Saikat Saha

Comedy Classics Children

4.3  

Saikat Saha

Comedy Classics Children

দুগ্গা এলো নব সাজে

দুগ্গা এলো নব সাজে

3 mins
401


মা দুর্গার মনটা এবার একদম ভালো নেই। মর্ত্যে যে কী একটা রোগ এলো কে জানে;সবাইকে একেবারে কাবু করে দিলো। দেখতে দেখতে প্রায় সাত মাসের উপর হতে চলল তবুও রোগ কমার কোনো বালাই নেই। স্বর্গে তো এই নিয়ে রোজ কথাবার্তা চলছেই। তার মধ্যে গতকাল বরের সাথে জোর ঝগড়া হয়ে গেল তার। কারণ কী? না শিব বাবাজী এবার মর্ত্যে তার বউকে ছাড়তে রাজী নন। বছরে তো মাত্র এই একটিবারই বাপের বাড়ি যাওয়ার সুযোগ হয় দুগ্গার,তাও যদি না যেতে পারে,তালে কী হয় !। গতকাল যেই না আমাদের পার্বতী, শিবকে বলেছে," ওগো শুনছো,পরিস্থিতি যাই হোক না কেন ওখানে,তোমাকে কিন্তু আমাকে ওই চারদিনের জন্য মর্ত্যে যেতে দিতেই হবে।" শুনে তো শিব বাবাজী বলে," তুমি কী বলছো তা একবার ভেবে দেখেছো,নাকি বললে আর হয়ে গেল!"


"কেন গো? ভুলটা কী বললাম শুনি! বলি তোমার কাছে বাপের বাড়ি যাবো বলে অনুমতি চাইছি।বলি, শাড়িও চাইনি আর গয়নাও চাইনি" ঠোঁট ফুলিয়ে বলে দুগ্গা।

এই না শুনে শিব বলে,,"বাহ! বাহ! বাহ! এই না হলে তোমার বুদ্ধি! মর্ত্যে কীভাবে রোগটা ছড়াচ্ছে তার খবর তো কিছুই রাখো না। সারাদিন তো নিজের সাজগোজ নিয়েই থাকো।"  


তেড়েমেড়ে উঠে আমাদের পার্বতী বলে,"তুমি এটা বলতে পারলে! বলি সারাদিন তোমার সংসারের জন্য খেটে খেটে প্রাণপাত করে দেই, আর শেষে কী না এই! থাকবোই না আমি আর এখানে। এইবার যাবো আর আসবো না। তখন বুঝবে ঠ্যালা।"


বেকায়দায় পড়ে শিব একটু নরম হয়ে বলে,"ওগো তোমার ভালোর জন্যই তো বলছি।তুমি ওখানে গেলে,তারপর যদি তোমার করোনা হয়ে যায়,তখন কী হবে বুঝতে পারছো? ওরা তো তোমায় চোদ্দ দিন আটকে দেবে। আর আমি এদিকে তোমায় ছাড়া এতদিন থাকবো কী করে? আমি যে তোমায় বড্ড ভালোবাসি। তোমায় ছাড়া থাকতে পারিনা। তাই বলছিলাম,এ বছর না গেলেই কী নয়? ভিডিও কলে এবছর টা ওদের সাথে কথা বললে হয় না?"


দুগ্গা বলে ওঠে,"না হয় না। কী করে হবে শুনি! জানো তো এখানে নেট প্রবলেম করে। তাছাড়া তোমায় কত করে বললাম একটা ভালো ফোন কিনে দাও। তাও তো দিলে না। আমার এই ফোনে ভিডিও কল করতে গেলে সমস্যা হয়,তা তো দেখতেই পাও।"


আড়াল থেকে মা-বাবার সব কথা শুনছিলো ব্যাটা গণেশ। এইবার ভুঁড়ি দোলাতে দোলাতে এসে বলে,"মা কে যেতে দাও না বাবা,প্লিজ প্লিজ, কদিন একটু তালে মামাবাড়ি ঘুরে আসবো।" হাতে মোবাইল,কানে হেডফোন নিয়ে ঘরে ঢোকে এবার কার্তিক, সে বলে,"তোমরা কী এত সারাদিন চেঁচামেচি করো বলো তো! পাশের ঘরে বসে একটা মিউজিক ভিডিও বানাচ্ছিলাম,ভাবছিলাম ফেসবুকে দেবো। তোমাদের জ্বালায় তা করার জো আছে ! 


দুর্গা বলে,"দ্যাখ আমি ইচ্ছে করে চিৎকার করি না। তোদের বাবা আমায় বাধ্য করে।" মা,ও মা, শুনছো, এদিকে একবার আসো তো, পাশের ঘর থেকে ডাক দেয় সরস্বতী। "কী হয়েছে রে? অমন চেঁচাচ্ছিস কেন? বলে পার্বতী ওরফে দুগ্গা।


" দ্যাখো না মা, আমার মেকআপ বক্স নিয়ে লক্ষ্মী টানাটানি করছে। ওর নাকি সব কসমেটিকস শেষ। গতবার যা মর্ত্য থেকে এনেছিল। আমার ও জানো তো এই পুরনো নেলপলিশ আর লিপস্টিক ভালো লাগছে না,এবার মর্ত্যে গিয়ে নতুন কয়েকটা কিনে আনবো।" মুখভার করে বলে সরস্বতী।


দুর্গা বলে,"এসব আমাকে বলে লাভ নেই।তোদের বাবাকে গিয়ে বল। তিনি তো বলছেন,এবার আমাদের যেতেই দেবেন না।" 


"সে কী মা! এসব কী বলছো! আমরা বাবাকে ঠিক রাজী করাবো। তুমি চিন্তা করো না মা একদম।" বলে লক্ষ্মী। "দ্যাখ,তোরা যদি তোদের বাবাকে রাজী করাতে পারিস সবাই,তাহলেই সব হবে।" কথা গুলো বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় পার্বতী।


এইবার গণেশ,কার্তিক,লক্ষ্মী,সরস্বতী সবাই মিলে একসঙ্গে চেপে ধরে এবার ওদের বাবাকে। শিব যত বলে,ওরা ততো নাছোড়বান্দা হয়ে ওঠে। শেষমেশ শিব হার মানে, বলে,"ঠিক আছে তোরা সবাই যখন যেতে চাইছিস,তখন আমার কী আর বলার আছে। তবে হ্যাঁ, তোরা প্রত্যেকে পিপিই পড়ে,ফেস মাস্ক পড়ে,স্যানিটাইজার নিয়ে তবেই যাবি। আর লক্ষ্মী আর সরস্বতী তোদের বলছি,মেকআপ দেখানোর জন্য যদি মুখ থেকে মাস্ক খুলেছিস,তবে তোদের একদিন কী আমার একদিন।"  

সবাই একসঙ্গে বলে ওঠে,"আমরা রাজী বাবা।"


পর্দার আড়াল থেকে এবার একমুখ হাসি নিয়ে বেরিয়ে আসে দুর্গা। এবার বর বলে," আর তুমি আমার উপর রাগ করে নেই তো?"


লাজুক স্বরে দুগ্গা বলে," তুমি না বড্ডো ভালো।"


   


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy