👩‍🦰 জৈষ্ণভী ও আর্যাংশী

ভূতূড়ে পুতুল ( Haunted Doll ) নিয়ে নানা সময়ে বহু গল্প-কাহিনী প্রচলিত আছে । ভূতূড়ে পুতুল নিয়ে বহু চিত্রনাট্য, চলচ্চিত্র ও হয়েছে । যেমন :::::-----

বাংলায় খুব সম্প্রতি " অহল্যা " (২০১৫ ) নামে একটি সিনেমা হয়েছিল । 

হিন্দীতে ::= Papi Gudia ( 1996 ) 

          Paheli ( 2005 ) 

In English ::=

        Chucky ( Child's Play, 1988 ) 

     Annabelle ( The Conjuring 2013) 

 Billy the Puppet ( Saw, 2004 ) 

Blade ( Puppet Master, 1989 ) 

Billy ( Dead Silence, 2007 ) 

The Clown ( Poltergeist, 1982 ) 

Slappy ( Goosebumps , 2015 ) 

Fats ( Magic, 1978 ) 

Suzie ( 2002 ) 

Brahms ( The Boy, 2016 ) 

তবে আমি আজকে যা বলবো তা যথেষ্ট রোমহর্ষক । আমি নিজেও এর সত্যতা অর্থাৎ এমনটা সত্যিই হতে পারে ভেবে আজও ভীত। 

আমার এক বান্ধবী অর্পিতার শ্বশুরবাড়ি গুজরাটের নভসারীতে । ওর খুড়তুতো ননদের কথা আমি ওর মুখেই শুনেছিলাম । 

ঘটনাটি খুব বেশি পুরানো নয় । সালটি ছিল ২০০৭ । আমার বান্ধবী ভালোবেসে এক গুজরাটি ছেলে গৌরবকে বিয়ে করে । অর্পিতা ও গৌরব কর্মসূত্রে কলকাতাতেই থাকে । অর্পিতা মাত্র দুই বার গুজরাটে শ্বশুর বাড়িতে গিয়েছিল । অর্পিতার খুড়তুতো ননদের নাম আর্যাংশী । অর্পিতা ও আর্যাংশী সমবয়সী হওয়ার জন্য খুব ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল । অর্পিতার মুখে শুনেছিলাম আর্যাংশী অপরূপ সুন্দরী । আমি নিজেও ফটো দেখেছিলাম সত্যিই যেন ডানা কাটা কোনো পরী । অর্পিতা ও আর্যাংশী সারাদিন গল্প করতো, হৈচৈ করতো কিন্তু সন্ধ্যর পর থেকে কিছুতেই দুজনকে একত্রে থাকতে দেওয়া হোতা না । এমনকি আর্যাংশীকে ঘরে বন্ধ করে রাখা হোতো । অর্পিতা সবাইকে ও স্বামী গৌরবকে অনেকবার জিজ্ঞাসা করেছিল, কিন্তু কেউ কিছু বলেনি । তবে অবশ্য গৌরব বলেছিল, " অভি তুম চুপ থাকো, কলকাত্তা যাকে সব বলবো । " গৌরব ভালো বাংলা বলতে পারতোনা, তাই কথাও ছিল বাংলা-হিন্দী- ইংরেজি মিক্সড আচার । 

অর্পিতা শ্বশুর বাড়ি থাকাকালীন কিছু অদ্ভুত ঘটনা দেখেছিল যার দরুন ও আর শ্বশুর বাড়িতে যেতে চায় না । এমনকি ওর ছেলেকে দেখাতেও যায় নি । অর্পিতা একদিন শ্বশুর বাড়িতে সন্ধ্যার সময় বসে টিভি দেখছিল হঠাৎ আর্যাংশীর ঘর কিছু কন্ঠস্বর শুনতে পায়, খুব বিশ্রী কন্ঠস্বরটা । আবার কখনও হাসি, কখনও বা কান্নার শব্দ । শ্বাশুড়ীকে জিজ্ঞাসা করলে উনি বলেন, " কুছ নেহী , তুম টিভি দেখো । অউর ভুল সেভি অভি আর্যাংশী কে ঘরকি তরফ মত্ যানা । " 

কিন্তু অর্পিতার কৌতূহল বাড়তে থাকে । একদিন হঠাৎ সন্ধ্যের পর থেকে আর্যাংশী কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না । অনেক খোঁজার পর অনেকটা দূরে একটা মন্দিরে ওকে অচৈতন্য অবস্থায় পাওয়া যায় । মাথায় ভর্তি সিঁদুর । পরের দিন সকালে জ্ঞান ফিরলে আর্যাংশী আর কিছুই মনে করতে পারেনি । অর্পিতাও অনেকবার জানতে চেষ্টা করে কিন্তু কোনো লাভ হয় নি । এরকম ভাবে রোজ সন্ধার পর বাড়িতে অশান্তি বাড়তে থাকে আর্যাংশীর সিঁদুর পড়া নিয়ে । বেশি বাধা দিলে ও প্রচন্ডভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতো । 

কয়েকদিন পর গৌরব ও অর্পিতা কলকাতায় ফিরে আসে । একদিন রাতে খেতে বসে অর্পিতা আর্যাংশীর ব্যাপারে জানতে চায় । কিন্তু যা শোনে তা শোনার জন্য ও একেবারে প্রস্তুত ছিল না । 

গৌরবের মুখে অর্পিতা পুরো ঘটনা শুনেছিল । " আর্যাংশীর best friend এর নাম ছিল জৈষ্ণভী । হঠাৎ একদিন car accident এ জৈষ্ণভী মারা যায় । খুব ভেঙে পড়েছিল আর্যাংশী । তবে অবশ্য আর্যাংশী ও জৈষ্ণভী- র বন্ধুত্ব কেউ কোনোদিন ও পছন্দ করতো না । Actually ওরা দুজন ছিল সমকামী । তাই ওদের মিশতে দেওয়া হোতো না । জৈষ্ণভী র মৃত্যুর পর আর্যাংশী ওর প্রিয় পুতুলের নাম রাখে জৈষ্ণভী । আর তারপর থেকে শুরু হয় যতো সমস্যা । প্রত্যেক সন্ধ্যাবেলা ওই পুতুলে জৈষ্ণভীর আত্মার সঞ্চার ঘটে । সমকামিতা ও ভালোবাসার জন্যই জৈষ্ণভীর নামে সিঁদুর পড়ে আর্যাংশী । 

গৌরবরা নাকি নিজের চোখে কিছু অদ্ভুত ঘটনা দেখেছিল যার ব্যাখ্যা আজও পাওয়া যায় নি । কোনও তান্ত্রিক এবং মনস্তাত্ত্বিক ও কিছু করতে পারে নি । গৌরবরা আর্যাংশীকে নিজের চোখে পুতুলের সাথে কথা বলতে দেখেছিল । এবং খুব অদ্ভুতভাবে পুতুলটির কন্ঠস্বর ছিল অবিকল জৈষ্ণভীর মতো । এমনকি পুতুলটি আর্যাংশীকে খুব আদরও করতো । এসব দেখে সবারই চক্ষু চড়কগাছ, একেবারে নির্বাক । তাই সন্ধ্যার পর থেকে আর্যাংশীকে ঘরে বন্ধ করে রাখা হোতো । গৌরবরা সবাই পুতুলটাকে জলন্ত আগুনে ফেলে চোখের সামনে পুড়ে যেতে দেখেছিল কিন্তু সেই পুতুলটাকে আবার অক্ষত অবস্থায় আর্যাংশীর কাছে দেখা যায় । অনেক চিকিৎসা করিয়ে কোনো ফল পাওয়া যায় নি । আমি যখন অর্পিতার মুখে এই ঘটনা শুনেছিলাম খুবই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম । এসব কি সত্যিই হতে পারে ? কিন্তু হ্যাঁ পুরোটাই নির্ভেজাল সত্যি ঘটনা । 

২০১৪ সালের মার্চ মাসে অর্পিতার ননদ আর্যাংশী মারা যায় এবং আজও ওর মৃত্যু টা খুব রহস্যজনক । আমি আজও কোনোদিনও অর্পিতার বাড়িতে কোনো রকম পুতুল দেখিনি। পুতুলের নামে অর্পিতা ও গৌরব দার চোখে-মুখে ভয়ের ছাপ দেখেছি ।