গানস্যালুট
গানস্যালুট


র্যাট ট্যাট ট্যাট ট্যাট..... লাইট মেশিনগানের শব্দটা যেন ঘূর্ণিঝড়ের মতো পাক খেতে থাকে চতুর্দিকে বরফশৃঙ্গ দিয়ে পরিবেষ্টিত এই পাহাড়ি অঞ্চলে। যেন দিওয়ালির রাত!
ঠং করে একটা বুলেট ছিটকে এসে লাগে মাথার উপরে পাথরটায়। প্রতিবর্ত ক্রিয়ায় আওয়াজটা শুনেই মাথা নীচু করে সতনাম সিং, সেভেন্টিন্থ লাইট ইনফ্যান্ট্রি ক্যাভালরির ক্যাপ্টেন। প্রতিপক্ষের সৈন্য সংখ্যায় অনেক বেশি, তার উপরে তারা উঁচু জায়গায় বসে আছে। এখন রিট্রিট করাই উচিৎ, কিন্তু, শিখ রেজিমেন্ট যে পালাতে শেখেনি!
পাথরের আড়ালে বুকে হেঁটে এগিয়ে যায় সতনাম আর তার আঠারো সঙ্গী। হাতে এলএমজি, বুকে অটুট সাহস আর অটল দেশভক্তি।
ও তরফ থেকে আবার গুলি বৃষ্টি শুরু হয়। মেশিনগানের ঝলকানি দেখে এপাশ থেকেও ধেয়ে যায় গুলি। এপার ওপার মিলিয়ে কয়েকজন দেশের জন্য শহীদ হয়।
যুদ্ধ চলছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্য সামনের স্ট্র্যাটেজিকালি সুপিরিয়র টিলাটি দখলমুক্ত করা। শত্রু দেশটির লক্ষ্য সেটা দখলে রাখা। এই টিলাটি হঠাৎ খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে দু'দলেরই কাছে।
র্যাপিড ফায়ার করতে করতে এগিয়ে যায় শিখ রেজিমেন্ট। প্রতি একশো মিটার এগোনোর জন্য আত্মবলিদান দেয় একজন দুজন সেনা। ওপক্ষের ক্ষয়ক্ষতিও কম নয়। ধীরে ধীরে গুলিবর্ষণ কমে আসে। ভারতীয় সেনার লড়াইয়ের কাছে মাথা নত করে পশ্চাদপসরণ করে শত্রু সেনা।
মাঝে মাঝে দু'একটা স্ট্রে বুলেট ছুটে আসছে বটে, তবে লক্ষ্য ঠিক নেই। ভোর অবধি অপেক্ষা করে সাবধানে টপে পৌঁছায় অবশিষ্ট শিখ রেজিমেন্ট। উঠে দেখে, সেখানে পাথরে ঠেস দিয়ে কোনরকমে বসে আছে ভয়ানকভাবে আহত এক শত্রুসেনা। হাতে খালি মেশিনগান।
গুরুতর আহত এই সেনাকে কভারে রেখেই পালিয়েছে বাকি শত্রুসেনারা। এর আঘাত এতটাই বেশি যে একে নড়ানোর উপায় নেই। মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও সে তার সাথীদের জীবন বাঁচিয়েছে।
সতনামদের চোখের সামনেই মারা গেলো শত্রুসেনাটি। শত্রুসেনার দেহটি ফিরিয়ে দিতে হবে শত্রুপক্ষকে, যথোচিত মর্যাদায় শেষকৃত্য করার জন্য, কিন্তু, এই পরিস্থিতিতে তো সেটা সম্ভব নয়।
তাই পাথরের মাঝে অনামী সেনাটিকে শুইয়ে তার উপরে পাথরের কোয়ারি করে তাকে গোর দেওয়া হলো। তারপরে সতনাম ও তার বাকি পাঁচসঙ্গী গানস্যালুট দিয়ে মরণোত্তর অভিনন্দন জানালো তাকে।
যুদ্ধ করলেও বীরত্বের কদর করতে জানে ভারতীয় সেনা।
(সমাপ্ত)