ডুংরি
ডুংরি
ডুংরি তার কালো মোটা পায়ের পাতার ছাপ ভিজে মাটিতে ফেলে দুম দুম করে হন্ত দন্ত হয়ে আল পথ ধরে এগিয়ে চলেছে ।
আলের দুই পাশে জমিতে সবুজ ধানক্ষেত ।
ধান গাছ গুলো জমির সীমানা ছাড়িয়ে আলের ওপর এসে পড়েছে ।
ধান গাছের সবুজ ধারালো পাতায় ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে ডুংরির দুই পায়ের অনাবৃত অংশ।
ধানগাছের পেট থেকে ধানের শীষ গুলো তার সাদা সাদা মাথা নিয়ে উঁকি দিচ্ছে।
এখনও সবুজ রং ধরেনি ।
ধানক্ষেত নিরানীর কাজ চলছে ।
ভাদ্র মাসের গরমে চারিদিকে একটা গুমোট ভাব ।
এই বেলা এগারোটা তেই মাথার ওপর উঠে
সূর্যদেব তার তেজ ভালই দেখাচ্ছেন ।
রোদে ঘেমে নেয়ে গেছে ডুংরি ।
ওর চোখ মুখ পিঠ গলা দিয়ে ঘাম ঝরে পড়ছে।
গায়ের ব্লাউজ খানা ঘামে ভিজে লেপ্টে গেছে ।
সব কিছু কে উপেক্ষা করে কিসের যেন এক অমোঘ টানে ছুটে চলেছে ডুংরি ।
ডুংরি শুধু দূরে তাকিয়ে দেখছে আর ছুটছে ।
আল পথের বন্ধুরতা দেখার তার ফুরসৎ নেই ।
একজন যে তার অপেক্ষায় পথ পানে চেয়ে বসে আছে।
ডুংরি খাবার নিয়ে পৌঁছলে তবে সে খেতে পাবে ।
সে সকাল থেকে পরের জমিতে জন দিচ্ছে ।
খিদে তে পেট চাঁই চাঁই করছে তার ।
একহাতে গামছা দিয়ে বাঁধা একটা বড় গামলা বাটি।
আর একহাতে একটা জলের বোতল।
বগলে এক খানা কাস্তে আর বস্তা নিয়ে তাই ছুটছে ডুংরি ।
মানুষটা কে খাবার দিয়ে এক বস্তা ঘাস কেটে নিয়ে আসবে ।
ঘরে ছাগল গরু রয়েছে ।
এখন মাঠে ধান আছে তাই ছাগল গরু ছেড়ে রাখা যায় না।
ধান কাটা শেষ হলে তবে গরু ছাগল মাঠে ছাড়া যাবে
ততদিন বস্তা বস্তা ঘাস কেটেই গরু ছাগল কে খাওয়াতে হবে।
কোনো রকমে হাঁফাতে হাঁফাতে একটা গাছ তলায় এসে পৌঁছলো ডুংরি ।
এখানে ডুং রির ঈশ্বর বসে রয়েছে ওর অপেক্ষায় ।
ভগবানের ভোগ দিতে আজ একটু দেরি হয়ে গেছে ।
ডুংরি বছর ষোলোর এক আদিবাসী কিশোরী ।
আর ও যাকে ঈশ্বর মানে সে একজন ব্রাহ্মণ সন্তান ।
তার নাম পলাশ ভট্টাচার্য্য ।
