বুমেরাং( বিশুদ্ধ কমেডি)
বুমেরাং( বিশুদ্ধ কমেডি)
তীব্র গরমে প্রচন্ড হাঁসফাঁস করতে করতে খুব জোরে সাইকেল চালিয়ে সবে মিষ্টির দোকানটাতে ঢুকে- " চকোবার আইসক্রিম আছে কাকু? " কথাটা যেই না বলেছে বুম ওমনি কোথা থেকে যেন প্রায় মাটি ফুঁড়ে এসে বাংলা স্যার বুমের সামনে দাঁড়িয়ে পড়লেন। বুম বুঝে ফেলল -বাংলা স্যার নিঃসন্দেহে কিছু একটা কেলো করবেন! ওনার এ ধরনের চোখমুখের সঙ্গে বুম বেশ পরিচিত! যখন-তখন ছাত্রদের অপদস্ত করতে বাংলা স্যারের জুড়ি মেলা ভার। বুমের আশঙ্কা সত্যি করে বাংলা স্যার বলে উঠলেন,
-" এই যে জীমূতবাহন - ক্লাস ইলেভেন থেকে টুয়েলভে ওঠার পরীক্ষাতে বাংলায় তুই তিন পেয়েছিস বাবা! তোর খাতা দেখে এত গরম লেগে গেছে যে - শেষমেষ দৌড়ে পালিয়ে এসে ভক্ত ঘোষের দোকানে আমি দইয়ের অর্ডার দিলাম। ঠান্ডা লাল দই খেয়ে নিজের মাথা ঠান্ডা করব। "
কথা কটা বলে অত্যন্ত পরিতৃপ্তি সহকারে দোকানের শ্বেতপাথরের টেবিলের দিকে এগিয়ে গিয়ে টেবিলের ওপর রাখা লাল দইয়ের ভাঁড়ে তীক্ষ্ণভাবে চামচ চালিয়ে বুমের মুখের দিকে
তাকিয়ে ওর প্রতিক্রিয়াটা প্রবলভাবে বোঝার চেষ্টা করলেন বাংলা স্যার।
ভক্ত ঘোষের মিষ্টির দোকানে এমনিতেই ভিড় সবসময়
থিকথিক করে। এত গরমের দুপুরেও দোকানে কিন্তু এখনো যথেষ্ট ভিড়। বাংলা স্যারের মুখে বুমের 'তিন পাওয়ার' এমন রসালো কথাটি শুনে গোটা দোকানের লোক একবার বুম আর আরেকবার বাংলা স্যারের দিকে তাকিয়ে খ্যাকখ্যাক করে হাসতে লাগলো! বিনামূল্যে এমন হাসির খোরাক পেলে কেই বা ছাড়তে চায়!
কিন্তু এবার যে ব্যাপারটা হলো -তার জন্য বোধহয় দোকানের কেউই প্রস্তুত ছিলেন না! হঠাৎ করে বুম অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছে! ফুলে ফুলে হাসি যেন ওর থামতেই চাইছে না! অবাক কান্ড! বুমও দোকানের সবার সাথে হাসছে কেন? পরীক্ষায় তিন পাওয়ার কথা শুনে কেউ হাসে বুঝি? এমন অদ্ভুতুড়ে নম্বর পাওয়ার কথা শুনে ছেলেটার কি মাথা খারাপ হয়ে গেল?
কোনোক্রমে হাসি থামিয়ে দোকানে উপস্থিত সমস্ত লোকেদের দিকে তাকিয়ে প্রায় সাক্ষী রাখার ঢঙে বুম এবার বলে উঠলো,
-" আমি না হয় বাংলায় তিন পেয়েছি। কিন্তু স্যার তিনশো সুগারে নির্বিকার চিত্তে দোকানে বসে রসিয়ে রসিয়ে লাল দই খাচ্ছেন - এই খবরটা জেঠিমা মানে স্যারের বউ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পেলে কি হবে আপনারা কেউ কি আদৌ ভেবে দেখেছেন? যতদূর শুনেছি -জেঠিমা স্যারকে খুব চাপে রাখেন! অতএব এরকম সাংঘাতিক কথাটা জানতে পারলে জেঠিমা কি ভয়ঙ্কর রেগে যাবেন বোঝাই যাচ্ছে! আপনাকে আমি বলতে চাই স্যার -তখন জেঠিমার কথার গরমে আপনার সাধের লাল দইটি রং বদলে ফেলবে না তো? লাল দইয়ের স্বাদ মিষ্টির বদলে অন্য কিছু হয়ে যাবে না তো স্যার তখন ? আমার মনে হয় সেই সময় আমাকেই আবার আপনার বাড়িতে চকোবার আইসক্রিম পৌঁছে দিতে হবে স্যার -ঠান্ডা খাইয়ে জেঠিমার প্রেসার নরমাল করার জন্য!"
কথাগুলো বলে চটপট স্যারের দই খাওয়ার ছবিটি ওর মোবাইলে তুলে ফেলল বুম।
যেমন তড়িৎগতিতে দোকানে এসেছিল সাইকেল চালিয়ে - সেভাবেই বুম আইসক্রিমগুলো নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দিল। বাংলা স্যারের সাধের লাল দই পড়ে রইল টেবিলে! নিজের ছবি ডিলিট করানোর তাগিদে এক টোটোওয়ালাকে পাকড়ে বাংলা স্যার প্রাণপণে এখন বুমের পেছনে দৌড়োচ্ছেন আর চিৎকার করতে করতে বলছেন,
-''এর ফল ভালো হবে না বলছি জীমূতবাহন!"
ব্যাপারটা কেমন বুমেরাংএর মতো হয়ে গেল না? বুমকে পরীক্ষায় তিন পাওয়ার কথা বলে খুব চাপে ফেলতে চেষ্টা করেছিলেন বাংলা স্যার। অথচ এখন উনি নিজেই