নয়নের মাঝখানে নিয়েছ যে ঠাঁই
নয়নের মাঝখানে নিয়েছ যে ঠাঁই
সকাল থেকেই বৃষ্টিভেজা আকাশ টার মত মুখ ভার হয়ে আছে রিয়ার। আর একটু পরেই রাত বারোটা বাজবে। এবারেও দীপ তাকে প্রথম উইশটা হয়তোবা করবে, কিন্তু প্রতিবারের মত আড়ম্বর করে নয়। কী যে ছাই করোনা মরোনা এলো, লকডাউন আর গৃহবন্দী দশা- যত্তসব বিচ্ছিরি ব্যাপার। রিয়া হলদিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ফোর্থ ইয়ারের ছাত্রী, জলপাইগুড়ি মেয়ে। যবে থেকে কলকাতায় পড়তে গেছে তার দুমাসের মধ্যেই নন্দনে আলাপ হয় কবি সাংবাদিক দীপের সঙ্গে। হিরোটাইপ রোমান্টিক দীপের প্রেমে ভেসে যেতে তারও বেশি সময় লাগেনি। প্রতিবছর এই দিনটায় দীপ তাকে হয় আশেপাশের কোন ডিস্কে বা একদিনের জন্য সমুদ্রে নিয়ে যায় আর ধুমধাম করে সেলিব্রেট করে তার বার্থডে। এবার লকডাউনের জন্য তাকে থাকতে হচ্ছে জলপাইগুড়িতে আর দীপ সুদূর কলকাতায়। সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং আর লকডাউন তাই আসার উপায় তো নেইই। অগত্যা ভিডিও কলেই হবে জন্মদিন পালন। ভালোবাসা থাকলে গাছপালা আর রেস্তোরাঁ সব এক হয়ে যায়, সান্ত্বনা দিল সে নিজেই নিজেকে। আর তাছাড়া খুব তাড়াতাড়ি তো বিয়েও তাদের, শুধু রিয়ার পরীক্ষা টা শেষ হবার অপেক্ষা। কিন্তু গা টা গুলিয়ে আসছে কেন তার আজকাল মাঝেমধ্যে ই। বোধহয় সকালের মায়ের হাতে তৈরি লুচি পায়েসটায় অ্যাসিডিটি হলো। কিন্তু না, আবার বমি। আবার আবার... গত চারদিনে এই নিয়ে আট দশবার। পিরিয়ড ও কিন্তু বন্ধ দেড়মাস থেকে, তবে কী সে !!! দুমাস আগে দীঘায় আসার দিন ভোরে কি প্রোটেকশন নেওয়া হয়েছিল??? মনে পড়ছে না তার।
রাত বারোটায় হৈ হৈ করে ভিডিও কল এলো দীপের। কেঁদে ফেলল রিয়া, দীপ ভাবল, আদুরে কান্না, রিয়া ফোন কেটে দিয়ে মেসেজ করল, " নয়ন সন্মুখে তুমি নাই, নয়নের মাঝখানে নিয়েছ যে ঠাঁই... আর শুধু নয়ন কেন, আমার শরীরেও"... মেসেজ টা পড়ে চমকে উঠল দীপ। এটা তো সে চায়নি।