STORYMIRROR

Eva Paul

Horror Thriller

4  

Eva Paul

Horror Thriller

একটা ছোট্ট কথা

একটা ছোট্ট কথা

4 mins
329

 

সেদিন বাইরে অনবরত বৃষ্টি পড়ছিল । একমনে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা পড়ে চলেছিলাম পাগলের মতো । হঠাৎ দরজায় ঠকাঠক্ ঠকাঠক্ আওয়াজ ।প্রথমটায় গরজ করিনি, তাই চেয়ার থেকে না উঠে আবার মন দিই কবিতায়।শেষে দু'বার জোর ধাক্কার আওয়াজে দরজা না খুলে পারলাম না। না ভূত নয় , আসলে অন্ধকার, বৃষ্টির রাত এসব থাকলে সবার প্রথমে ভূতের কথাই মনে পড়ে । প্রকাশক অমল তালুকদার । যে গত রোববার আমাকে এক অখ্যাত কবি বলে তিরস্কার করে দু'চার কথা শুনিয়েছিল । আমি অবশ্য ওনাকে একবারই অনুরোধ করেছিলাম আমার কবিতাগুলো ছাপাতে।


তা এভাবে ওনার আবির্ভাব আমাকে শুধু বিস্মিত করলো না, প্রচন্ডভাবে রাগিয়ে দিল । ওনাকে কয়েকটা কথা শোনাবো বলে মনে মনে প্রস্তুত হচ্ছিলাম , কিন্তু সুযোগ দিলে তো । লোকটা মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে আমার চেয়ারটা টেনে বসে হাঁপাতে হাঁপাতে আমাকে দরজাটা ভালো করে আটকে দিতে বলল। আমি কিছু না ভেবেই ওনার কথা পালন করলাম। 


পাঁচ মিনিট হয়ে গেল আমিও বসে আছি উনিও বসে আছেন।এখন অবশ্য ওনার হাঁপানো ভাবটা কমেছে।শুরুটা আমিই করলাম, 

-তা অমল বাবু আপনি হঠাৎ? 

-এভাবে এলাম বলে কিছু মনে করবেন না।আসলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।সেদিনের ব্যবহারের জন্য আমাকে ক্ষমা করবেন। 


লোকটা শুধু ক্ষমা চাওয়ার জন্য হাঁপাতে হাঁপাতে এই বৃষ্টি মাথায় ছুটে এসেছে।আমার কোনোমতেই বিশ্বাস হল না।এবার আর শুরু আমায় করতে হল না, উনিই বলে উঠলেন ।


-আসলে একটা ঘটনা যেটা আপনাকে না বলে আমি সোয়াস্তি পাচ্ছি না। প্লিজ, আমাকে বিশ্বাস করুন। 

লোকটার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের উদয় হল। মনে হল আবার টেনস্ড হয়ে পড়েছে ।

-হ্যাঁ হ্যাঁ বলুন । আপনি কি কোনো ব্যাপারে চিন্তিত ? 

-হ্যাঁ , আর সেটা আপনার কবিতা নিয়ে। 

এবার আমার রাগ আরো বেড়ে গেল। 

-আপনি কি ভেবেছেন বলুন তো ? আপনার কোনো দরকার নেই আমার কবিতা ছাপানোর কিন্তু কবিতা নিয়ে আজেবাজে কথা বললে আমি কিন্তু আপনাকে ছাড়বো না। 


-আহা, আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন। আপনার কোনো কবিতা নিয়ে আমার আপত্তি নেই, শুধু ঐ একটা ছাড়া। 

-ঐ একটা মানে কোনটা ?

-যেটা আপনি গত রোববার আমায় পড়ে শুনিয়েছিলেন । 

-আচ্ছা, ' আমি শান্তি বলছি ' কবিতাটা । 


-হ্যাঁ হ্যাঁ ঐ কবিতা, ঐ কবিতা আমার সুখ কেড়ে নিয়েছে, আমার ঘুম কেড়ে নিয়েছে, আমার জীবন ,... না না আমি আর পারছি না। এক গগনভেদী চিৎকারে মনে হল সমস্ত ঘরটা কেঁপে উঠল ।


-প্লিজ, অমল বাবু শান্ত হন। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার কবিতার সাথে আপনার জীবন How is it possible? প্লিজ আমায় ব্যাপারটা বলুন। অমল বাবু শান্ত হলেন আর বলতে শুরু করলেন


-আপনার কবিতার চরিত্র শান্তি নামের মেয়েটির জবানবন্দি , হুবহু আমার প্রথমা স্ত্রী শান্তির সাথে মিলে যায় । আজ থেকে ১৬ বছর আগে শান্তিকে বিয়ে করে বাড়ি এনেছিলাম । বিয়ের এক সপ্তাহ পরে শান্তির বাবা মারা যায় , আর আমার পণের বাকি পঞ্চাশ হাজার টাকা যেটা শান্তির বাবার বিয়ের এক সপ্তাহের মধ্যে দেওয়ার কথা ছিল , সেটাও হাতছাড়া হয়ে যায় । সে সময় সবে আমি প্রেস চালু করেছি। তাই রাগে আমার সমস্ত শরীর জ্বলে উঠেছিল আর ফলস্বরূপ সব রাগ গিয়ে পড়েছিল শান্তির ওপর । ঐ দিনের পর থেকে কোনোদিন আমি শান্তিকে আমার স্ত্রী হিসেবে মেনে নিইনি । অসহ্য যন্ত্রণা দিতাম ওকে , মারধরতো হামেশাই চলত , সব মুখ বুজে ও সহ্য করত । কোনোদিন একটি কথাও না বলে আমার সেবা করে যেত । আমি মোটা টাকার লোভে আবার বিয়ে করলাম। আমার দ্বিতীয়া স্ত্রী শান্তির সঙ্গে কখনোই ভালো ব্যবহার করেনি। আমি কোনোদিন ওকে বুঝতে চাইনি । ও একা একা কাঁদত , কিন্তু কখনো ওর চোখের জল মোছাতে ওর সামনে যাইনি । এভাবে দিন চলতে লাগল । একদিন পাশের বাড়ির পিসি আমাকে বলল শান্তি সন্তানসম্ভবা । এবারো সেই রাগ আমাকে পুনরায় গ্রাস করল । বাড়ি ফিরে ওকে বেধড়ক মারলাম, যা নয় তাই বললাম । তখনো ও একটি কথাও বলেনি । শুধু কেঁদে কেঁদে ওর যন্ত্রণাটাকে কমাবার চেষ্টা করেছে। তখনো বুঝতে পারিনি এটাই ওর সাথে আমার শেষ দেখা। 


পরের দিন সকালে অনেক ডাকাডাকি করেও যখন ওর সাড়া পায়নি তখন দরজা ভেঙ্গে দেখি সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলছে ওর নধর দেহটা । 

-ইস্ , না আর একটা কথাও বলবেন না। আপনি একটা খুনি । আপনার স্ত্রীর সাথে সাথে আপনি আপনার সন্তানকেও খুন করেছেন। আপনি মানুষ নন, আপনি পিশাচ । 


-হ্যাঁ হ্যাঁ , আমি পিশাচ। আমি খুনি, কিন্তু আমার আর কিছুই করার ছিল না। 

-সবসময় আপনি ওকে যন্ত্রণা দিয়েছেন , আর আজ বলছেন আপনার কিছুই করার ছিল না, বাহ্ !


-সত্যি বলছি আপনি বিশ্বাস করুন আমার ভুলটা আমি বুঝতে পেরেছি। ১৬ বছর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছে আপনার কবিতা, আপনার কবিতা শোনার পর থেকে আমি একটি রাতও ঘুমোতে পারিনি। প্রত্যেকদিন স্বপ্নে শান্তি এসেছে, কিন্তু সবসময়ের মতো সে চুপ করে থাকেনি। তার জ্বলন্ত চোখ , তার প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর , ও ভগবান , এ ভুলের শাস্তি দাও। আপনি যা বলবেন আমি তাই করব , কিন্তু প্লিজ ও কবিতা ছাপাবেন না। জীবনের এই কটা দিন আমি বাঁচতে চাই ।আমি আপনার কাছে ভিক্ষা চাইছি । 


-আপনি আবার ভুল করছেন, আপনি আবার আপনার দোষ ঢাকতে চাইছেন , আপনি চাইছেন শান্তির কথা যেন কেউ না জানুক, তাই না। না এভাবে আপনি বেঁচে থাকতে পারবেন না। শান্তি যতদিন না ওর ন্যায়বিচার পাবে ততদিন ওর আত্মাও শান্তি পাবে না আর আপনিও এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন না। আমারতো মনে হয় শান্তির আত্মাই ন্যায়বিচারের জন্য আমাকে দিয়ে এই কবিতা লিখিয়েছে। না হলে এধরনের co-incidence হবে কেন? আর সবাই জানে কবির বলিষ্ট লেখনীই পারে সুস্পষ্ট জনমত গঠন করে সঠিক বিচার দিতে তাই আমার মনে হয় আমার এই কবিতা দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে আপনাকেই সাহায্য করা উচিত । আর আপনি ভগবানকে ডাকছিলেন না , একাজটা করলে ভগবানও আপনাকে ক্ষমা করবে আর শান্তিও। 


           ২৩শে মে দু'মলাটের মধ্যে ' আমি শান্তি বলছি ' প্রকাশ পেল। যে ছোট্ট কথাটা শান্তি বলতে পারেনি সেই প্রতিবাদের বাণই এখন ধ্বনিত হচ্ছে প্রত্যেক নারী-পুরুষের কণ্ঠস্বরে । এ আমার সফলতা নয়, শান্তিরই সফলতা । 


 




साहित्याला गुण द्या
लॉग इन

Similar bengali story from Horror