Himansu Chaudhuri

Drama

2.5  

Himansu Chaudhuri

Drama

ক্রিসমাস গিফট

ক্রিসমাস গিফট

3 mins
1.7K


কালিম্পং-এর এই ইস্কুলটা একেবারে মন্দ নয়, অন্তত বিতানের তাই মনে হয়। সারাটা দিন বেশ ব্যস্ত থাকা যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশেন আপ হয়ে প্রেয়ার, তারপরে পড়াশোনা, ব্রেকফাস্ট, ক্লাস। মাঝে লাঞ্চ, আবার ক্লাস, তারপরে দু'ঘন্টা খেলা, ফের পড়তে বসা, আটটায় ডিনার, তারপরে লাইটস অফ। লম্বা ঘুম। প্রথম প্রথম ঘুম আসতে চাইতো না, বাড়ির কথা, বিশেষত মা'র কথা মনে পড়তো। এখন বোধহয় অভ্যেস হয়ে গেছে, আর সেরকম কিছু মনে হয় না।


অন্তত, বাবা মা'র রোজকার ঝগড়া, অশান্তি, জিনিসপত্র ছোড়াছুঁড়ি, আয়নার কাঁচ ভাঙা, অশ্রাব্য সব গালাগাল, এসবের থেকে তো রেহাই পাওয়া গেছে! ভুলতেই তো চায় বিতান। সব কিছু। বিতান বোঝে, ওই আয়নার কাঁচ ভেঙে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে তাদের সংসারটাও টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। তাই মা যখন ফোন করে বললো, "বিতান, ইউ আর আ গ্রোন আপ বয় নাও। ইউ শুড নো দ্যাট ইওর ফাদার অ্যান্ড আই আর গেটিং আ ডাইভোর্স। থিংস আর আ লিটিল বিট স্টর্মি হিয়ার। কুড ইউ স্টে পুট ইন ইওর হোস্টেল দিস খ্রিসমাস এন্ড ন্যু ইয়ার?"- তখন ও খুশিই হয়েছিলো। মা'বাবা দু'জনেই তো সকাল আটটায় বেরিয়ে যায়, রাত্তিরে কখন ফেরে, আদৌ ফেরে কিনা, অধিকাংশ দিনই বিতান বুঝতে পারে না। ওর কাছে কলকাতা আর কালিম্পং-এর মধ্যে কোনও তফাৎ নেই। নো বিগ ডিল, রিয়ালি।


তবে টার্ম টেস্টের পরে যখন হোস্টেল মোটামুটি ফাঁকা হয়ে গেলো, তার মতো গুটিকয় ছেলে শুধু পড়ে আছে, তখন ওর একটু ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো বৈকি। কিন্তু ফাদার আর ব্রাদাররা আছেন, আর এত রকম ফেস্টিভ্যাল এক্টিভিটি রয়েছে এখানে বড়দিন আর নিউ ইয়ার উপলক্ষে, যে, দু'দিনেই মন খারাপ ভ্যানিশ। রোজই স্পেশাল মেনু খাবারদাবারে। সেই একঘেয়ে পরিজ, বাটার টোস্ট আর ফ্রুটস নয়। রোস্টেড টার্কি, কেক, পেস্ট্রি আর কুকিজ খেয়ে, কয়্যারে গান করে, পুল আর বিলিয়ার্ডস খেলে, পিয়ানো বাজিয়ে, আর মরশুমি ফুলের বাগানে হৈ হৈ করে দিনগুলো কেটে যাচ্ছিলো তার। দেখতে দেখতে বড়দিন এসে গেলো এবার।


ক্রিসমাস ইভের রাত্তিরে বিতানের আবার একটু মন খারাপ হলো। গতবছরেও সান্টা তাকে একটা অর্গান আর একটা পিএস ফোর দিয়েছিলো, ক্রিসমাসের উপহার। সেগুলো বিতান এখানে নিয়ে আসেনি, অ্যালাও নয় বলে । বিতান তো এখন বড় হয়ে গেছে, ক্লাস সিক্সে পড়ে, বিতান জানে, সব মা'বাবারাই আসলে সান্টা হয়ে যান ক্রিসমাস ইভে। নয়তো একজন সান্টার সাধ্য কী দুনিয়া জুড়ে ঘুরে ঘুরে সবার মন রাখা?


শেষ ক'বছর তাই বিতান বড়দিনে কী চাই, সেই ইচ্ছেটা সুকৌশলে বাবামা'র কানে পৌঁছে দিতো। এবারে তো আর তা হবে না, বাবা'মা নিজেদের মধ্যে লড়াই করছে, আর আহত সৈনিকের মতো বিতান পড়ে রয়েছে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দূরে, বহুদূরে। কী নিয়ে বাবামা'র মনান্তর বিতান জানে না, জানতে চায়ও না, শুধু জানে বিতান কার কাছে থাকবে তা নিয়েও তাদের মধ্যে ঝগড়া চলছে। তার ক্লাস ফ্রেন্ড অনর্ঘ্য বলেছে, একে বলে কাস্টডি ফাইট। বোঝো, বিতানকে নিয়েই ঝগড়া, অথচ বিতানকেই কেউ জিজ্ঞেস করছে না ও কী চায়! ওকে জিজ্ঞেস করলে বলতো ও চায়, ঝগড়া না করে বাবা মা আবার হেসে কথা বলুক নিজেদের মধ্যে, বিতানের সাথেও, আর ওদের কুঁচকানো ভুরুগুলো অন্তত একটু সোজা হোক। আচ্ছা, যাদের বাবা'মা কাছে নেই, সান্টা কি অন্তত তাদেরকেও কিছু উপহার দেবে না বড়দিনে? বিতানের আবার খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে যে, সান্টা সত্যিই আছেন, ক্রিসমাসের আগের রাত্রে তিনি ঘুরে ঘুরে সব দুঃখী ছেলে মেয়েদের মুখে হাসি ফোটান। শুতে যাবার আগে তাই বিতান জানালায় একটা মোজা ঝুলিয়ে দেয়, আর চোখ বন্ধ করে কায়মনোবাক্যে সান্টার কাছে প্রার্থনা করে, আমার আর অন্য কিচ্ছু চাই না, সান্টা, বাবা'মাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও, একসাথে। আমি দু'জনের কাছেই থাকতে চাই, একজনের কাছে নয়।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama