STORYMIRROR

ভূমি কন্যা

Romance Fantasy Others

4  

ভূমি কন্যা

Romance Fantasy Others

মনকেমনের সংযোগ

মনকেমনের সংযোগ

4 mins
354

-- দিশা! আজ থেকে পথটা তাহলে আলাদা হয়েই গেল?

-- তা হয়তো হওয়ারই ছিল অর্ক...

-- হুঁ সে ঠিক, ভালো থেকো... মাঝে মধ্যে কথা বলো, সম্ভব হলে।

-- আচ্ছা বেশ।

-- একটা অনুরোধ ছিল, রাখবে?

-- বলো...

-- আজ একসাথে বাড়ি ফিরবে, তারপর নাহয় আমার বাড়ি থেকেই আমার বাড়ির লক্ষ্মীকে সাদরে বিদায় করবো।

-- আচ্ছা বেশ।


রাত আটটা বাজে। কোর্ট চত্বর থেকে বেরোতে পাঁচটা বেজেই গিয়েছিল। দিশা তার প্রাক্তন স্বামী অর্কর বাড়ি যাবে কি না, এই দোটানায় পড়ে কিছুটা সময় অতিবাহিত করে ফেলেছে গঙ্গার ঘাটে বসে। তার প্রাক্তন স্বামী এখনও তার সুরক্ষার দায়িত্ব পালনে ব্রতী, একা ছাড়েনি তাকে। দেখতে দেখতে একটা বছর কিভাবে যে কেটে গেল বুঝতেই পারেনি দুজনে। 


বিয়েটা করার ইচ্ছে ছিল না দিশার। সে অন্য এক ছেলেকে ভালোবাসতো কিন্তু ভালো পাত্র পেয়ে জোর করেই বিয়েটা দিয়েছিল তার বাবা-মা। দিশা সেই অভিমানে বিয়ের পর থেকে আর বাপের বাড়ি যায়নি। অর্ককে সে কোনোদিন মেনে নিতে পারবে না সেটা সে আগেই জানিয়ে দিয়েছিল, বিয়ের কিছুদিন পরই ডিভোর্স ফাইল জমা দেয় কোর্টে আর আজ ডিভোর্সটা সাকসেস হয়।


তাদের এই এক বছরে স্বামী স্ত্রীর জৈবিক সম্পর্ক গড়ে না উঠলেও বন্ধুত্ব খুব ভালো মতোই হয়েছিল। অর্ক আশা করেছিল এক বছরে হয়তো কিছুটা হলেও সঠিক স্থানে দাঁড়াবে, সে মেয়েটার কথার বিচক্ষণতায়, ঠোঁটের হাসিতে, ভাসা ভাসা কালো চোখগুলোর গভীরতায় কখন যে ডুব মেরেছে বুঝতেই পারেনি। বন্ধুত্বের থেকেও বেশি কিছু সে চাইতো কিন্তু বারবার নিরাশ হতো। দিশা হয়তো কখনই বুঝতেই পারত না তার চিরাচরিত ঠোঁটের হাসির গভীরে এক মুঠো দুঃখ কখন ছড়িয়ে দিত, তার প্রেমিকের নানান রকম প্রসঙ্গ তুলে।


আজ বড্ড বেশী চঞ্চল হয়ে উঠেছিল অর্কর অবুঝ হৃদয়টা। ডিভোর্স ফাইলটাই সই করতে গিয়ে মনে হচ্ছিল, “কলমটা যদি এখানেই থেমে যেত, কি এমন ক্ষতি হতো! হয়তো ভালই হতো, নাইবা তার প্রাণপ্রিয় স্ত্রীর ভালোবাসা পেল, কাছে তো থাকবে... কিন্তু ভাগ্য! ভাগ্য সেই সাথ দিল না, কলমটা থামলো না কিছুতেই, একটা কলমের আঁচড় একটা সম্পর্কের ইতি টেনে দিল।"


অর্ক তার প্রাক্তন স্ত্রীর সামনে বসে এইসবই ভাবছিল এতক্ষণ। দিশা যে কোন ভাবনায় মগ্ন সেটা তার মুখ দেখে বোঝা যায় না। হয়তো সে আজ খুব খুশি, তার বহুদিনের আপন করে রাখা পুরুষটির কাছে সে পুনরায় ফিরতে পারবে এই ভেবে। অর্কর মাঝে মাঝে খুব হিংসে হয়, দিশার প্রেমিকের উপর। মাঝে মাঝে তার মনে হয় স্বার্থপর হয়ে যায়, নিজের স্ত্রীকে অন্য কারোর কাছে কেন দেবো এই ভেবে। কিন্তু যতই হোক, মানুষের মনকে তো বাঁধা যায় না, নিজের কাছের মানুষদের কে না ভালো চাই, তাই হয়তো সেও নিজের কথা না ভেবেই দিশাকে নতুন পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে।


দিশার বরাবরই আত্মসম্মানটা খুব বেশি, বোঝে অর্ক। তাই হয়তো দোটানায় পড়ছে এখন কোথায় যাবে এই ভেবে! তাই সে ইতস্তত করে বলেই ফেলল, আজ একসাথে বাড়ি ফিরবে। আজ রাতটাই তো সামনে পাবে মেয়েটাকে, তারপর কে কোথায় থাকবে তার কি ঠিক আছে! আর হয়তো কোনোদিন দেখা হবে না। তাই আজকের সান্নিধ্যটা সে হারাতে চাই না।


-- অর্ক, চলো। ট্যাক্সি ড্রাইভার অনেকক্ষণ থেকে দাঁড়িয়ে আছে।

-- হুঁ, হ্যাঁ হ্যাঁ চলো।

-- তোমার বাড়ি নিয়ে যেতে ইতস্তত করছো নাকি?

-- এ মা, না না...

-- কোন খেয়াল মগ্ন ছিলে?

-- কিছুনা, ওঠো... আমি সামনে বসছি।

-- কেন, আমার পাশে বসবে না আজ!

-- তুমি কমফোর্ট ফিল করবে কি না!

-- আমি তো বলছি, বসো আমার পাশেই।

-- আচ্ছা, যখন বলছো তখন...

-- থাক, আর কিছু বলতে হবে না।


ট্যাক্সি তার গতিতে চলতে শুরু করেছে। মহানগরীর জ্যাম পেরিয়ে বাড়ি পৌঁছাতে তাদের এখন প্রায় দুই ঘণ্টা সময় তো লেগেই যাবে। এই ভেবেই অর্ক সিটে এলিয়ে দিল গা টা। সারাদিনের দৌড় ঝাঁপ, মানসিক চাপের কারণে কিছুক্ষনের মধ্যেই চোখ বুজে এলো ঘুমে।


দিশা কাল থেকে এক নতুন জীবনে পা রাখবে। এই উত্তেজনা নাকি ভয়ে সে নিজেকে স্থির রাখতে পারছে না। কখনো প্রশ্ন উঠছে নিজে নিজেই, “যার জন্য সুখের সংসারের ইতি টানলাম সে মেনে নেবে তো!" উত্তর নেই... হটাৎ করেই তার চোখ চলে গেল পাশে বসে থাকা মানুষটির দিকে। দিশা মানুষটির কাজকর্মে, তার দায়িত্ত্ববোধে, কর্তব্যে মোহিত হয়নি তা নয়। তবে কোথাও যেন বহুদিন আগে প্রতিশ্রুতি দেওয়া মানুষটির অপেক্ষারত মুখটা মনে করে তাকে ভুলে যাওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু আজ সব প্রতিশ্রুতি ছিন্ন করে এতোদিন যে মানুষটি পাশে থেকে আগলে রেখেছে তার কাছেই থেকে যেতে ইচ্ছে করছে, কোথাও গিয়ে মনে হচ্ছে সামনে থাকা মানুষটিকে ছেড়ে সে ভালো থাকবে তো! বোঝে দিশা, অর্কর ঠোঁটের হাসির গভীরে লুকোনো ক্ষতটা, কিন্তু সে নিরুপায়। আর কিছু ভাবতে পারলো না দিশা, সামনে থাকা মানুষটির দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে চোখের কোন বেয়ে দু ফোঁটা জল নিজে থেকে বেরিয়ে গেল। কিসের জন্য তা জানা নেই, সহানুভূতি নাকি কোনোদিন অর্কর জন্য তার মনে দুর্বলতা তৈরি হয়েছিল! 


কিসের ঘোরে যেন দিশা পাশের মানুষটির ঘুমন্ত মুখশ্রীটা বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরলো। কপালে এক জোড়া ঠোঁটের স্পর্শ দিল, তারপর তার দুই চোখ থেকে অবিরত বারিধারা বয়ে যেতে লাগলো। মনে মনে সে বলল, “তোমার জন্য কখনই কিছু করতে পারলাম। তুমি আমার জন্য যতটা সেক্রেফাইজ করেছো তার একটুও তোমায় ফিরিয়ে দিতে পারবো না, ভালো থেকো প্রিয়। তোমার মতো করে কখনও ভালোবাসতে পারবো না জানি, তবুও অন্তত একজন বন্ধু হিসেবে তোমার ভালো সবসময় চাই। কাল কি হবে জানিনা, তবে তুমি আমার মনে সর্বদা বাস করবে। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তোমায় যেন ভালো রাখে, তোমার জীবনে এমন এক মেয়ে আসুক যে তোমায় খুব ভালোবাসবে।" আর কিছু বলতে পারলো না দিশা, দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে কান্নাকে আটকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে গেল।


(পড়ে বলুন তো সকলে কেমন হয়েছে? আপনারা কি এর আরো পর্ব চান, তাহলে কমেন্টে অবশ্যই জানাবেন।)




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance