খবরের কাগজ
খবরের কাগজ


"রহস্যজনক মৃত্যু"-হত্যা না আত্মহত্যা?
হ্যাঁ, সেদিনের খবরের কাগজে মোটা হরফে এটাই সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।
খুব ভোরে ওঠাটা স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে রণিতের, শেষ কয়েক মাসে। তাই সে তার সমস্ত কাজ সেরে পুরোনো সাইকেলটাকে সঙ্গী করে নিয়ে প্রতিদিন ভোরেই স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
বেকারত্ব, বাজে নেশা ও দেনার দায়ে তার জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠেছিল, সুন্দর করে বাঁধানো ফার্স্ট ক্লাসের ডিগ্রিটাও কাজে দেয়নি তার।
তাই বাধ্য হয়েই খবরের কাগজ বিলির কাজটা নেয় সে।
সেদিনও ভোরের দিকে সে নিজের অংশের কাগজ গুনে নিয়ে রওনা দেয় শহরের উদ্দেশ্যে।
পথটি সোজা স্টেশন থেকে নেমে রেললাইনের গা বরাবর গ্রামের প্রান্ত দিয়ে চলে গেছে শহরের দিকে।
আজ কেমন যেন একটা পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা বাহ্যিক না তার ভিতরের অস্বস্তির কারণে সেটা সে বুঝতে পারল না।
শরতের সকালে কিছুটা শীত ও কুয়াশার চাদর থাকে বটে কিন্তু তাতে মাঘের বুনন থাকে না, তাই তার সাইকেল নিয়ে যেতে খুব একটা অসুবিধে হচ্ছিল না। তবে কেন এই অস্বস্তি? পেছনে কেরিয়ারে বাঁধা ১৩২ টা কাগজে একটাই শিরোনাম কিন্তু জলজল করছে।
কিছুদূর গিয়ে সে দেখে, ডানদিক বরাবর শুকনো নর্দমা চলে গেছে, কালো, বড্ড নোংরা।এটাতো প্রতিদিন এখানেই থাকে,অনেকদিন থেকেই আছে তবে আজ তার কাছে এতটা স্পষ্ট কেন?
শেষ ২৪ ঘন্টায় এরকমই কিছু অযাচিত ও অবাঞ্ছিত জিনিস তার কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেছে।
এমনই একটা ভাঙা টেলিগ্রাফ খুঁটির পাশে এসে জোরে ব্রেক কষে দেয় রণিত। সাইকেলটা স্ট্যান্ড করে রেললাইনের দিকে এগিয়ে যায় ।
এই শীতলতার মাঝেও তার কপালে একটা ঘামের রেখা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে ।
সে ভাবল কী দরকার ছিল অজয়দার গতকাল ভোরে সশস্ত্র দাঁড়িয়ে থাকার?
সে তার টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি তো দিয়েছিল ।
হ্যাঁ,সেই তো পা পিছলে পড়ে যায় এখানে। সে তো ধাক্কা দেয়নি, সময়টা তখন ৬টা৫।
ভালো করে লক্ষ্য করলে পাথরের গায়ে মোছা মোছা রক্তের দাগ এখনো স্পষ্ট ।
আদৌ কী সেটা ভুল ছিল সে ভাবতে থাকে ।
ভালো করে চারিদিকটা একবার দেখে নেয় রণিত।
খবরের কাগজে লেখা সময়টা তার ঘড়িতে স্পষ্ট। দূর থেকে জোরালো বাঁশির শব্দ ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে, রেললাইনেও মৃদু কম্পন দৃশ্যমান ।
কয়েক মূহুর্তের মধ্যে যেন রেলগাড়ির চাপা কান্না কুয়াশার বুক চিঁড়ে বেড়িয়ে গেল, শুধুই কি কুয়াশার?
প্রশ্নটা করে উঠলো জড়তা ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাওয়া সাইকেলটা, বৃদ্ধের মতো নুইয়ে পরা টেলিগ্রাফের খুঁটিটা আর ফণীমনসার ঝোপটা।
রেললাইনে ঠিক একই জায়গায় লাল রংটা আবার স্পষ্ট হয়ে উঠলো ।
একটাই প্রশ্ন তখন প্রত্যক্ষদর্শীদের ইশারায় জীবন্ত "আত্মহত্যা না প্রায়শ্চিত্ত "?