এবং চা-টা শিক্ষামূলক
এবং চা-টা শিক্ষামূলক


#ThankYou_Teacher
অভিরূপকে পড়ানো ছিল আজ ব্রতর! পড়ানো প্রায় মাঝপথে চলছে - হঠাৎ অভিরূপ ,
-"একটু আসছি দাদাভাই!" বলেই হাওয়া হয়ে গেল! অভিরূপ দশমশ্রেণীর মেধাবী ছাত্র। ব্রতর বাবার অফিসে অনেক উঁচু পদে কাজ করেন অভিরূপের বাবা। আকস্মিক দুর্ঘটনায় ব্রতর বাবা মারা যাওয়ার পরে অভিরূপের বাবা অভিজিৎকাকু প্রচুর সাহায্য করেছেন বাবার অফিস থেকে প্রাপ্য টাকা-পয়সা পাওয়ার ব্যাপারে। অভিজিৎকাকুর অনুরোধেই সপ্তাহে একদিন অভিরূপকে ইংরেজিটা পড়ায় ব্রত। যদিও অভিরূপ নিজেই এতটা পারদর্শী ইংরেজিতে যে ওর কারোর সাহায্যের তেমন প্রয়োজন নেই। অভিরূপকে পড়িয়ে সাম্মানিক-স্বরূপ যে টাকাটা পায় ব্রত সেটা খুব কাজে লাগে। এম.এ পাশ করার পরে এখনো চাকরি জুটিয়ে উঠতে পারেনি ব্রত। কয়েকটা টিউশন পড়ায়।মা-বোন নিয়ে সংসার। মরিয়া হয়ে একটা চাকরির চেষ্টায় আছে ব্রত।
এমনভাবে পড়ানোর মাঝে কখনো উঠে যায়না অভিরূপ। আজ যে কি হলো...!
অভিরূপের মা সুমিকাকিমা চায়ের সাথে বেশ জবরদস্ত 'টা' পরিবেশন করেন ব্রতকে। এতটাই পেট ভরে যায় এখানে সান্ধ্যকালীন চা খেয়ে যে এবাড়িতে আসার দিন রাতে বাড়ি ফিরে ব্রত কিছু খায়না। এবাড়ির চা অত্যন্ত উচ্চমানের। 'টা' স্বরূপ মোগলাইপরোটা, লুচি- আলুরদম, ফিশরোল -একেকদিন একেকরকম পরিবেশন করেন সুমিকাকিমা। বাড়ি ফিরলে বোনটা জিজ্ঞেস করে,
-''আজ চায়ের সঙ্গে কি টা খেলি দাদা?"
অভিরূপদের বাড়ির থেকে ফেরার সময় পাড়ার 'রাঁধুনী রেস্তোরাঁ' থেকে মা-বোনের জন্য মুখরোচক ভাজাভুজি কেনে ব্রত। মা রাগ করে বলেন,
-" অযথা পয়সা নষ্ট !"
বোনটা এত উৎসাহ নিয়ে খায়! মা আর বোন ভালো-মন্দ কিছু না খেলে ব্রত অভিরূপদের বাড়িতে মুখে কিছু তুলতেই পারবেনা! ব্রত না খেলে সুমিকাকিমাও যে দুঃখ পাবেন!
অভিরূপের অনুপস্থিতিতে কথাগুলো ভাবতে ভাবতে হঠাৎ অবাক হয়ে ব্রত দেখল সন্তর্পনে ট্রেতে চা এবং ধোঁয়া ওঠা চাউমিন সাজিয়ে এনে অভিরূপ হাসি মুখে বলছে,
-"দাদাভাই খাও।"
ব্রত কিছু বলবার আগেই ওর মোবাইলে ফোন এলো সুমিকাকিমার! কাকিমা বললেন,
-''ব্রত আজ আমি এক জায়গায় এসেছি । আগে থেকেই আসার কথা ছিল ।তোমার পড়ানোর দিন আমি থাকবোনা শুনে অভিরূপ আমার কাছে চা আর চাওমিন বানানোটা শিখে নিল। এই প্রথম রান্না শিখলো অভিরূপ। আমাকে বললো তুমি নিশ্চিন্তে যাও। দাদাভাইকে আমি চা বানিয়ে দেবো। অনেক ধন্যবাদ তোমাকে ব্রত।কিছুতেই অভিরূপকে রান্নাঘরের কাজ শেখাতে পারছিলামনা। তোমার দৌলতে ছেলে আমার রান্না করতে উৎসাহী হলো!"
চায়ে চুমুক দিয়ে মনটা আনন্দে ভরে উঠলো ব্রতর। কি যত্ন নিয়ে বানিয়েছে অভিরূপ চা! চাওমিনটাতে নুনের পরিমাণ সামান্য বেশি । কিন্তু ব্রতর খেতে পরম সুস্বাদু লাগলো! কি অসম্ভব ভালবাসা, আগ্রহ যে মিশে আছে অভিরূপের এই চা এবং টা পরিবেশনের মধ্যে। একটু লজ্জা পেল ব্রত। ঠিক করলো আজ থেকে রান্নাঘরের কাজটা ওকেও শিখে নিতে হবে। তাহলে মাঝে মাঝে মা একটু বিশ্রাম পাবেন। বাবা সবসময় বলতেন ,
-"সবার আমি ছাত্র - এই মনোভাবটা মনের মধ্যে সবসময় রেখে দিবি ব্রত! জীবনে চলার পথে ছোট-বড় সবার কাছ থেকেই শেখার আছে! "
কথাগুলো যে কি অসম্ভব সত্যি তা আজকে আরো একবার উপলব্ধি হলো ব্রতর। আজ ছাত্র অভিরূপ শিক্ষাগুরুর মতো ব্রতকে শিখিয়ে দিল জীবনের পরম শিক্ষা -
-'চায়ের কাপে তুফান তুলে নয় -চা তৈরির পাত্রেও ভালোবেসে হাত লাগানো উচিত। চায়ের সঙ্গে টা ঠিকঠাক জমবে কিনা না কল্পনা করে নিজের সাধ্যমতো টা তৈরির চেষ্টা করলে নিজের এবং অনেকের মন ও উদরে পরিতৃপ্তি ঘটিয়ে অনাবিল আনন্দ লাভ করা যায়...!'