'হল্যান্ডের হান্স
'হল্যান্ডের হান্স
প্যাশনের মিডিয়া, ফ্যাশনের হা-হুতাশ আর হল্যান্ডের হান্স
প্রতিটা বিপর্যয়ে, ফলাফলের চিত্র কমবেশি প্রায় এক। হাজার হাজার মানুষের কান্না। ভেসে বা ধ্বসে যাওয়া ঘর-বাড়ি। উড়ে যাওয়া টালির চাল। খড়কুটো। চারিদিকে অথৈ জলের মাঝে দাঁড়িয়ে একদল মানুষের হাহাকার। তাদের নেই। আর কিছু নেই।
এই সমস্ত না থাকা গুলো মিডিয়া অতি প্যাশনের সাথে একের পর এক ফুটেজে দেখিয়ে যায়। অমুক জনের সাঁতার। তমুক জনের ভেসে যাওয়া ঘর। নিখোঁজ বৃদ্ধা। গলা জল পেরিয়ে কীভাবে বাবা-মা তাঁর সন্তানকে কাঁধে নিয়ে হেঁটে যান। আমরা দেখি। দেখি অমুক মাস্টার কীভাবে তাঁর পাঠশালার ছেলেপুলদের নিয়ে বাঁধ রক্ষা করতে নামেন। আমরা দেখি। সমস্ত টিআরপি আর প্যাশন মারিয়ে কীভাবে একটা ব্যাঙ উঠে যায় সাংবাদিকের ঘাড়ে তাও দেখি।
তারপর হা হুতাশ করতে করতে দুঃখ লিখি সোশ্যাল মিডিয়ায়। ত্রাণ নিয়ে ছুটে যাই কেউ কেউ। কেউ কেউ শেয়ার করি সেসব। সরকারি-বেসরকারি নেতা মন্ত্রীরা ক্যামেরা নিয়ে হাজির হন পরেরদিন। ক্ষতিপূরণের হিসেব করেন শাসকদল। রাষ্ট্রপ্রধান এসে খতিয়ে দেখেন ঠিক কতটা ক্ষতি! প্রকল্প ঘোষণা হয়। দান ঘোষণা হয়। ত্রাণ ঘোষণা হয়। আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে চলে যাই পরের খবরে। প্যাশনের খবর। ফ্যাশনের খবর। তারপর বিরতি আসে।
পপকর্ণ ফুরিয়ে আসার আগে বছর ঘুরে যায়। তারপর আরও একটা বিপর্যয়। নতুন নাম। চেনা ফলাফল। সেই ঝড়জলবৃষ্টি। সেই একই কান্না। সেই মিডিয়ার প্যাশন। তারপর আবার হা-হুতাশ। আবার ত্রাণ। আবার প্রকল্প। আবার রাষ্ট্রপ্রধান। পুনরাবৃত্তি চলতে থাকে একপ্রকার। তারপর ব্যস্ততার নিয়মে ভুলে যাই সব। ভুলে যাই কেন বছরের পর বছর বাঁধ নির্মাণ হয়না। আমরা জানতেও চাই না এসব। আমাদের বেডরুমে বিপর্যয় আসে না সেভাবে। যেটুকু আসে ওই খবর। মিডিয়ার প্যাশন ধরেই। যে প্যাশন শাসককে প্রশ্ন করে না এতদিন কী করছিলেন? ক্ষয়ক্ষতির পরই কেন এত উদ্বেগ? এত হা-হুতাশ? কেন বছরের পর বছর বাঁধ নির্মাণ হয়নি ? এরকম অনেক অনেক প্রশ্ন তারা ভুলে যায়। প্যাশন শুধু সুন্দর সুন্দর ফুটেজ আনে। গলা অবধি জলে নেমে বুম উঁচিয়ে পরিস্থিতি দেখায়। প্যাশন আরও অনেক কিছু করে। শুধু ক্ষমতাকে প্রশ্ন করে না। আর আমরাও প্যাশনে ভেসে যেতে যেতে, ফ্যাশনে ভেসে যেতে যেতে ওই বাচ্চা ছেলেপুলের বাঁধ আটকাতে চাওয়ার ছবি দেখে শেয়ার করে ক্যাপশন দিই, 'হল্যান্ডের হান্স।'
