ANIRUDDHA BOSE

Classics Crime Thriller

4.3  

ANIRUDDHA BOSE

Classics Crime Thriller

ওয়েলকাম ডেথ

ওয়েলকাম ডেথ

11 mins
594


কোনোরকমে ফ্ল্যাট এ ঢুকেই দরজাটা বন্ধ করে দিলো মিথিলা | বাইরে কনকনে হাওয়া, তারমধ্যে আজ আবার ১৫ ডিগ্রি | অফিস থেকে এসে ওর প্রথম কাজ হলো রুম হিটার আর গিজার টা চালিয়ে দেওয়া | তারপর একটা হট ওয়াটার বাথ নিয়ে নতুন মুভি টা দেখতে বসতে হবে | সকালে আবার রিতু মাসি আসেনি, কুছ পরোয়া নেহি ,ঠান্ডায় মাসি না এলেও সুইগি তো আছে ! এখন আর ওই রান্নার ঝামেলায় কে যাবে ! এমনিতেও আজকাল যা চাপ যাচ্ছে অফিসে | তার ওপর আজ যা হলো ! এখনো যেন নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছেনা মিথিলা কলিং বেল বাজলো | এখন আবার কে ?


দরজা খুলতেই চমক " মিঃ ব্যানার্জি আপনি ! "


" কেন আসতে নেই ?"


"না না অবশ্যই ,কিন্তু এই অধমের বাড়িতে হঠাৎ কিছু না জানিয়েই ? কিছু সেবা করার সুযোগ তো আমাদের ও দিতে হবে নাকি ?"" সমস্ত সেবা কি বাইরে দাঁড়িয়েই নিতে হবে ?"


"আরে না না" ফিচ করে হেসে ফেলল মিথিলা " আসুন আসুন.."


অভিষেক ব্যানার্জি 'রেট্রো স্পাইস' কোম্পানির এ.জি.এম ,আর এই কোম্পানিতেই গত বছর মিথিলা জি.এম হয়ে ট্রান্সফার নিয়ে এসেছে |ফুলের বোকে আর একটা জাম্বো সাইজের অফিস ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে গিয়েই মি:ব্যানার্জি দরজার পাশের সু কেস টায় ধাক্কা খেলেন | ঠিক সময়ে সামলে নিলো মিথি"সাবধানে আসুন, গরিবের ছোট গৃহ, বোঝেন ই তো !"


মি:ব্যানার্জি একটা হালকা হাসি ফেরত দিলেন |


"তা হঠাৎ ফুল টুল নিয়ে...আমি কিন্তু সত্যিই বুঝতে পারছিনা কারণ টা!"" বাহ্ রে এতো বড়ো একটা সাকসেস পেলে, 70 কোটির ডিল ফাইনাল হলো, কংগ্রাচুলেট না করে পারা যায় ?" বোকে টা টেবিলে রেখে সোফায় বসতে বসতে বললেন মি: ব্যানার্জি "আমি তো শুধু রিপ্রেসেন্ট করেছি অভিষেক বাবু, সবটাই আমি জানি, কিভাবে আপনি গত ছয় মাস ধরে খেটে চলেছেন এই প্রজেক্ট টার জন্য | আসল সাকসেস টা তো আপনার |" মিথিলাও সামনাসামনি বসলো |

মিঃ ব্যানার্জি বিষাদ হাসি হাসলেন " কি করবো বলুন, এতো দিন ধরে এতো পরিশ্রম করলাম এই কোম্পানির জন্য অথচ দেখ , বুঝতেই পারিনি যে পরিশ্রমে রাজেন চৌধুরীর মন ভরেনা |"


" তাহলে আপনি কি ভাবছেন ? আমার রূপ যৌবনে রাজেন বাবুর মন ভরেছে ?"


"আমি আর কোথায় বলছি বল ! লোকে বলে তাই শুনি !"" লোকে তো এও বলে, আপনি নাকি আমার উপর চরম ক্ষুব্ধ, আমার জি.এম হয়ে আসায় ?" বলেই সশব্দে হেসে উঠলো " দেখুন মিঃ ব্যানার্জি লোকের কথায় আমার কিছুই যায় আসে না | আর অফিসের এতো কাজের মধ্যে একটু পরনিন্দা না করলে কর্মচারীদের মন চাঙ্গা থাকবে কিভাবে ? শুধু আমাদের নিজেদের মধ্যে বোঝা পড়াটা থাকা খুব প্রয়োজন | সত্যিই আপনি যে এসেছেন আমার ভীষণ ভালো লাগছে বিশ্বাস করুন ..অনেক কিছু বলে চলেছে মিথিলা , অভিষেক বাবুর সেসব মাথায় ঢুকছেনা উনি ভাবছেন " হ্যা মিথিলা, আজ শেষ বোঝাপড়া করতেই এসেছি আমি, আর সেটা এমন ভাবে করবো যাতে তুমি বুঝতেই পারবেনা কখন আমি তোমায় ভব নদীর ওপারে পৌঁছে দেব | গত বাইশ বছর ধরে এই 'রেট্রো স্পাইস ' এর জন্য কীই না করেছেন আমি | এই প্রজেক্ট টার জন্যেও দিন রাত এক করেছি , কাউকে জানতে দিইনি | অথচ তার পরিশ্রমের ফসল পেলো কিনা মিথিলা ? নাহ অনেক হয়েছে , এবার এই আকাশ থেকে টপকে পড়া কাঁটা টাকে আজই পাকাপাকি ভাবে উপরে ফেলব আমি | হ্যা আজ আমি এখানে মিথিলা কে 'খুন' করতেই এসেছি"কি হল, অভিষেক বাবু কি ভাবছেন ?"


"কিছুনা ভাবছি এই শীতে, একটু রেড ওয়াইন খেতে আপনি পছন্দ করবেন কিনা ?""হোয়াট ? রেড ওয়াইন ? আপনি রেড ওয়াইন এনেছেন ?কিন্তু অভিষেক বাবু এতটা খরচ না করলেও পারতেন |" একবার ই তো করলাম, আফটার অল এরকম আনন্দের দিন কতবার আসে?"


দুজনেই গ্লাস ছোয়ালেন " চিয়ার্স !"ছোট্ট সিপ্ নিয়ে মিথিলা বলল " দেখুন ডিনার তো আপনাকে করতেই হবে, কিন্তু আমার হাতে নুডুলস ছাড়া আর কিছুই জুটবেনা , তার চেয়ে আপনার কি পছন্দ বলুন, সুইগি তে অর্ডার দিয়ে দিই "


" আজ নয় সব তোমার পছন্দের ই হোক "মিথিলা হালকা হেসে বলল " বেশ তাহলে, চিকেন মাঞ্চুরিয়ান, চিকেন 65 আর মিক্সড ফ্রাইড রাইস ? চলবে ? "

" দৌড়োবে | "নানারকম কথাবার্তার মধ্যেই চলে এলো খাবার | মিথিলা উঠে পড়ল | " আপনি বসুন, আমি খাবার টা প্লেট এ সার্ভ করে আনছি |"

"হুমম "


মিথিলা চলে গেলো | মিঃ ব্যানার্জি গুম হয় বসে রইলেন | উনি হাসি মুখে কথা বলছেন ঠিকই , কিন্তু মনে মনে অসম্ভব নার্ভাস হয়ে পড়েছেন তিনি | আফটার অল তিনি তো আর খুনি নন মিথিলা ফোন কারোর সাথে কথা বলতে বলতে প্লেট এ খাবার গুলো সাজাচ্ছিলো | মিঃ ব্যানার্জি চুপ করে কিচেনের দরজায় গিয়ে দাড়াঁলেন | ওই খাবারে বিষ মেশাতে হবে তাকে | দোষ টা যে হোটেল থেকে খাবার এসেছে তার উপর পড়বে | কারণ তিনি যে এখানে এসেছেন সেটা কেউ জানে না | এমনকি ফ্ল্যাট এর গেট দিয়েও না ঢুকে পেছনের পাঁচিল টপকে ঢুকেছেন তিনি | খুব কষ্টে সিসিটিভি এর নজর বাঁচিয়ে এই অবধি এসেছেন তিপ্রথমে মিথিলা কে সরাতে হবে এখান থেকে | মিঃ ব্যানার্জি তার ফোন থেকে মিথিলার ল্যান্ড লাইনে কল করলেন | মিথিলা ফোন টা কেটে পেছন ফিরে মিঃ ব্যানার্জি কে দেখেই চমকে উঠল |


" অভিষেক বাবু আপনি? এখানে ?"


" তুমি ফোনে কথা বলছিলে তাই ভাবলাম রিং টা শুনতে পাওনি | "


" ও আপনি একটু দাঁড়ান এখানে আমি রিসিভ করে আসছি |""শিওর"


মিথিলা চলে যেতেই মিঃ ব্যানার্জি ভেতরে ঢুকে ,পকেট থেকে ছোট্ট কৌটো টা বের করে নিপুন হাতে মাংসের মধ্যে মিশিয়ে ভালো ভাবে নেড়ে দিলেন | তারপর প্লেট টা যাতে মিসপ্লেসড না হয় একটা মার্কার দিয়ে খুব ছোট্ট চোখে না পড়ার মতো ডট দিয়ে রাখলেন নিচের দিকে | মিথিলা ফিরে এল " কিজানি কে ! কোনো রেস্পন্স এ করলো না | আজব ! "


" এদিকে আমি কিন্তু বাকিটা সেরে ফেলেছি | "


" আপনি কেন আবার শুধু শুধু এসব করতে গেলেন ! "


" এরকম করে বলোনা প্লিজ "


" দাঁড়ান আমি একটু স্যালাড টা সাজিয়ে নিই " তারপর হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়ায় বলল " বাই দা ওয়ে অভিষেক বাবু আপনার তো আজই আমাদের গ্যাংটক এ বিজনেস ট্রিপ টায় লিড করার কথা ছিল ? ইনফ্যাক্ট আপনি নিজে যেচে দায়িত্ত্ব টা নিলেন ? এ কথার উত্তর ও গোছানো ছিল তার কাছে " আসলে আমার মেয়ের শরীর টা হঠাৎ খুব খারাপ হয়ে পরে তাই আর যাওয়া হলো না...কিন্তু আমি সৌভিক কে পাঠিয়ে দিয়েছি চিন্তা কোরোনা" ওহ, এখন কেমন আছে আপনার মেয়ে ? ইস অল রাইট ?"

" হ্যা হ্যা, ওই মাইনর ফুড পয়জনিং হয়েছিল |"মিথিলার কাজ হয়ে হয়ে গিয়েছিলো | মিঃ ব্যানার্জি তাড়াতাড়ি করে প্লেট গুলো নিজের হাতে নিয়ে নিলেন ,


" আমি নিয়ে যাচ্ছি, আমায় দাও " মিথিলার কোনো বারণ শুনলেন না |প্লেট গুলোকে টেবিল অবধি নিয়ে যাওয়ার আগে খুব সন্তর্পনে একবার দেখার চেষ্টা করলেন কোনটায় মার্ক ছিল | কিন্তু একি !! কেলেঙ্কারি করেছে ! কোনো প্লেট এই মার্ক নেই ! তবে তার হাত দিয়েই ভুল ককরে মার্ক টা মুছে গেলো ? সর্বনাশ ! এবার ? খুব ঠান্ডা মাথায় আন্দাজ করে একটা প্লেট এগিয়ে দিলেন তিনি মিথিলার দিকে |


" আমার একটা ইম্পরট্যান্ট ফোন করতে হবে এখুনি, তুমি শুরু করো |"


"ওকে "


মিঃ ব্যানার্জি একটু দূরে গিয়ে কথা বলা ভান করতে করতে মিথিলা কে দেখছেন | বুকের ঢিপ ঢিপ শব্দ তার কানে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছেন তিনি | মাথাটা দপদপ করছে | একটা একটা একটা করে গ্রাস মিথিলা মুখে তুলছে আর মিঃ এক একটা শ্বাস পড়ছে | মিথিলা খেতে খেতে থেমে গেলো, চোখ গুলো বুজে আসছে ওর, মাথাটা খুব জোরে চেপে ধরেছে এক হাত দিয়ে , চামচ টা পড়ে গেলো মেঝেতেমিঃ ব্যানার্জি ফোন টা কান থেকে নামিয়ে নিলেন আর বোধহয় নাটক টা করার প্রয়োজন নেই | এবার তিনি সামনের দৃশ্যটা উপভোগ করবেন শুধু | মিথিলা মরছে, হ্যা হ্যা সত্যিই, তার জীবনের কাঁটা দূর হতে চলেছে মিথিলা উঠে দাঁড়ালো |

"ওর গলাটা বোধহয় ভীষণ জ্বলছে | গলায় হাত দিয়ে ওক পারছে মেয়েটা | জ্বলুক, আরো জ্বলুক, এ কদিনে আমিও ভেতর থেকে অনেক জ্বলেছি, আজ ওর পালা |" মিঃ ব্যানার্জি মনে মনে ভাবলেন | মুখে একটা নিষ্ঠুর হাসি ফুটে উঠছে নিজের অজান্তেইকথা আটকে যাচ্ছে মিথিলার , কোনোরকমে বললো " অভিষেক বাবু, প্লিজ ডক্টর কে একটা কল করুন, আমার শরীরটা খুব খারাপ লাগছে | অভিষেক বাবু !"


"হ্যা হ্যা এক্ষুনি করছি "


মিথিলা এগিয়ে আসছিলো মিঃ ব্যানার্জির দিকে | হঠাৎ তার গায়েই ঢলে পড়লো সে | না চাইতেও তাকে ধরতে হলো মিঃ ব্যানার্জিকে "আমায় ঘরে নিয়ে চলুন প্লিজ...প্লিজ "মৃত্যুমুখীনির আবদার বলে কথা | কোলে তুলে মিথিলাকে ঘরে নিয়ে গিয়ে তার বেড এ শুইয়ে দিলেন তিনি | সাবধানে একবার নাড়ি টিপে দেখে নিলেন পুরোপুরি মরতে আর কতক্ষন লাগবে | কিন্তু একি! চমকে উঠলেন তিনি । তিনি ডাক্তার নন কিন্তু এটুকু বোঝেন বিষ খাওয়া মানুষের নাড়ি এতটা স্বাভাবিক হতেই পারেনা | সেটা আরো ধীর গতি হওয়ার কথা |


" তবে কি রাজু স্লো পয়জন দিয়েছে ? বার বার করে বলে দিলাম করা ডোজের দিতে ,উফফ ! মিথিলা যদি মরার আগে বুঝে যায় সবকিছু আর কাউকে কোনো মেসেজ বা চিঠি লিখে রেখে দেয়মিঃ ব্যানার্জি ঘাবড়াবার পাত্র নন | সেই সুযোগ ই তিনি দেবেন না মিথিলাকে | মিঃ ব্যানার্জি কোমরের পেছনে হাতড়ালেন | আবার চমক |" কোথায় গেল জিনিস টা ? কোথায় গেল ?"


এই শীতেও দরদর করে ঘেমে উঠলেন মিঃ ব্যানার্জি | সারা ফ্ল্যাট তন্ন তন্ন করে খুঁজলেন | সু কেস এর পাশে, কিচেনে , ড্রয়িং রুমে , নিজের ব্যাগে, নাহ কোত্থাও নেই | আর কোনো উপায় নেই | বেডরুমে ফিরে একটা বালিশ হাতে তুলে নিলেন | এবার নিজের হাতেই কাজ টা করতে হবে | কাঁপা কাঁপা হাতে বালিশ টা নিয়ে মিথিলার মুখের দিকে এগোচ্ছিলেন তিনি | মিথিলা ওপাশ ফিরে শুয়ে আছে | যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছ" খুঁজে পেলেন না অভিষেক বাবু ?" স্পষ্ট গলায় বলে উঠলো মিথিলা | তারপর বালিশের নিচ থেকে রিভলভার টা বের করে তড়াক করে উঠে বসেই মিঃ ব্যানার্জির দিকে তাকে করে বলল " এটাই খুঁজছিলেন তো এতক্ষন ধরে ?"মিঃ ব্যানার্জির মাথা থেকে পা অবধি একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেলো |


" হা করে কি আমার মুখের দিকে কি দেখছেন ? ঐদিকে দেখুন, ঐ যে জানলার বাইরে আপনার জন্য রথ অপেক্ষা করছে "


বাইরে গেট এর কাছে একটা পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে | ফ্ল্যাট দরজা দিয়েও দুরদাড়িয়ে কয়েকজন কনস্টেবল আর একজন অফিসার ঢুকে এঅফিসার দৃঢ় কণ্ঠে বললেন " আপনি ধরা পড়ে গেছেন মিঃ ব্যানার্জি, ইউ আর চার্জড ইন এটেম্পট টু মার্ডার কেস ।"এইবার মিঃ ব্যানার্জি দিশে হারা হয়ে পড়লেন। এবার কি করবেন তিনি। সারেন্ডার করা যাবেনা। তবে কি পালাবেন ? কিন্তু মিথিলাকে ছেড়ে দেবেন তিনি ? নাহ কিছুতেই না। আজ তার জীবনের সব বিপদ তার জন্যেই । চিন্তায় ছেদ পড়লো।


"আপনি কি ভেবেছিলেন আমার বাড়িতে ঢুকে আমাকেই বিষ খাইয়ে যাবেন ? যখন আপনি সু-কেস টায় ধাক্কা খেলেন আর আমি ধরলাম আপনাকে, তখন ই আপনার কোমরে রিভলভার টা আমি টের পেয়েছিলাম | আর যখন আপনি আমায় কোলে তুলে আনলেন তখন এটা আমি সরিয়ে নিই | বিশ্বাস করুন আমি একটাও গুলি সরাইনি তাই প্লিজ কোনো চালাকি করার চেষ্টা আর করবেন নাঅফিসার বললেন " আপনি ঠিক সময়েই আমাদের ফোন করেছিলেন ম্যাডাম, আর কোনো চিন্তা করবেন না |"

" আমায় ক্ষমা করে দাও মিথিলা , আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি, তুমি তো সব ই জানো আমি জান প্রাণ লড়িয়ে দিয়েছিলাম এই কোম্পানির জন্য অথচ.... আমায় ক্ষমা করে দাও প্লিজ" প্রায় কেঁদে ফেললেন মিঃ ব্যানার" আমি ক্ষমা করার কেউ না অভিষেক বাবু , সে দায়িত্ত এখন কোর্ট এর | আপনার উপর- " মিথিলার কথা শেষ হলো না কারণ মিঃ ব্যানার্জি মিথিলার হাত থেকে রিভলভার কেড়ে নিয়ে তার দিকেই তাক করেছেন | কথার মাঝে কখন তিনি এগিয়ে এসেছেন কেউ ই খেয়াল করেনহিংস্র কণ্ঠে তিনি বলে উঠলেন " জেলে গিয়ে অসম্মান নিয়ে বাঁচার চেয়ে তোকে মেরে ফাসিঁতেই ঝুলবো আমি....মিথিলা |" শেষ দিকে প্রায় চেঁচিয়ে উঠলে" না... না... আপনি এটা করবেন না |আপনার একটা ছোট্ট ফুটফুটে মেয়ে আছে, সে কি জানবে ? তার বাবা খুনি ? "

পেছন থেকে অফিসার বললেন " বন্দুক ফেলেদিন মিঃ ব্যানার্জি | সারেন্ডার করুন | আপনার শাস্তি কমে যাবে |"


মিথিলা একটু ঘাবড়েছে " ভুল করবেন না অভিষেক বাবু | ফেলে দিন ওটা | আপনার একটা পরিবার আছে | তাদের কথা ভাবুন |"" আর কারোর কথা ভাবার সময় নেই আমার হাতে...ইওর কাউন্টডাউন স্টার্টস নাও।.....থ্রি...টু...ওয়ান।"কানফাটানো একটা গুলির শব্দ........।


থানায় বসে অফিসারের সাথে কফি খাচ্ছিল মিথিলা ।" সত্যিই ম্যাডাম আপনার তুলনা নেই।ঐরকম পজিশনে মাথা ঠান্ডা রেখে আপনি যেভাবে হ্যান্ডেল করলেন, সত্যিই দেখার মতো।"


মিথিলা হালকা হাসলো।


"আপনি যদি ঠিক সময়ে বালিশের নিচ থেকে ছুরি টা বের করে বেডসাইড সুইচবোর্ডের ফিউজ টা উড়িয়ে না দিতেন তাহলে পয়েন্ট ব্ল্যান্ক রেঞ্জ থেকে গুলিটা আপনাকে কিছুতেই মিস করতোনা |" হঠাৎ কি ভেবে বললেন " আচ্ছা উনি তো আপনার খাবারে সোডিয়াম সায়ানাইড মিশিয়ে ছিলেন আর আপনি সেটা খেয়েও ছিলেন তা"অফিসার আপনি অনন্ত সেনের নাম শুনেছেন ?"


" আপনি কি ম্যাজিশিয়ান অনন্ত সেনের কথা বলছেন যিনি আর তার স্ত্রী বছর পাঁচেক আগে একটা রোড এক্সিডেন্ট এ মারা যান ?"" ইয়েস, উনি আমার বাবা ছিলেন, ছোটবেলা থেকে আমার ম্যাজিকের দিকে ঝোক না থাকলেও কিন্তু বাবা আমায় জোর করে অনেক কিছু শিখিয়ে ছিলেন, তাই হাত সাফাই টা আমি ভালোই পারি | আসলে আমি যখন খাবার অর্ডার দিছিলাম তখন আমি কিছুটা আঁচ করেই তিনজনের খাবার অর্ডার করি , আমি তিন প্লেট ই সাজিয়ে ছিলাম একটা শুধু সরিয়ে রাখা ছিল| অভিষেক বাবু নিজের কাজ সারার পর ওনাকে কথায় কথায় অন্যমনস্ক করে আমি প্লেট টা বদলে দিয়েছিল" ওহ আই সি, কিন্তু আপনি তো আমাদের অনেক আগেই ফোন করেছিলেন | আপনি আগে থেকেই কিভাবে বুঝলেন উনি আপনাকে -"


" আজ সকালেই অভিষেক বাবুর কেবিনে যাওয়ার সময়ে ওনার ফোনে রিভলভার অর্ডার করার কথাটা শুনে ফেলছিলাম, তাই ওনার হঠাৎ আগমনের সময় থেকেই আমি জানতাম উনি আমার বাড়ি কি জন্য এসেছেন, তবে একটা বিষয়ের জন্য অভিষেক বাবুকে ধন্যবাদ না জানিয়ে পারছিনা, এই কনকনে শীতে উনি আমার জন্য গোটা এক বোতল রেড ওয়াইন গিফট করে গেলেন " বলেই সশব্দে হেসে উঠলো মিথিলা |











Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics