মথ
মথ


মুখোমুখি ফ্ল্যাটবাড়ির দুই কমপ্লেক্সের দেশলাই খোপের মতো দুই বারান্দা।সেই বারান্দায় রোজ বিকেল সাড়ে চারটেয় দেখা হয় তাতাই আর তিতলির।তাতাই তিতলির থেকে চোদ্দ দিনের বড়ো।দুজনেই ছয়ে পড়বে এইমাসে।
এখন বাইরে বেরনো যায় না।কড়া নির্দেশ।বেরোলেই একটা ভয়ঙ্কর রোগ নাকি চেপে ধরছে মানুষকে।এই ঘটনা ঘটার আগে এই সময়টা ছিল নিচের বেসমেন্টে তাতাই আর তিতলির খেলার সময় ।থামে থামে ডাঙা লিখে কুমির ডাঙা।এখন সে উপায় নেই।ঘরে মা টিভি দেখছে।বাবা ল্যাপটপে কাজে ব্যস্ত ।সুতরাং বারান্দায় দেখা হয় ওদের।ঠিক এইসময়টাতে।
-কীরে তিতলি,কেমন আছিস?
-ভালো।তুই?
-আমিও ভালো।আমি ওয়ানে উঠে গেছি জানিস।বাপির ল্যাপটপে স্কুল থেকে রিপোর্ট পাঠিয়েছে।
-আমিও।আমার এ সেকশন।তোর?
-আমার সি।কিন্তু কী করে স্কুল যাবো।সব পড়াশুনো তো মোবাইলে করাবে বলছে।
-হ্যাঁ ।কিন্তু পিটি ক্লাস?ওটা কী আর মোবাইলে হয়?তখন খেলে নেব।
-তোর মুখোশ আছে?আমার চারটে মুখোশ।বাপি দিয়েছে।একটাতে আয়রনম্যান আঁকা
-আমার একটাই আছে।রেখে দিয়েছি।স্কুলে গেলে পরবো।
-জানিস,আমার ঘরে একটা পিউপা হয়েছে।
-সেকীরে।আমার ঘরেও।আগে শুঁয়োপোকা ছিল।
-দেখবি আমার আর তোর জন্মদিনে হুশ করে ওরা প্রজাপতি হয়ে যাবে।
-নারে।দিদি বলেছে।আজকাল আর কেউ প্রজাপতি হয় না।সবাই মথ হয়ে যায় ।তোরটাও দেখবি,মথই হবে।
দুজনেই একটু মুখ কাচুমাচু করে থাকে।অন্য বারে জন্মদিনে কতো মজা হয়।পার্টি হয়।
এবারে তো কিছুই হবে না।ভিতর থেকে দুজনেরই ডাক আসে।সময় শেষ।
টাটা করে ঘরে চলে যায় তাতাই আর তিতলি।মথ হয়ে ওঠবার অপেক্ষা করতে থাকে।