অনেক স্থাপত্য যেমন শিবলিঙ্গ, বাঘের থাবা। কল্পনা চোখে নিয়নের আলোয় কোনোটা বাঘের থাবা, কোনোটা গণেশ ঠাকুর,আবার কোনোটা পদ্মফুল। গুহার শেষ প্রান্তে একটি শিবলিঙ্গ আছে যেখানে পুজো দেওয়ার ব্যবস্হা আছে।বেশ কিছুটা সিঁড়ি ভেঙ্গে উঠে পৌঁছাতে হয় ভগবানের সামনে। এখানে গুহার গা থেকে জল পড়ে সিঁড়িগুলো বেশ পিচ্ছিল হয়ে থাকে তাই খুব সাবধানে উঠতে হয়। এখান থেকে বেরিয়ে আমরা গেলাম দুপুরের ভোজ খেতে একটি স্থানীয় দোকানে। এখানেই আমি প্রথম খেলাম বাম্বু চিকেন আর বাম্বু রাইস।এটি এখানকার একটি বিশেষ খাবার,আর স্বাদে গন্ধেও বেশ আলাদা ধরনের।আরাক্যুর আরও কিছু দেখার জায়গা আছে। যেমন, কটিকি জলপ্রপাত, পদ্মপূরণ বোটানিক্যাল গার্ডেন, অনন্থগিরি পাহাড়, টায়ডা পার্ক, চাপারাই জলপ্রপাত এবং আরও অনেক কিছু। একদিনে এত কিছু দেখা সম্ভব নয়। তাই আরাক্যুতে দুদিন থাকতেই হয়।তবে আমাদের হাতে আর সময় না থাকায় সেদিন দুপুরের ট্রেনেই আমরা ফিরলাম ভাইজ্যাগে।সেইদিন রাতেই আমাদের বাড়ি ফেরার পালা এই পাহাড় সমুদ্রে ঘেরা সুন্দর শহরটিকে ছাড়তে যদিও ইচ্ছে করছিল না চোখ ভরে যাচ্ছিল জলে তবু ফিরতে হবেই, আবার দিন গোনা শুরু আগামীর অপেক্ষায়।
