ডুংরি 3
ডুংরি 3
পলাশ পান্তা ভাত অর্ধেক টা খেয়ে বাকি অর্ধেক টা রেখে দিল ।
এই নে আমি আর খেতে পারছি না ।তুই খেয়ে নে।
বাটি টা ডুংরীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল পলাশ ।
ডুংরি একবার তাকিয়ে দেখলো পলাশের দিকে ।
জানে ওর জন্যেই রেখে দিয়েছে ।
মুখে বলছে খেতে পারছে না ।
ডুংরি মুখে কিছু বলল না ।
বোতলের জলে হাত ধুয়ে নিয়ে পান্তা ভাতে আর একটু জল ঢেলে হাপুস হাপুস শব্দে
খেতে শুরু করলো।
অনেক কষ্টে ভাতের জোগাড় করতে হয় ।
এই ভাত নষ্ট করতে পারবে না ।
তাছাড়া সত্যি কথা বলতে খিদে ওর ও খুব পেয়েছে ।
এর পর এক বস্তা ঘাস কেটে তবে বাড়ি যেতে পারবে
এখনও অনেক দেরি আছে ।
তাই খেয়ে নেওয়াই ভালো।
পলাশ উঠে চলে এলো পাশের পুকুরের ধারে ।
পুকুরের ধারে বসে হাত মুখ ধুয়ে নিল ।
পলাশ হাত ধুয়ে ওঠার সময় দেখলো পুকুর ধারে একটা আগাছা ওর কচি কচি শাখা গুলো মেলে ধরে যেন ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।
পলাশ একবার ডুংরীর দিকে তাকিয়ে দেখলো।
ডুংরি ভাতের বাটি টা দুই হাত দিয়ে দুই ঠোঁটের মাঝে নিয়ে ভাতের শেষ জলটুকু চুমুক দিয়ে
নিশ্বেস করছে ।
পলাশের ঠোঁটে একটা মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠল।
পাশের আগাছার একখানা কচি শাখা পট করে ভেঙে ফেলল পলাশ ।
তার পর ওটা হাতে করে নিয়ে এসে ডুংরীর কালো চুলের খোঁপায় গুঁজে দিল।
পলাশের হাতের ছোঁয়ায় ডুংরি কেঁপে উঠলো সামান্য।
ডুংরির হাত মুখের যৌথ প্রক্রিয়া ক্ষণিকের জন্য ব্যাহত হলো ।
পলাশ সরে এলো ডুংরীর পাশ থেকে।
ডুংরি আবার সচল হয়ে পান্তাভাতের জলটুকু নিঃশেষ করে উঠে পুকুরে চলে এলো ।
ভাতের বাটি ভালো করে পুকুরের জলে ধুয়ে নিয়ে এসে বাটি আবার গামছায় বেঁধে রেখে দিল ।
জলের বোতল রেখে দিল ।
ঘাস কেটে নিয়ে এসে ভাতের বাটি আর জলের বোতল নিয়ে যাবে ।
বস্তা বগলদাবা করে কাস্তে হাতে নিয়ে জমির আল ধরে হাঁটা দিল ডুংরি ।
একবারও পলাশের দিকে তাকিয়ে দেখলো না।
এক রাশ লজ্জা এসে ঘিরে ধরেছে ডুংরি কে ।
এই মানুষটার সঙ্গেই তো সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সময় কাটায় ডুংরি ।
তাহলে আজ কেন হঠাৎ কেঁপে উঠলো ও?
কেন বয়ে গেল সারা শরীর জুড়ে শিহরণ ?
নিজেকে বড্ড ছোট মনে হচ্ছে ডুংরীর।
যাকে ও এতদিন ঠাকুরের আসনে বসিয়ে পুজো করে এসেছে তার সংস্পর্শে এসে ওর শরীর বেইমানি করছে ।
কিছুটা এগিয়ে গিয়ে আলে বসে বসে ঘাস কাটতে শুরু করলো ডুংরি ।
পলাশ বোতল থেকে আর একটু জল খেয়ে গাছের
গোড়ায় গিয়ে বসলো ।
জল কাদা লাগানো প্যান্টের পকেট থেকে একটা বিড়ির প্যাকেট লাইটার বের করে বিড়ি ধরিয়ে একটা সুখ টান দিল ।
পলাশ এক মনে বিড়িতে টান দিচ্ছে ।
দুটানে একটা বিড়ি শেষ হয়ে গেল ।
আর একটা বিড়ি ধরালো।
পলাশের দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে দূরে জমির আলে কর্মরত ডুংরীর ওপর ।
শুধুই কি দূর থেকে দেখেই আশ মেটাবি না কি রে ?
বেশ তো ডাগর হয়ে উঠেছে ।
মাঝে সাজে একটু কাছেও তো ডেকে নিতে পারিস।
সারা দিন তো ওর সঙ্গেই থাকিস ।
তাও নিরামিষ থাকিস কি করে ?
না বাপু ,তোর এলেম আছে বলতে হবে ।
আমি হলে তো কবেই পিষে ফেলতাম ।
সজল কথাটা বলল পলাশের পাশে বসতে বসতে ।
পলাশ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলো সজলের দিকে
সজলের কথার অর্থ যে কি সেটা ভালোই বুঝতে পারছে পলাশ ।
দে একটা বিড়ি দে । সজল একটা ফিচেল হাসি দিয়ে বলল ।
পলাশ বিড়ির প্যাকেট এগিয়ে দিল সজলের দিকে।
সজল প্যাকেট থেকে একটা বিড়ি বের করে নিয়ে বিড়িটার সামনে একবার পিছনে একবার ফুঁ দিয়ে দিল ।
বিড়িটা ঠোঁটের ফাঁকে গুঁজে নিয়ে লাইটার জ্বালিয়ে বিড়ি ধরালো ।
দুই বন্ধু মিলে ধূমপানে ব্যস্ত হয়ে পড়ল ।
সজল কৈর্বত্য পলাশের বন্ধু ।
দুজনে পরের জমিতে জন দিচ্ছে ।
মাঝখানের খাওয়ার বিরতির পর গাছের ছায়ায় বসে একটু জিরিয়ে নিয়ে আবার জমিতে কাজ করতে নামবে ।
পলাশের স্বজাতির বন্ধু নেই ।
ওর যত ভাব সব নীচু জাতির সঙ্গে ।
পলাশের জাত ভাইয়েরা সবাই ওকে অচ্ছুত করে রেখেছে ।
পলাশের অবশ্য সে নিয়ে কোনো হেল দোল নেই
সে দিব্য আছে নিজের মতো করে ।
পরের জমিতে জন দেয় ।
অবসর সময়ে ডুংরীর সঙ্গে মিলে বেতের কাজ করে
বেতের ঝুড়ি ,কুলো এই সব নানা রকম জিনিস বানায় দুজনে মিলে ।
তার পর সেগুলো হাটে বিক্রি করে আসে ।
হ্যাঁ রে তোর সারা জীবনের ভাত কি ওই রাঁধবে না কি রে? সজল কথাটা বেশ নাটুকে ভঙ্গিতে বলল।
পলাশ : দেখা যাক ।
সজল : তুই ওকে ছাড়তে পারবি বলে তো মনে হচ্ছে না ।
পলাশ মৃদু হাসলো ।
