নিশিরাতের রহস্য
নিশিরাতের রহস্য
একবারের কথা, পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনের এক ছোট গ্রামে বাস করত এক কিশোরী—মেঘলা। মেঘলা খুবই কৌতূহলী, বই পড়তে ভালোবাসে, আর সবচেয়ে বেশি পছন্দ করত চাঁদের আলোয় একা হাঁটতে।
একদিন রাতে, পূর্ণিমার আলোয় চারপাশ যেন রূপোর মত ঝলমল করছিল। মেঘলা গ্রামের শেষ মাথার পুরনো বটগাছের পাশে হাঁটছিল। হঠাৎ একটা নরম আলো তার চোখে পড়ল। সে থেমে গেল।
গাছের গুঁড়ির পাশে একটা ছোট্ট প্রদীপ জ্বলছিল, যার আশেপাশে কেউ ছিল না। মেঘলা ভয় না পেয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল। প্রদীপের পাশে রাখা ছিল একটা পুরনো কাঠের বাক্স। বাক্সটা খুলতেই সে অবাক! ভিতরে ছিল একটা হাতলবিহীন ঘড়ি আর একটা ছোট্ট চিরকুট।
চিরকুটে লেখা ছিল—
“যে সময়ের মূল্য বোঝে, সেই-ই অতীতের দরজা খোলার সাহস রাখে।”
মেঘলা ঘড়িটা হাতে নিল, আর মুহূর্তেই চারপাশের সবকিছু ঘোলা হয়ে গেল। সে চোখ মেলল এক অদ্ভুত জায়গায়—একই গ্রাম, কিন্তু ১০০ বছর আগের শান্তিনিকেতন! মানুষজন অন্যরকম পোশাকে, রাস্তায় ঘোড়ার গাড়ি চলছে, আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং আশ্রমে হেঁটে যাচ্ছেন।
মেঘলা অভিভূত হয়ে গেল। সে বুঝল, এই ঘড়ি অতীতে যাওয়ার টিকিট। কিন্তু অতীতে গিয়ে সে কী করবে? সে ভাবল, এই সুযোগে সে ইতিহাসের হারিয়ে যাওয়া কাহিনিগুলো জানবে, এমনকি তার দাদু-ঠাকুমার শৈশবও দেখে আসবে।
কিন্তু একটা শর্ত ছিল—ঘড়ি ফিরে আসার পথ মাত্র একবারই খুলবে।
মেঘলা অনেক কিছু দেখল, শিখল, লিখে রাখল একটা নোটবুকে। আর যখন সময় এল ফিরে আসার, তখন চুপচাপ ফিরে এল নিজের সময়ে।
আজও, মেঘলা বড় হয়েছে, ইতিহাসবিদ হয়েছে। কিন্তু সেই নোটবুক আর সেই প্রদীপটা সে যত্ন করে রেখে দিয়েছে তার ব্যক্তিগত সংগ্রহে। মাঝে মাঝে, চাঁদের রাতে, সে আবার বটগাছটার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়, যদি আবার অতীতের দরজা খুলে যায়…
শেষ।
