হালুইকর
হালুইকর


মিতুর শ্বশুরবাড়িতে বিয়ে, পৈতে, অন্নপ্রাশন, সাধ, জন্মদিন, পুজো-আচ্চা সব অনুষ্ঠানে রান্নার কাজ করে হালুইকর কাকা। তার নামটা কি ছিল তা আজ আর কারুর মনে নেই, কেউ কাকা, কেউ দাদা, বাচ্চারা দাদু আর কর্তাবাবা-কর্তামা ঠাকুর বলে ডাকে তাকে। কিন্তু এই প্রথমবার হালুইকর ঠাকুর এবাড়িতে রান্নার বরাত না পেয়ে মুখ শুকনো করে ফিরে যাচ্ছে। মিতুর মাল্টিন্যাশনালে চাকরি করা বর এবার মেয়ের অন্নপ্রাশনে এই প্রথমবারের জন্য কলকাতার নাম করা কেটারারকে খাওয়াদাওয়ার দায়িত্ব দিয়েছে, কারুর কোনো কথাই শোনেনি এ প্রসঙ্গে। আজ তাই হালুইকরকাকার এরকম শুকনো মুখে মাথা নীচু করে ফিরে যাওয়া দেখে মিতুর বুকের ভেতর একটা সজোরে ধাক্কা লাগলো। ভালোয় ভালোয় মিতুর মেয়ের অন্নপ্রাশন মিটে গেছে।তবে মিতুর মন থেকে হালুইকরকাকার শুকনো মুখটা মিলিয়ে যায়নি। মিতু পরপর দুদিন দুপুরে একটু বেরিয়েছিল। মিতু কদিন শাশুড়ির সাথে কোনো একটি বিষয়ে গভীর আলোচনায় ব্যস্ত দেখা গেল।তারপরের কদিন দেখা গেল মিতু আর শ্বশুর-শাশুড়ি তিনজনে মিলে খুব উত্তেজিত ভাবে মিটিং করছে। এরপর সবাই দেখল মিতুদের একতলার সিঁড়ির বাঁদিকের অব্যবহৃত অংশ রঙ হচ্ছে, তারপর কটা ভাড়া করা টেবিল-চেয়ার এল। বাড়িশুদ্ধ সবাই একেবারে তিমিরে। পরেরদিন ভোরে সানাইয়ের সুরে সকলের ঘুম ভাঙ্গলো,নীচে তখন গেটের মাথায় সাইনবোর্ডটা টাঙানো হচ্ছে, "হালুইকরের খানা খাজানা"... প্রো- মুখার্জি পরিবার। পাকাকাজে বহাল হালুইকর।