STORYMIRROR

SHUBHAMOY MONDAL

Drama Horror Tragedy

3  

SHUBHAMOY MONDAL

Drama Horror Tragedy

হ-য-ব-র-ল - ৪

হ-য-ব-র-ল - ৪

4 mins
214


এই গ্রামে একসময় ঐ কোচ লোকটি তার চার ভাই আর তাদের মা বাবার সঙ্গে তাদের এক মস্ত বাড়িতে থাকতো। বাড়িটাতে তাঁদের গুরুদেবের দেওয়া এমন এক মন্ত্রপূত কবচ ছিল, যার ফলে রোগ বালাই, বিপদ আপদ সব ঐ বাড়ি থেকে নাকি দূরে থাকতো!

তিনি নাকি ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন যে - ওদের বাড়ির সবাই নিজেদের বাসস্থানেই বজ্রপাতে মারা যাবে। তাই তিনি নিজে থেকেই এমন শক্তিশালী ঐ কবচটা তৈরী করে দিয়েছিলেন যে, তার প্রভাবে ঐ বাড়িতে কখনও বজ্রপাতও হবে না।

তাঁর উপদেশ ছিল - বাড়ির কেউ যেন কোনো অপরাধ না করে। কারণ, ঐ কবচটা থাকতে তাঁদের কোনো ক্ষতি তো আর কেউ করতে পারতো না - এখন কেবল নিজেদের অপরাধের বশেই যদি তাদের পতন হয় তো হবে, অন্যথায় না।

গ্রামের অনেকেই ব্যাপারটা জানতো, আর এটাও নাকি শোনা যেত যে - ঐ কবচ কোন ব্যক্তি বিশেষের কাছে থাকলে, সে নাকি অজেয় অমর হতে পারতো! সকলের মনেই তাই অমন একটা কবচ পাবার লোভ ছিল। কিন্তু কবচটা গুরুদেব বাড়ির কোথায় স্থাপন করেছিলেন তা কেউ জানতো না, এমনকি ওদের বাড়ির লোকেদেরও তিনি শুধু একটা হেঁয়ালি ছাড়া আর কিছুই জানান নি!

যাই হোক, এরপর এক ঝড় বৃষ্টির দিন ওদের বাড়ির সবাই, মূলত ওর বাবা-মা জানতে পারেন যে তাঁদের এই ছেলে, মানে তোমরা যাকে ঐ কোচ বলছো, ওর নাম তারক, সে নাকি দিনরাত তাঁদের গুরুদেবের পিছনে লেগে রয়েছে - ঐ কবচ বাড়িতে কোথায় আছে, আর তার কি কি গুণাগুণ আছে এইসব জানার আগ্রহ নিয়ে!

সে দিনরাত গুরুদেবের পিছন পিছন ঘুরছে। রোজ তাঁকে সেবা যত্ন করে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সে! এসব শুনে তাঁরা বুঝতে পারলেন - গুরুদেবের ভবিষ্যতবাণী ফলতে চলেছে। কারণ, তাদেরই বাড়ির কারোর মনে ঐ কবচ সম্পর্কে এমন আগ্রহ জন্মানোর অর্থই হল - শীঘ্রই কোন অপরাধ ঘটতে চলেছে। এটাও ঐ গুরুদেবেরই সতর্ক বাণী ছিল।

তাই, তারককে ডেকে সেদিন খুব বকাবকি করলেন তাঁরা। তারক মুখ নীচু করে সব শুনে বললো - আমি আর এই বিষয়ে কারোর সঙ্গে কোনোদিনই কথা বলবো না। কারণ, তোমাদের মত অপদার্থ লোকেরা কোনোদিন বুঝবেই না - কি ধনে নিজেরা ধনী।

এই কথা শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে ওর বাবা বললেন - তুই এই মুহুর্তে এই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যা, তোর মুখদর্শনও করতে চাই না আর। তারকও দমবার পাত্র নয়, বলে বসলো - আমি এই বাড়িতে আছি বলেই তো বেঁচে আছো তোমরা এখনও। আমি এবাড়ি ছেড়ে গেলে - না তোমরা থাকবে, না তোমার এই বাড়ি।

বাবা তো শুনে রাগে ফেটে পড়লেন। ঐ তুমুল ঝড়বৃষ্টির মাঝে - যেখানে লোকে বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া রাস্তার কুকুর বেড়ালকেও তাড়ায় না, তারই মধ্যে তিনি নিজের ছেলেকে গলা ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বেড় করে দিলেন! তারক বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলে, তিনি সশব্দে সদর দরজা বন্ধ করে দিলেন।

ঠিক সেই মুহুর্তে প্রচণ্ড জোড় আওয়াজ করে বাজ পড়লো তাঁর বাড়িতে! চার ভাই সহ বাবা মা বজ্রাহত হয়ে মারা গেলেন, আর বাড়িটাও দাউ দাউ করে জ্বলে ধ্বংস হয়ে গেলো - তারকের চোখের সামনেই!

তার পর থেকেই সে, ঐ গ্রামের শ্মশানেই একটা আস্তানা করে চণ্ডালের বেশে থাকে। আসলে সেই দিনই গুরুদেবের হেঁয়ালির অর্থ উপলব্ধি করে খুঁজে সে বেড় করে ফেলেছিলো কবচটা। তাই, সেটা নিজের সঙ্গে নিয়ে, তারক বাড়ি থেকে বেড় হয়ে যেতেই, ওদের বাড়িতে বজ্রপাত হয়।

ঐ দুর্যোগের মাঝে, ওকে বাড়ি থেকে বেড় করে দেওয়াটা ছিল ওর বাড়ির লোকেদের করা এক ভয়ানক অপরাধ। তাই সেই গুরুদেবের সতর্কবাণী সত্যিই ফলে গেলো! সেই গুরুদেবের সতর্কবাণী অনুযায়ীই - তারকের পক্ষে ঐ কবচ শরীরে ধারণ করে, লোকজনের মাঝে থাকা আর কাম্যও ছিল না, উচিতও ছিল না।

লোকজনের সঙ্গে মেশার সময়, তারক ঐ কবচ খুলে তার ঘরে লুকিয়ে রাখে। কবচের গুণে সে নীরোগ এবং প্রভুত দৈবশক্তির অধিকারী হয়ে ওঠে। সে নিজে কিন্তু আজ পর্যন্ত কারোর জন্য ক্ষতিকর কোন অপরাধ করেনি। যদিও তার ক্ষমতার দম্ভ ইদানীং সবাই টের পাচ্ছিলো তার কথা বার্তা আর চালচলনে! কিন্তু আজ সে সত্যিই একটা ভয়ানক অপরাধ করতে উদ্যত হয়েছিলো।

তোমাদের কাছে খেলার মাঠে হেরে যাওয়াটা, সে তার দৈবশক্তির পরাজয় বলে মনে করে। তাই যে গুরুদেবের কবচের জন্য তার এত ক্ষমতা, সেই তাঁকেই মিথ্যাবাদী বলে গালাগাল দিয়ে, তোমাদের মেরে ফেলার জন্য আস্তানায় গিয়ে কবচটা শরীরে ধারণ করে।

গুরুদেবের সতর্কবাণী ভুলে - অপরাধ করার মানসিকতা নিয়ে কবচটা ধারণ করায়, কবচের সমস্ত ক্ষমতা তখনই বিনষ্ট হয়। আর তাঁর করা ভবিষ্যতবাণী মত তখনই যথারীতি বজ্রপাত হয়ে, নিজের আস্তানাতেই তারকেরও মৃত্যু হল আজ। একটু আগে যে হঠাৎ বজ্রপাত সহ বৃষ্টি হল - সেই তাতেই তারক মারা গেছে।

আমরা এতক্ষণ গোগ্রাসে গিলছিলাম তাঁর সেই আজগুবি আষাঢ়ে গল্পগুলো। কিন্তু এবার যেন বিষয়টা মাত্রা ছাড়িয়ে গেলো - তিনি তো এতক্ষণ এই স্টেশনেই ছিলেন আমাদের সঙ্গে! তাহলে, তারক বজ্রাঘাতে মারা গেছে, সেটা তিনি এখানে বসে জানলেন কি করে?

কথাটা তাঁকে জিগ্গেস করতেই যাচ্ছিলাম, তিনি আবার মুখ খুললেন - ওর বাবা ছাড়া, বাড়ির বাকি পাঁচজনের অপরাধ তো একটু কম ছিল, তাই তাদের অপঘাতে মৃত আত্মার মুক্তির জন্য দরকার ছিল - দুর্যোগের দিনে কারোর প্রাণ রক্ষা করার।

এবার আমরা ধৈর্য হারিয়ে বললাম - আপনি ওদের বিষয়ে এতকথা জানলেন কি করে? তিনি বললেন - আজ ছিল আর এক দুর্যোগের রাত। তারকের কোপ থেকে তোমাদের পাঁচজনকে বাঁচিয়ে, আমরা পাঁচজন আজ মুক্তি পেতে চলেছি। নাও, এবার তোমরা নেমে পড় - তোমাদের স্টেশন এসে গেছে।

হঠাৎ করে এভাবে আসরের তাল কেটে যাওয়ায়, আর স্টেশন এসে গেছে শুনে, তাড়াহুড়ো করে আমরা সবাই ট্রেন থেকে নেমে পড়লাম। ট্রেনটা আমাদের পাস দিয়ে স্টেশন ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো। তখন সবার খেয়াল হল - আচ্ছা, কি বলছিলো আমাদের নামার আগে লোকটা - তাদের আত্মার মুক্তি?

চমকে উঠে সবাই পিছন ফিরে তাকালাম তাই। দেখি - এক বয়স্কা মহিলা আর চারজন যুবক প্ল্যাটফর্মের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে, আমাদের দিকে হাত নেড়ে - টা, টা করছে! চোখ কচলে আবার ভালো করে তাকাতেই দেখি - তারা হাসতে হাসতে যেন হাওয়ায় ভেসে দূরে চলে গেলো!

আমরা হাঁ করে সেদিকে তাকিয়ে আছি, এমন সময় স্টেশনের মাইকে ঘোষণা হতে শুনলাম - শেষ ডাউন ট্রেনটা নাকি আসছে, তাহলে আমরা কোন ট্রেনে এলাম?

।সমাপ্ত।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama