STORYMIRROR

Purabi Sarkar

Tragedy

4  

Purabi Sarkar

Tragedy

ডুংরি ২

ডুংরি ২

3 mins
430

আজ খাবার আনতে এত দেরি কেন ? 
গম্ভীর মুখে বলল পলাশ ।
জানে কাজ করতে করতে হয়তো দেরি হয়ে গেছে আর না হলে ওর মাতাল বাবা নিশ্চয় কোনো ঝামেলা করেছে ।
তবুও জিজ্ঞাসা করলো পলাশ ।
ডুংরি কাঁচু মাচু মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে এক পাশে।
ভয়ে আর খাবার টা ও খুলে দিতে পারছে না ।
সত্যিই বোধ হয় মানুষটা প্রচন্ড খিদেয় রেগে গেছে ।
মনে মনে ভাবলো ডুংরি ।

একে তো দেরি করে খাবার নিয়ে এসেছিস ।
আবার দূরে দাঁড়িয়ে মজা দেখছিস ? 
খাবারটা কি আমাকে নিজে নিয়ে খেতে হবে? 
গম্ভীর মুখে বলল পলাশ।
ডুংরি পলাশের কাছে এসে কাঁপা হাতে গামছার গিঁট খুলে পান্তা ভাতের বাটি এগিয়ে দিল।
পলাশ বোতলের জলে হাত ধুয়ে নিয়ে ছিপি লাগিয়ে পাশে রেখে দিল ।
ডুংরি পলাশের থেকে একটু দূরে সরে গিয়ে বসল ।
কাঁচা লঙ্কা ,পেঁয়াজ নুন তেল আর চানাচুর সহযোগে 
পলাশ পান্তা ভাত খুব দ্রুততার সঙ্গে খেতে শুরু করলো।
খিদে ওর সত্যিই খুব পেয়েছে ।
একবার আড়চোখে তাকিয়ে দেখলো পলাশ ডুংরিকে শুকনো ভীত মুখে বসে আছে।
পলাশ মনে মনে হাসলো ।
ওকে ভয় এই একটা মানুষই করে ।
আর সকলে তো ওকে মানুষ বলেই মনে করে না ।
ভয় করা তো অনেক দূরের কথা।
সমাজের চোখে নিজের বাড়ির সকলের কাছে পলাশ একজন ঘৃণ্য মানুষ ।
দুশ্চরিত্র ,নির্লজ্জ ,বেহায়া ।
সারা দিন আদারে বাদাড়ে ঘুরে বেড়ায় আর ওই আদিবাসী মেয়েটার সঙ্গে ফুর্তি করে ।
কিন্তু 
ঈশ্বর জানেন ।
আপাত দৃষ্টিতে যারা ভদ্র লোক তাদের কথা মত ফুর্তি বলতে যা বোঝায় তার বিন্দুমাত্র অংশ 
ডুংরি আর পলাশের সম্পর্কের মধ্যে এখনও গড়ে ওঠেনি ।
পলাশের মনেও সেই রকম কোনো ইচ্ছে এখনও জেগে ওঠেনি ।
ডুংরীর চোখে ওর প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি দেখতে পায়
পলাশ ।
নিজেকে ডুংরীর চোখে ছোট করতে চায় না ও।
তবুও কারোর কাছে জবাব দিহি করতে চায় না পলাশ ।
জবাবদিহি শুধু মাত্র ভালবাসার মানুষের কাছেই করতে হয় ।
যারা ওর ভালো মন্দের খবর রাখে না।
যারা ওকে ভালবাসে না তাদের কাছে জবাবদিহি করার নিজেকে প্রমাণ করার কোনো দায় পলাশের নেই ।

পলাশের ইচ্ছে করে ডুংরীর বাড়িতেই সারা দিন রাত থেকে যায় ।
কিন্তু ওই যে সমাজের ভদ্র লোকেদের ভয়ে 
ডুংরীর বাবা পলাশ কে রাতে থাকতে দেবে না ।
অবশ্য সে একটা মেয়ের বাবা ।
মেয়ের সেফটির চিন্তা টা তার মাথার মধ্যে সব সময় ঘোরে ।
জাতে মাতাল কিন্তু তালে ঠিক ।
ঘি আর আগুন কে পাশাপাশি রাখলে অঘটন তো ঘটবেই ।
আমার মেয়ের বদনাম হবে ।
পলাশ বামুনের ছেলে ।
সে কি আর আদিবাসী মেয়ে কে বিয়ে করবে? 
তখন আমার মেয়েকে কে বিয়ে করবে।
আমি তো আর সারা জীবন বেঁচে থাকবো না ।
আমার ডুংরি কে তাহলে কার হাতে দিয়ে যাবো ? 
ওর মা নেই ।
ভাইয়েরা সবাই আলাদা থাকে ।
কে দেখবে আমার বিটি টো কে ! 
ডুংরীর বাপের মেয়েকে নিয়ে চিন্তা দেখে পলাশের হাসি পায়।

গত দুই বছর পলাশ ডুংরিদের বাড়ি আসছে থাকছে 
ভালো করে লক্ষ্য করে দেখেছে পলাশ ।
ডুংরীর বাপ ঝকন মার্ডি ।
মেয়ের চিন্তায় কাঁচি মদ গিলে উঠোনের বড় আম গাছটার নিচে সারা দিন বেহুঁশ হয়ে উল্টে পড়ে থাকে 
বাপের কাঁচি মদের টাকা জোগায় ডুংরি ।
বাপ মদ খেয়ে এসে বমি করে বাড়ি নোংরা করে ।
বাপের বমি ও পরিষ্কার করে ডুংরি ।
তার পর বাপের রোগা পটকা অর্ধচেতন 
শরীর টাকে টেনে টুনে শীতলপাটি তে নিয়ে যায়।
বাপকে মাথায় বালিশ ,গায়ে চাদর ঢাকা দিয়ে 
একটা বাচ্চার মতো পরম মমতায় শুইয়ে দেয় ডুংরি 
মদের নেশা কেটে গেলে ঝোকন মার্ডির মেয়ের প্রতি দরদ উথলে ওঠে।
বাপ গিরি ফলানোর কথা মনে পড়ে যায় ।
মিটি মিটি ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে দেখে মেয়ে কে 
ডুংরি ঠিক আছে তো ! 
এতক্ষণ ভগবানের ভরসায় মেয়েকে রেখে নিজে 
নিদ্রা জগতে বিচরণ করছিলেন ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy