The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

Pintu Naskar

Tragedy

3.8  

Pintu Naskar

Tragedy

মহাসপ্তমী (শারদ সংখ্যা)

মহাসপ্তমী (শারদ সংখ্যা)

3 mins
561


পারমিতা আর ঠাকুর দেখতে বেরোয় না। পুজোর পাঁচটা দিনই সে তার হলুদ জানালাটার গ্রীলে মাথা ঠেকিয়ে বসে থাকে, আর শুনতে থাকে ঢাকের আওয়াজ। কেবলমাত্র বিজয়ার রাতেই সে মিষ্টিমুখ করতে যায় পাড়ার মন্ডপে। একে একে সব ঠাকুরকে মিষ্টি খাওয়ানোর পর সে এসে দাঁড়ায় মহীষাসুরের সামনে। দানবের মত বীভৎস মুখটার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে। চোখ জলে ভরে আসে পারমিতার। কোনোরকমে মহীষাসুরের মুখে সন্দেশ গুঁজেই সে সরে আসে। চোখে জল নিয়ে সে একটাই প্রার্থনা করে প্রতিবছর, " সমাজের সকল কীটগুলোকে শাস্তি দিও মা।" 

  ছোটবেলায় আর পাঁচটা বাচ্চার মতোই পারমিতা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকত শরতের ঢাকের আওয়াজের। নতুন জামার গন্ধ, পাড়ার প্যান্ডেলে বাঁশের খুঁটি বাঁধতে দেখা, মহীতোষ কাকার প্রতিমা নির্মাণ - এসবের মধ্যেই কীভাবে যে দিন কেটে যেত, টেরই পেত না পারমিতা। পঞ্চমী আসতে না আসতেই বাবার কাছে ঠাকুর দেখতে যাওয়ার বায়না! বাবার আঙুল ধরে সে ঘুরবে মন্ডপে মন্ডপে; ফুচকা খাবে মনের সুখে, আর ঝগড়া বাঁধাবে ফাউ ফুচকাটা না পেলে; রাস্তার পাশের ছাতিম গাছের তলায় দাঁড়িয়ে ঘ্রাণ নেবে প্রান ভরে... আর বাড়ি ফিরে মাকে গল্প শোনাবে সব।

   দেখতে দেখতে পারমিতা ক্লাস নাইনে উঠে গেল। সে বছরও পাড়ার দূর্গা পূজা ধুমধাম করেই হবে। বন্ধুদের সাথে বেরোলেও, সপ্তমীর দিনটা তার বাবার সাথেই বাঁধা। বাবার হাত ধরে বিকেল থেকে সন্ধ্যে সে হেঁটে বেড়াবে মন্ডপ থেকে মন্ডপে। সে বছর ভীড়টা একটু বেশিই হয়েছিল পাড়ার মন্ডপে। রাস্তার দু'পাশে বাঁশ বেঁধে একটা প্রবেশ পথ, আর একটা বেরোনোর পথ করা হয়েছিল। শক্ত করে বাবার হাত চেপে ভীড়ের মধ্যে লাইন দিতে থাকে পারমিতা। লোকজনের ঘামের সাথে বিভিন্ন রকমের সুগন্ধি মিশে বাতাস ভারি করে তুলেছে - নিঃশ্বাস পর্যন্ত নেওয়া যাচ্ছে না ঠিক করে। বাবার পাঞ্জাবির হাতায় মুখ গুঁজে থাকতে হয়। প্যান্ডেলের সামনে দড়িটা নামালে একটু করে এগোনো, তারপর আবার দাঁড়িয়ে থাকা অনন্তকাল। এর মধ্যেই একদল অল্প বয়সী ছেলে কাগজের বাঁশি বাজাচ্ছে, আর লোকজনের বিরক্তি উপভোগ করছে। রাস্তার পাশের লাইটিং এর হনুমানটা যেন মুখ ভ্যাংচাতে থাকে পারমিতার দিকে। হঠাৎ একটু অন্যরকম অনুভূতি হল তার শরীরে। প্রথমটায় ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি সে। আবার কিছুক্ষণ পরে সেই একই অনুভূতি। পারমিতা বুঝতে পারে তার পেটের কাছটায় একটা হাত। অবাক বিস্ময়ে সে কাঁপতে থাকে - কি করবে বুঝতে পারে না। ভীড়ে তো নড়াচড়া করার অবকাশ পর্যন্ত নেই। পাথরের মত দাঁড়িয়ে থাকে বাবার হাতে মুখ গুঁজে। হাতটা এবার ধীরে ধীরে ওপরের দিকে উঠতে থাকে পেট ছেড়ে। পারমিতা কেঁদে ফেলে বাবার হাতায়। তার মাথার কাছে মুখ নামিয়ে বাবা বলে, "এত ঘামছিস! রুমালে মুখটা মুছে নে একবার।" কান ফাটানো মাইকের শব্দে চাপা পড়ে যায় পারমিতার গোঙানি। 

  সেই বছরই ছিল পারমিতার শেষ মন্ডপ ঘোরা। তারপর বছর গড়িয়েছে - বিয়ে হয়েছে - সংসার হয়েছে। এখন সে তার মরচে ধরা হলুদ জানালাটা নিয়েই খুশি। ছোট্ট একটা মেয়েও আছে তার - উমা। সেও ঠিক মায়ের মতই হয়েছে। বাবার সাথে ঠাকুর দেখতে বেরোনো চাই প্রতিবছর। পারমিতার ভয় হয়, কিন্তু কিছু বলতে পারে না মেয়ের ফুটফুটে মুখের দিকে তাকিয়ে। 

  আজ মহাসপ্তমী। পারমিতা মেয়েকে সাজাতে বসেছে বিকেল হতে না হতেই। উমা তো বকেই চলেছে - কোন মন্ডপে ঘুরবে, কি খাবার খাবে, কোন খেলনাটা সে আগের বছর দেখে রেখেছে, আরও কত কি... হলুদ পাঞ্জাবীটা পরে বাবা উমাকে নিতে এলে, পারমিতা করুন সুরে স্বামীকে বলে, "সাবধানে রেখো।" দুগ্গা দুগ্গা বলে বিদায় দেয় বাবা-মেয়েকে। 

  পারমিতা ফিরে আসে তার জানালাটার কাছে। সামনের রাস্তাটা ঝলমল করছে লাইটের আলোয়। পাড়ার মন্ডপ থেকে ভেসে আসছে, "বাজলো তোমার আলোর বেনু..." মেয়েটা না ফেরা পর্যন্ত আর অন্য কোনো কাজে মন বসবে না। রাস্তায় পুজোর ভীড় দেখতে থাকে পারমিতা। কত আনন্দ-উচ্ছ্বাস, হাসি-ঠাট্টা, আজ উপচে পড়ছে রাস্তার ওপর! কিন্তু এর মধ্যেই কত পাপ লুকিয়ে আছে, কত মুখোশ সুযোগ খুঁজছে তার হিসেব নেই। একবার কেঁপে উঠল পারমিতার গোটা শরীর।

  রাত দশটা নাগাদ উমা দৌড়ে এসে মায়ের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে পারমিতা। "জানো মা, আজ কি হয়েছে!" চোখ বড়বড় করে বলে ওঠে উমা। ভুরু কুঁচকে মেয়ের উজ্জ্বল নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকায় পারমিতা। "একজন মহিলার পার্স চুরি করে পালাচ্ছিল দাসপাড়ার রতন কাকুর বড়ো ছেলে রাজা। রাস্তার লোকেরা ধরে ফেলে সে কি মারল ওকে! শেষ পর্যন্ত ক্লাবের ছেলেরাই এসে ছাড়িয়ে নেয়।" পারমিতা উত্তর দেয় না। ঠোঁটের কোণে একটু হাসি নিয়ে জানালার বাইরে তাকায়। গ্রীলের ফাঁক দিয়ে সপ্তমীর চোখ ধাঁধানো রঙিন আলো এসে পড়ে তার মুখের ওপর। 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy