ড. রীতা দে- কবিতার
ড. রীতা দে- কবিতার


সেদিন হঠাৎ দেখি
মনটা একেবারে মরা মাছের চোখের মতো
অথচ কি অদ্ভূত সেকেন্ডে ঈশ্বরের সঙ্গে কোলাকুলিটা সেরে নিলাম ।
( বাগর্থ - ড. রমেশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায়
রীতার কবিতা ঐ দর্পণের মতো যেখানে বারে বারে সে আত্মসমীক্ষা করে ।
কবিতার দর্পণে সে হঠাৎ দেখলো তার মনটা একেবারে মরা মাছের চোখের মতো। অর্থাৎ মনটা একেবারে অসাড় হয়ে পড়ে রয়েছে ।কিন্তু মরা মাছের চোখটা দেখলে হয়তো মনে হয় না মাছটা মরে গেছে , তেমনি মনে হয় একটা অস্তিত্ব আছেই , কিন্তু সে ক্রিয়াশীল নয় । অর্থাৎ কবির চিত্তবৃত্ত নিরুদ্ধ হয়েছে । পতঞ্জলি বলেন -
যোগঃ চিত্তবৃত্তি নিরোধঃ। অর্থাৎ চিত্তবৃত্তি নিরোধই যোগের উদ্দেশ্য ।মনটা যখন স্থির নিষ্ক্রিয় মৃতপ্রায় হয় তখনই পরামনের সত্য আমদের সামনে প্রতিভাত হয় । তাই রীতা বলে।
' সেকেন্ডে ঈশ্বরের সঙ্গে কোলাকুলিটা সেরে নিলাম '। একেই রাস বলে । মানুষ যখন সুষুপ্তিতে মগ্ন হয় তখন তার সত্ত্বা পরামনের সঙ্গে কোলাকুলি করে । আর জাগ্রত অবস্থাতে যাদের মন ঐ মরা মাছের চোখের মতো নিষ্ক্রিয় হয়ে ওঠে তারাও ঐ পরামনের সঙ্গে কোলাকুলি করে নিতে পারে। এসব কথা কবির কাছে নিছক তত্ত্ব নয়। তিনি নিজের অভিজ্ঞতায় সমস্ত অনুভূতি লাভ করেছেন ।
আর তাই ' ঈশ্বরেরসঙ্গে কোলাকুলি সেরে নিলাম ' পঙক্তির পূর্ববর্তী পঙক্তি ' কি অদ্ভূত '।
সহজ কবি রীতা সহজ সাধকও ।তিনি আত্মসমীক্ষা করেন এবং আত্মসমীক্ষায় হঠাৎ দেখলেন মনটা নিষ্ক্রিয় হয়ে উঠেছে । আর সঙ্গে সঙ্গে ঈশ্বরের সঙ্গে কোলাকুলিটা সেরে নিলেন ।এ তো সচরাচর হয় না। আর তাই রীতার বিস্ময়সূচক উচ্চারণ - 'কি অদ্ভূত '। সাধারণতঃ কবিতা ব্যক্তির উপলব্ধিকে ভাষা দেয় ।সেই উপলব্ধ হয়তো Uncommon বা সকলের অভ্যাসে নেই । এই অন্য ধরণের উপলব্ধি পাঠককে বিস্মৃত করে । এবং রীতার কবিতার প্রতি আকৃষ্ট হয় । অন্য স্তরে দেখলে ভাববাদী দর্শন এবং আধ্যাত্মিকতা সাধন ভজনের মধ্যে দিয়ে যে সমস্ত উপলব্ধি সম্ভব বলে ঘোষণা করে সেগুলো রীতা অনায়াসে নিজের মধ্যে উপলব্ধি করে । আর তাই কবিতাগুলি একটি স্তরে ভাববাদী দর্শনের সূত্রাকারে নিবেদন ।তার কবিতা পড়লে ভারতীয় দর্শন এবং আধ্যাত্মিকতার মণিকোঠায় যে কোনো পাঠক অনায়াসে আপনার অজ্ঞাতসারে উপনীত হয় ।)