Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!
Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!

Ankita Goswami

Tragedy Classics Crime

4.4  

Ankita Goswami

Tragedy Classics Crime

কলঙ্কিত প্রেম

কলঙ্কিত প্রেম

5 mins
462


কষ্টে, যন্ত্রণায় ছটফট করছে স্মিতা। মারাত্মক ব্যথায় সারা শরীর যেন তার অবশ হয়ে যাচ্ছে। শ্বাস নিতে অবধি অসুবিধা হচ্ছে তার। বিছানা থেকে উঠে যে বাইরের ঘরে যাবে তার উপায়ও নেই। একটু জল পেলে ভালো হতো, কিন্তু.... কিন্তু.... কেউ তার আওয়াজ শুনতেও পাচ্ছে না। আসলে জোড়ে চিৎকার করে সে তো ডাকতেও পারছে না কাউকে। শরীরের শক্তির অভাব যেন কণ্ঠস্বরেও প্রকাশ পাচ্ছে। ক্রমশ ক্লান্তির ঘেরাটোপে আচ্ছন্ন হয়ে যায় সে। সকলের অজান্তেই.....

------------------------------------------------------------------------

(মাস ছয়েক আগে)

"মা.... বেরোলাম।"

"আরে স্মিতা মা দাঁড়া একটু..."

"সময় নেই। Already getting late..."

"টিফিন কৌটোটা নে।"

মা রান্নাঘর থেকে দৌড়ে আসে-

"এই নে, নে....."

"দাও বাবারে!! তুমি না মা!! কি হবে একদিন টিফিন ছাড়া গেলে??"

"খালি পেটে থাকবি তুই আমি জানি। সেটা হবেনা।"

"আচ্ছা বাবা... আসি এবার।"

বলতে গেলে রোজ সকালটা এভাবেই শুরু হতো স্মিতাদের বাড়িতে। স্মিতা ও তার বাবা দুজনেই ১০টার মধ্যে বেড়িয়ে পড়তো আর তারপর সারাদিন তার মা বাড়িতে একাই থাকত। স্মিতা পেশায় অধ্যাপিকা। তার বিষয় বাংলা। স্বাভাবিকভাবেই সাহিত্যচর্চা তার বিশেষ পছন্দের। উল্টোদিকে তার বাবা একজন ডাক্তার। বলাই বাহুল্য, লেখাপড়ার সঙ্গে স্মিতাদের বাড়ির যোগাযোগ নিবিড়।

স্মিতা গত এক বছর ধরে সায়নের সঙ্গে সম্পর্কে ছিল। দুই বাড়িতেই তাদের সম্পর্কের কথা জানতো। সায়ন একজন ইঞ্জিনিয়ার। কলকাতার নামী বেসরকারি সংস্থায় কাজ করে সে। Social Networking Site-এর মাধ্যমে স্মিতার সঙ্গে তার আলাপ হয়েছিল। কিছুদিন প্রেম করেই বিয়ে করবে, এমনটাই ঠিক করেছিল তারা দুজন আর দুই পরিবারের কারুরই আপত্তি ছিলো না তাতে।

সায়ন ও স্মিতার স্বভাবজাত কিছু অমিল ছিল, যেমন সায়ন খুব খেতে ভালোবাসতো কিন্তু স্মিতা আবার figure conscious; সায়ন অতো বই পড়তে পছন্দ করতো না তবে স্মিতা পুরো উল্টো, বইয়ের পোকা সে। সায়ন ভালোবাসতো rock music আর স্মিতা মিষ্টি প্রেমের গান.... কিন্তু এই সবকিছু একরকম, সব সম্পর্কেই কমবেশি এরূপ বৈষম্য দেখা যায় দুজনের কিন্তু এখানে যেটা খুব বড়ো করে চোখে পড়বার মতো ছিল তা হলো শারীরিক চাহিদা। প্রেমে দৈহিক কামনা যে থাকবে তা স্বাভাবিক, বরং তা না থাকাটাই অস্বাভাবিক। কিন্তু সায়নের মধ্যে এই কামনা যেন ছিল মাত্রাতিরিক্ত। স্মিতার সাথে খুব যে ঘুরতে যেত, সময় কাটাতো সায়ন তা কিন্তু নয়। সবসময়ই তার ইচ্ছা থাকতো এমন কোথাও যাওয়ার যেখানে গেলে তারা নিভৃতে থাকতে পারবে। প্রেমের সম্পর্কের দিক থেকে বিচার করলে সেই চাওয়াও সঠিক কিন্তু তাই বলে শুধুই শরীর?? যেখানে সম্পর্কে থাকার অন্য কোনো দিক প্রকটই হয় না, সেখানে কেবলই শারীরিক সুখের আশা করা, এও কি সম্ভব?? স্মিতার কোনোদিন যে সায়নের এই স্বভাব আজব লাগতো না, তাও নয়, তবু... সে ভাবতো সায়ন তো বাড়িতেও জানিয়ে দিয়েছে। হয়তো ভালোবাসা থেকেই এরম করে তার প্রেমিক, এই ভাবতো স্মিতা।

এভাবেই বেশ কিছু মাস চলে যায়। তারপর হঠাৎ একদিন তুমুল অশান্তি হয় স্মিতা ও সায়নের। সেদিন সায়ন কথা দিয়েছিলো সময়মতো আসবে দেখা করতে। অনেকদিন পর একসাথে ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল ওদের। স্মিতা সেদিন ছুটিও নিয়েছিল কিন্তু সায়নকে ফোনে পাওয়াই যাচ্ছিল না আর যখন সে ফোনটা ধরেছিল তখন ঘড়ির কাঁটা রাত ১০টা ছুঁই ছুঁই। প্রচণ্ড রাগে, হতাশায় সায়নের উপর চিৎকার করতে শুরু করেছিল স্মিতা সেদিন। কিন্তু হঠাৎ সায়নের একটা কথাই চুপ করিয়ে দিয়েছিল স্মিতাকে- "দেখা করে কি হবে?? একটু ছুঁতে গেলেই তো কতো নাটক তোর!" তবে কি প্রেম মানে শুধুই শরীর?? অন্য কোনো ইচ্ছা স্থান পায়না সেখানে? চুপ করে গিয়েছিলো সেদিন স্মিতা। ফোন রেখে দিয়েছিল।

পরদিন সায়নের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল স্মিতার। সে ঠিক সময়মতোই গিয়েছিল যদিও, অনেক অভিমান নিয়ে। কিন্তু এ কি? পুরো বাড়ি ফাঁকা। বাড়িতে সায়ন একা ছিল তাও মদ্যপ অবস্থায়।

"কাকু কাকিমা কোথায় সায়ন?"

"বাড়িতে নেই। শুধু তুই আর আমি...."

"ওনারা কি জানতেন না আমি আসবো?"

"জানতেন কিন্তু...."

"কিন্তু কি???"

"কিন্তু আমি বলেছি তুই শেষ মূহুর্তে আসবি না বলেছিস। আর সেই শুনেই তারা গেছে পুজোর বাজার করতে।"

"কি?? তুই এই মিথ্যেটা বলেছিস?? কেন??"

"যাতে তোকে একা পাই...." বলেই স্মিতাকে জাপটে ধরেছিল সায়ন। মুখ থেকে তার বিশ্রী গন্ধ, স্বভাবে আমূল পরিবর্তন..... অবাক ও হতভম্ব স্মিতা সেই সময় শুধু নিজেকে সায়নের থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিল।

"তুই আর নিজের মধ্যে নেই সায়ন। ছাড় আমায়।"

"ছাড়বো বলে তো ধরিনি সোনা।"

অদ্ভূত চরিত্রের সায়নের থেকে কোনোমতে নিজেকে বাঁচিয়ে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলেছিল স্মিতা.... কিন্তু না.... শেষ রক্ষা হয় নি। সায়ন সব ব্যবস্থা করেই রেখেছিল। বাইরে পাহারায় ছিল কুন্তল, যাকে স্মিতা তার নিজেরও ভালো বন্ধু হিসেবেই চিনতো। স্মিতাকে দরজা খুলে পালাতে দেখেই কুন্তল তার পথ আটকায় ও পরে তাকে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেয় সায়নের বিছানায়। বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয় কুন্তল আর ভিতরে একা সায়নের সঙ্গে স্মিতা। আর তারপর?? তারপর সব শেষ....

হ্যাঁ, সেদিন সায়ন জোড় খাটিয়েছিল স্মিতার উপর। স্মিতার অনেক কাকুতি মিনতি আর কান্না সত্ত্বেও... আরো পরিষ্কার করে বলতে গেলে একজন প্রেমিক ধর্ষণ করেছিল নিজেরই প্রেমিকাকে। মূল্যই দেয়নি তার চোখের জলের, তার ভালোবাসার। শুধু তাই নয়, অকথ্য ভাষার প্রয়োগ আর বলপূর্বক দৈহিক সম্পর্কের জন্য সেদিন স্মিতার মন ও শরীর দুইই হয়ে গিয়েছিল ছিন্নভিন্ন। এমনকি কুন্তলও ছাড়েনি স্মিতাকে। সায়নের পাশবিক অত্যাচারের পর যখন স্মিতার পুরো শরীর, মন সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত তখন প্রায় চেতনাহীন স্মিতাকে পুনরায় ধর্ষণ করেছিল কুন্তল। আর কি পারে মেয়েটা?? অসহ্য মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণা তাকে শেষ করে ফেলেছিল। কিন্তু রক্ষা এটুকুই ছিল যে সায়নের বাবা-মা ফিরে গেছিলেন। হবু বৌমাকে ছেলের বিছানায় ঐভাবে অচৈতন্য ও অর্ধনগ্ন অবস্থায় দেখে আর ছেলেকে ঐভাবে মদ্যপ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তাঁরা বুঝতেই পেরেছিলেন কি হয়েছিল ফাঁকা বাড়িটায়। স্মিতার পরিবারের কাছে ক্ষমা চাওয়ার মুখও ছিল না তাঁদের তবু তাঁরা তাঁদের কর্তব্য পালন করেছিলেন। নিজের ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলেন ওনারাই আর স্মিতাকেও চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। স্মিতার বাড়ির লোককেও ওনারাই খবর দিয়েছিলেন সেদিন....

------------------------------------------------------------------------

এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বেশিদিন হয়নি। স্মিতার শরীর আজ দুর্বল মারাত্মক। ওই ঘটনা যেন তার শুধু দেহকে নয়, আঘাত করেছে তার আত্মাকে, তার বিশ্বাসকে। কোন মিথ্যের ছায়ায় বেঁচেছিল সে এতদিন? কাকে ভরসা করেছিল?? মুখোশের আড়ালে থাকা পশুগুলোকে চিনতে কি করে এতো বড়ো ভুল করেছিল সে?? যাকে নিজের সবচেয়ে কাছের মনে করেছিল, তার থেকে এতো বড়ো আঘাত পেতে হবে কোনোদিন দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি স্মিতা। ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে যেন চিৎকার করে এই প্রশ্নই করতে চায় সে আজ নিজেকে, তার পরিবারকে আর সমাজের সকলকে। কোথায় দাঁড়িয়ে ভালোবাসা, কোথায় আছে সম্মান নারীর? কোথায় সমাজ আজ পরিবর্তিত?

হয়তো কিছুদিন এই অসহ্য কষ্ট পেতে হবে স্মিতাকে। তারপর তার শরীর ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু তার হৃদয়? তার আত্মবিশ্বাস, তার প্রেমের উপর আস্থা??? সেসব কি পুরো ঠিক হবে?? তা হয়তো কেউই জানেনা...... এক কলঙ্কিত প্রেমের সাক্ষী হয়েই আজীবন বেঁচে থাকতে হবে স্মিতাকে।

                       


Rate this content
Log in

More bengali story from Ankita Goswami

Similar bengali story from Tragedy