শিপ্রা চক্রবর্তী

Inspirational

3  

শিপ্রা চক্রবর্তী

Inspirational

মানুষ রূপি ভগবান

মানুষ রূপি ভগবান

2 mins
236



রাতের গভীর নিস্তব্ধতাকে ভেদ করে ছুটে চলেছে গাড়ি তার গন্তব্যের উদ্দেশ‍্যে। গাড়ির পিছনে বসে ক্লান্ত শরীর টাকে সিটের সাথে এলিয়ে দিয়েছে রঞ্জন। এসির ঠান্ডা এবং সারাদিনের ক্লান্তিতে চোখটা লেগে এসেছিল রঞ্জনের। 


-হঠাৎ ড্রাইভার বলে উঠল, স‍্যার. বাড়ি এসেগেছে।


-রঞ্জন শুধু হুম.... বলল। 


তারপর নিজের ব‍্যাগটা নিয়ে এগিয়ে চলল বাড়ির ভিতরে যাওয়ার জন‍্য। ব‍্যাগ থেকে ডুপ্লিকেট চাবিটা বার করে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকল। বাড়ির ভিতেরের মানুষজন তখন গভীর নিদ্রায় মগ্ন। অন‍্যদিন পূজা ঠিক সোফার ওপর গুটিসুটি হয়ে অর্ধঘুম অবস্থায় বসে থাকে রঞ্জনের ফেরার অপেক্ষায়। কিন্তু আজ দেরী হবে বলে রঞ্জন নিজেই পূজাকে বারন করেছে অপেক্ষা করতে। আলো জ্বেলে দেওয়াল ঘড়িটার দিকে চোখ বুলিয়ে দেখল দুটো বাজে। রঞ্জন আর সময় নষ্ট না.... করে ঢুকে পড়ল ওয়াশরুমে। ঈষদুষ্ণ জলে শরীর টাকে ভিজিয়ে সারাদিনের ক্লান্তিটা দূর করতে লাগল। ফ্রেস হয়ে ধীর পায়ে বেডরুমে ঢুকলো যাতে কারোর ঘুম না ভেঙ্গে যায়। 


ঘুমন্ত মেয়ের মুখটার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল বেশ কিছুক্ষন। তারপর নিজের মনে নিজেই বলে উঠল......., 


সত‍্যি..... আমার ছোট্ট মেয়েটা আমার চোখের সামনেই কিভাবে বড় হয়ে গেল আমি বুঝতেই পারলামনা। ও.... তো ভালো করে ওর বাবাকে কাছেই পেলনা। আমার প্রতি নিশ্চয়ই ওর অনেক অভিমান জমে আছে। অবশ‍্য জমে থাকরই কথা! এই সারাদিন নার্সিংহোম আর পেশেন্ট দেখতে দেখতে সময় এর তালে তাল মিলিয়ে দিনগুলো যে... কি ভাবে ফুরিয়ে যায় বুঝতেই পারিনা! ঘুমন্ত মেয়ের কপালে একটা স্নেহের পরশ দিয়ে রঞ্জন মৃদু স্বরে বলে উঠল, আমাকে ক্ষমা করিস বেটা। ডাক্তার হওয়ার সময় শপথ নিয়ে ছিলাম সবার আগে মানুষের প্রান, তাই প্রান বাঁচানোর জন‍্য যে.... আমাকে ছুটতেই হয়। জানি সব সময় সফল হতে পারি না....!! কত প্রান আমার চোখের সামনেই শেষ হয়ে যায় কিন্তু চেষ্টা করি আমার সবটুক দিয়ে, যদি সে.... ফিরে আসে। আর যখন কেউ মৃত‍্যুর মুখ থেকে ফিরে হাসিমুখে বাড়ি ফেরে, তখন খুব ভালো লাগে মনে হয় আমি পেরেছি প্রান বাঁচাতে। সফল আমার ডাক্তার হওয়া। 


রঞ্জন ধীর পায়ে পূজার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়,এবং মনে মনে বলে ওঠে কতদিন তোমার সাথে বসে কথা বলার সময় হয়নি। কোথাও নিয়েও যাওয়া হয়নি ঘুরতে। সত‍্যি তোমাকে পেয়ে আমি ধন‍্য। তুমি সব সময় আমার পাশে আছ বলেই আমি এগিয়ে যেতে পারছি সামনের দিকে। তোমাকে বলা হয়ে ওঠেনা আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি, জানি না.... বললেও তুমি সেটা বোঝো। রঞ্জন ঘুমন্ত পূজার কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিতে যাবে ঠিকই তখনই রঞ্জনের ফোনটায় আলো জ্বলে উঠল।


-----------ফোনটা ধরে রঞ্জন ঘর থেকে বাইরে বেড়িয়ে গিয়ে বলে উঠল, হ‍্যাঁ.... বলো শুভ কি হয়েছে।


-----------ওপাস থেকে শুভ উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠল, স‍্যার পেশেন্টের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে, আপনি তাড়াতাড়ি আসুন।


----------রঞ্জন দৃঢ় কন্ঠে বলে উঠল ঠিক আছে আমি আসছি। 


ফোনটা পকেটে ভরে বেডরুমের দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে রঞ্জন আবার বেড়িয়ে পড়ল, ঠিক যে...... ভাবে এসেছিল সেই ভাবেই। 








Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational