STORYMIRROR

SHUBHAMOY MONDAL

Drama Horror Tragedy

3  

SHUBHAMOY MONDAL

Drama Horror Tragedy

হৃদ-মাঝারে (শেষ পর্ব)

হৃদ-মাঝারে (শেষ পর্ব)

4 mins
367

আকাশ সেদিন ওখান থেকে চলে আসার পর দু'দিন ধরে শুধু ভাবে - সত্যিই কি সে কোনো ভুল করে ফেলেছে? হঠাৎ শুভ্রার এমন অদ্ভুত আচরণ কেন?


আবার মনে হয় - তুহিন চলে যাবার পরেও তার হার্ট বসে আছে শুভ্রার বুকে বলেই হয়তো সে এত সহজে সবকিছু ভুলতে পারছে না। তাকে আরও সময় দেওয়া উচিত সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে ওঠার জন্য।


তাই বিয়ের জন্য বা ঐ বিষয়ে আর কোনো আলোচনা না করে, শুধুই তার পাশে থাকাই এখন শ্রেয় মনে হয় তার। নিয়মিত শুভ্রার সঙ্গে দেখা করে তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নিতে থাকে সে একই ভাবে। 


শুভ্রাও তার সাথে নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে আর একটি কথাও বলেনা। রোজ তাদের একসাথে গল্প আড্ডা চললেও তা ঠিক প্রেম সুলভ ছিলো না মোটেই। বিষয়টা আকাশও লক্ষ্য করেছিলো।


এর কয়েক মাস পর, তুহিনের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠান সাঙ্গ হতেই, আকাশ গিয়ে দেখা করে তুহিনের বাবার সাথে। তাঁকে বলে তার মনের কথা - সে শুভ্রাকে বিয়ে করতে চায়।


তুহিনের বাবা প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষিত না হলেও যথেষ্ট বিচক্ষণ ব্যক্তি ছিলেন সে কথা তো আগেই বলেছি। তাঁর বিধবা পুত্রবধূর প্রতি আকাশের দূর্বলতা ও ভালোবাসা তাঁর দৃষ্টি এড়ায় নি।


আকাশের খোলাখুলি ঐ বিয়ের কথা বলাতেও তিনি খুশী হলেন। তাঁদের পুত্রের সাথে সাথে তাঁরা নিজেদের সুখ শান্তিকেও তো হারিয়েছেন, এখন শুভ্রার জীবনে যদি সুখ আসে, যদি সব জেনেও তাকে কেউ আপন করতে চায় - তবে তো সে ভাগ্যবতী, তার সুখটুকু ছিনিয়ে নেওয়া যায় না। তাই তিনি শুভ্রার আবার বিয়ে দিতে রাজী হয়ে বেয়াইকে গিয়ে সবকথা বললেন।

 


শুভ্রার বাবা মাও সেদিন অবাক হয়েছিলেন তাঁর এই উদার মনোভাব দেখে। মেয়ের ভবিষ্যত জীবন নিয়ে চিন্তা তাঁদেরও ছিলো, কিন্তু তুহিনের বাবা যে এমন প্রস্তাব দিতে আসবেন, যে কথা বাবা মা হয়েও তাঁরা তখনও ভেবে উঠতে পারেন নি - এটা ভেবেই আশ্চর্য হয়ে যান তাঁরা।


তাঁর হাত দুটো ধরে খুব কাঁদলেন সেদিন তাঁরা দুজনে। বললেন - বেয়াই মশাই, শুভ্রা কপাল করে আপনার মতো শ্বশুর পেয়েছিলো। হতভাগী স্বামীকে হারালো, নয়তো ধন্য করেছে সে আমাদের এমন আত্মীয় দিয়ে। 


ও আপনার মেয়ে, ওর ভালো মন্দের সিদ্ধান্ত যা আপনি স্থির করবেন, তাই হবে। আমাদের কোন বিষয়েই কোন অমত থাকবে না। আপনি যা ভালো মনে করবেন শুভ্রার জন্য তাই মঙ্গলময় হবে।


বাড়িতে ফিরে এসে, তুহিনের বাবা পরদিন সকালে শুভ্রার কাছে গেলেন। তাকে বললেন আকাশের কথা। শুভ্রাকে বোঝালেন কেন তার পুনর্বিবাহ করা দরকার। তার ভবিষ্যত তাহলে কিভাবে সুরক্ষিত থাকবে, ইত্যাদি।


শুভ্রাও শ্বশুরের কথা মাথা নিচু করে শুধু শুনে গেলো, কোনো উত্তর দিতে সাহস করলো না। একটা অদ্ভুত বিস্ময় তাকে ঘিরে ধরলো যেন। সে নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছিলো না। শুধু তার হৃৎস্পন্দন যেন বেড়ে গেলো কথাগুলো শুনে। 


শ্বশুরকে চিনতে, জানতে বা কখনও তাঁর কাছে যেতে চেষ্টাও করেনি শুভ্রা এর আগে কোনদিন। কিন্তু আজ তার বড় ইচ্ছে করছিলো - বাবা বলে ছুটে গিয়ে তাঁর পুত্রহারা শোকার্ত বুকে আছড়ে পড়ে কাঁদতে। কিন্তু, যা সে আগে কখনও করেনি আজ শত আবেগের ধাক্কাও তাকে সে' কাজ করাতে পারলো না।


বুকের মধ্যে একটা ব্যথা চিন চিন করতে শুরু করলো তার শ্বশুরের ঐ কথাগুলো শোনার পর থেকেই। এর কিছু পরেই রোজকার মতই তার সাথে দেখা করতে এলো আকাশ। আর তার পরেই ঘটলো সেই ভয়ঙ্কর ঘটনাটা।


আকাশ এসে দেখে আরাম কেদারায় শুয়ে ভয়ানক দুলছে শুভ্রা - যেন কেউ তাকে দোলাচ্ছে! আকাশ তার সামনে এসে দাঁড়ালো। কিন্তু এ কি - শুভ্রার আজ এ কি রূপ? 


চুলগুলো দলা পাকিয়ে কেউ যেন পাগলিনীর চেহারা করে দিয়েছে তার। চোখ মুখ লাল, সে যেন প্রবল অন্তর্দ্বন্দ্বে ছটপট করছে - নিজের সাথে নিজেই যেন যুদ্ধ করে চলেছে, বাইরের পৃথিবীর দিকে তার কোন হুঁশ নেই!


আকাশ তাকে ডেকেও কোন সাড়া না পেয়ে তার হাতদুটো ধরে নাড়াতে যেতেই - খপ করে তাকে ধরে ফেলে শুভ্রা। তার দুহাতে তখন আসুরিক শক্তি, তার মুষ্টির চাপে আকাশের মনে হয় নিজের কব্জি দুটো বোধ হয় ভেঙে বেরিয়েই যাবে। নিজেকে চেষ্টা করেও তার হাত থেকে মুক্ত করতে পারে না সে। এমতাবস্থায় উঠে দাঁড়ায় শুভ্রা, তার দু'হাতে পাটকাঠির গোছার মত তুলে নিয়ে আকাশকে মেঝেয় আছড়ে ফেলে ছুঁড়ে। 


বলে - খুব বিয়ে করার শখ না? লোকের বৌকে বিয়ে করবে? কেন বিদেশে কোন মেম জোটাতে পারোনি? নিজের পছন্দের মেয়েই চাই? সে অন্যের বিবাহিতা স্ত্রী হলেও তাকে চাই? এত প্রেম তো তাকে ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলে কেন?


আকাশ অবাক হয়ে যায় - এ কার স্বরে কথা বলছে শুভ্রা? এমন পুরুষালি গলা, এমন কর্কশ আওয়াজ তো তার গলার নয়! একটু পরেই সে বুঝতে পারে - শুভ্রার নয়, এ আওয়াজ তুহিনের!


তুহিনের আত্মা দখল করে নিয়েছে শুভ্রার সত্ত্বা। সে তার কাছে আকাশ কেন কোন পুরুষকেই হয়তো কখনই আসতে দেবে না। আকাশ উঠে দাঁড়ায়। ভাবে, এই অবস্থায় শুভ্রার শরীরকে রক্ষা করা দরকার। 


কারণ, তুহিনের আত্মার ভর কমে গেলে অসুস্থ শুভ্রার সুস্থ থাকা দায় হয়ে যাবে - এত শারীরিক পরিশ্রমের পর। তাই, সে আবার তার কাছে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতেই, তাকে আবার অবাক করে দিলো শুভ্রা।


বললো - কি ভাবছো, তুহিনের থেকে কেড়ে নেবে শুভ্রাকে? যাদের হৃদয় মিলে গিয়ে এক শরীর হয়েছে তাদের তুমি আলাদা করবে? সে তো আর হবে না। শরীরটাই যদি মিলনে বাধা হয় তো তাকেই রাখবো না আর। এই দেখো-


বলতে বলতেই নিজের হাতদুটো দিয়ে নিজেরই গলাটা চেপে ধরে শুভ্রা। মুষ্টির প্রবল চাপে নিজের জিভটা বেরিয়ে আসে, তার চোখ দুটো যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চায়। আকাশ ছুটে তার কাছে আসার চেষ্টা করলে - সজোরে একটা লাথি খায় তার পুরুষাঙ্গে।


প্রবল যন্ত্রণা নিয়ে আকাশ ছিটকে পড়ে যায়। আর তার সামনেই, শুভ্রার নিজেরই দুটো হাত - যেন অদৃশ্য কারোর অঙ্গুলীহেলনে চালিত হয়ে, তার নিজেরই গলা চেপে ধরে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে তাকে!


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama