"দ্বিভুজা"
"দ্বিভুজা"
ও বাবা!
আবারো মেয়ে সেকি?
আবারো মেয়ে হোয়েছে বুঝি? ওর আর চেলে হোবেনা|
অর্ধ গ্য়অনের্র মধ্যে রুনুর কাঁনে কথাগুলো বাজছিলো|
কিন্তু কারা কারা বোলছে রুনু বুঝতে পারচেনা|
একটা ঘুম ঘুম ভাব|
তবে রুনু জানতো তার প্রথম সন্তান মেয়ে বোলে কেউ খুশি হয়নি|
এইবারে দ্বিতীয় টাও মেয়ে|
জ্ঞান ফেরার পর, জখোন সিস্টার রুনুকে বাচ্চা দেখিয়ে বোললেন
"দেখুন মিসেস রায় আপনার কেমন ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে", রুনু কিন্তু খুব খুশি হয়েছিলো|
মেয়ের মুখটা দেখে তার সব জোন্ত্রোন চোলে গেচিলো|
মনে হচ্ছিলো কখন ওকে নিয়ে পুতুলের মতন সাজাবো|
বড় মেয়ের বেলাতেও এটাই হয়েছিল|
বড় মেয়ে টিংকুর বয়স এখন 7 বছর|
প্লান করেই সেকেন্ড বাচ্চাটাকে নেয়া|
মা আর বাচ্চা দুজনেই সুস্থ, তাই আজকে নার্সিংহোম থেকে ছেড়ে দেবে|
রুনু অধির আগ্রহে অপেক্ষা করে কখন তার স্বামী শ্বশুরবাড়ির কেউ আসবে তাদের নিতে|
না... কেউ আসেনি!
শুধু রুনুর বড় মেয়ে তার মামা আর মামীর সাথে এসেছে বোনকে দেখতে আর বাড়ি নিয়ে জেতে|
রিঙ্কু সেই কি আনন্দ! এতদিন সে একা ছিলো, এবার বোন হয়েছে|
সে দিদি হোলো| চারটি খানি কথা!!
বাড়ি ফিরে বুঝতেই পারলো তাকে ও তার কনিষ্ঠা কে কেউ উষ্ণ আওহান করার কথা ভাবেনি|
"তাতে কি? আমরাতো পাঁচটাই বোন| তবুও আমাদের বাপের বাড়িতে আমাদের কত আদর ছিলো|
মধ্যবিত্ত ঘরে যতটা স্বচ্ছলতা পাওয়ার কথা তার থেকে কিছু কম তো পাইনি|
বরং, মা, বাবা, ঠাকুমা, দাদু ,সামর্থের বেশি দিয়েছেন|
সেটাও মূল্যহীন আদর, ভালোবাসা, উষ্ণতায় ভরা আশীর্বাদ|"
তবু কি রুনুর মনটা খচখচ করছে না? সুস্থ বাচ্চা নিয়ে ফেরাটাই তো কাম্য চিলো, তাই না?
ছেলে না মেয়ে তাতে কি যায় আসে?
তবে আজ ও সমাজে মেয়েদের অবস্থা কঠিন|
কিন্তু সেই কথা ভেবে যদি তার বাড়ির লোকেরা মুষড়ে পড়ে, সেটাও তো ঠিক নয়|
এমনিতেও মেয়েরা কোনদিনই কিছুতেই কম চিলো না|
কেবল সমাজের কিছু নিয়মে বাঁধা পড়ে তখন যা সম্ভব হয়নি বাঁধা পড়ে তখন জা সম্ভব হয়নি
আজকের মেয়েরাসেই বাধা ডিঙিয়ে অনেক এগিয়ে গেছে|
ঘরে-বাইরে সমানভাবে পারদর্শিনী|
রুনু বিয়ে হয়েছে 11-12 বছর| তখনো রুনুর প্রত্যেকটা বন তো পড়াশোনা গান-বাজনা চালিয়ে গেছে|
ওদের মায়ের কোনো বিষয়ে বিদ্যালয়ের তকমা ছিলোনা ঠিকই; কিন্তু সর্বান্তকরণে তিনি বিদুষী ছিলেন|
রুনুদের প্রথম গুরু তো তিনি| সেটা কি পড়াশোনা, কি নাচ-গান|
"জখন আমাদের পাড়ায় প্রথম ডান্স-জামাই আমি নামলাম-"চিত্রাঙ্গদা", মাই তো আমাকে পুরো কাহিনী বুঝিয়ে সেইমতো নৃত্য ভঙ্গিমায় সাহায্য করেছিলেন|
মা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যা রবীন্দ্রনাথ বোঝাতে চেয়েছিলেন|
মেয়েরা তাদের যথাযথ সম্মান চাই| পুরুষ কে ছোট করে নয়, আবার ছোট হয়েও নয়|
সংসারী হয়ে, সহমর্মী হয়ে, সহধর্মি হয়ে|
কিন্তু আমি এত কথা ভেবেছি, এভাবে ভাবতে শিখেছি, অথচ বিয়ের পর ঠিক যতটা সম্মান আমার পাওয়া উচিত ছিলো পেয়েছে কি?
সংসারের নানা কাজে-কর্মে, দায়িত্বপালনের অবকাশের এরকমটা যে ভাবি নি, এমন কিন্তু নয়|
কিন্তু অনেকখানি মানিয়ে নিয়েছি|
------------------------
আজ ছোট তিন বছর বয়স|
ওকে ওর দিদির মতন ভালো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে দেয়ার কথা যখন উঠল, তখন সবাই প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠলো| তখন আমার সমস্ত কথা যা আগে বলা হয়নি প্রতিবাদী হয়ে উঠলো|
আমার শ্বশুরবাড়ি যথেষ্ট সচ্ছল| আমার স্বামী খুব বড় অফিসে প্রচুর পদে কাজ করেন|
আমিও বহুবছর কলেজে অধ্যাপনা করেছি| কিন্তু বিয়ের পর সংসারের দায়িত্ব, মেয়ের দায়িত্ব, সেই চাকরি আমাকে ছাড়তে হলো| তবে ছোট কে ভালো স্কুলে পড়াতে পারবো না, এটা আমি মা হয়ে মেনে নিই কি করে?
আমার দুই মেয়েকে নিয়ে আমার দুই চোখে অনেক স্বপ্ন|
বড় মেয়ে অত্যন্ত মেধাবী| কিন্তু দু'জনকেই গড়ে তোলার দায়িত্ব যে আমাকেই নিতে হবে|
সে আমি বেশ বুঝতে পেরেছি| আর তাতে আমি পিছুটান নেই|
দুই মেয়েকেই আমি অনেক অনেক উঁচুতে দেখতে চাই|
তবে এই পরিস্থিতিতে কি করি? আমি স্বপ্ন সাঁতার করার কথাই ভেবেছি|
------------------------
পাড়া-প্রতিবেশী পাড়া-প্রতিবেশী আসছেন বাচ্চা দেখতে|
তবে তাদের মুখেও কোন আলাদা কথা নেই|
একটা ছেলে হল না? সংসারের হাল ধরবে কে?
অথচ আমি জানি, তাদের অনেকেরই ছেলে আছে, যারা বাবার পকেট মেরে দিদি সিগারেট খায় আর মোড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে স্কুল কলেজ যাওয়া মেয়েদের কটুক্তি করে|
তারা আবার গর্ব করে বলে আমার তো ছেলে!
"সোনার আংটি বেকা হলেও ক্ষতি নেই"
মাঝেমধ্যে মনে হয় বলি "কাকিমা আংটিটা পড়ার সময় কিন্তু সোজা করেই পড়তে হবে| আর আপনার ছেলেকে সোজা করবে কে? পুলিশের চাবুক?"
কিন্তু বলি না এগুলো| সব আমার মনে চাপা থাকে|
যতই পড়াশোনা করি, যতই সত্যের পক্ষপাতিত্ব করি, আমি যে "লক্ষী বধু"!
এই তকমা সরাতে মনে জোর লাগে যে|
যাগ্গে যত আবোল-তাবোল পুরনো কথা ভাবছি|
আসল কথা হলো ঝুমকি কে ভালো স্কুলে দিতে হবে|
আজকাল দেখছি ও কেমন ছাড়াছাড়া ব্যবহার করছে|
অবশ্য আমি জানিয়ে সংসারের কাজ, দুই মেয়েকে সামলানো, এইসব করে রাত্তিরে আমিও খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ি|
তবুও ছুটিছাটায় ও যখন বাড়িতে থাকে, কখনো সাংসারিক অনেক কথা হয়|
কিন্তু তাতে ঝুমকি কোথায়? ওকে তো কেউ আদর করে না|
মোটকথা পরিবেশটা এমন পাইনা যে ওর স্কুলের কথা বলবো|
আমি জানো মাঝে মধ্যে বোকা বোকা কথা খালি| জামুন, ঠিক আছে নাও হয় ছোট অসাধারণ স্কুলে পড়বে|
কাহাতক আর অশান্তি ভালো লাগে|
কিন্তু আমার ভেতরের পঞ্চজন্য আমায় হুমকি ভোরে জাগিয়ে তোলে|
না! এই অবস্থার সঙ্গে কখনোই কম্প্রোমাইজ করতে পারবোনা|
যতটা সম্ভব শান্তি বজায় রেখে চেষ্টা করে ছোটমার কথা বোঝাতে চাইছি|
ও এখন তিন, কিন্তু যখন তার তেরোহ হবে ওকি প্রশ্ন তুলবে না? দিদি এত ভালো কনভেন্ট স্কুলে পড়লেও আর আমার বেলায় এমন কেনো করা হলো? গভমেন্ট স্কুল?
ও তো দুঃখ পাবে...
আর ওর প্রতি এই অবিচার করার দায়ে আমি মা হয়ে বোইবো কি করে? আর কেনই বা?
শান্তি আর বজায় রাখা গেল না|
বাড়ির কেউ আমার যুক্তিগ্রাহ্য মধ্যে আন্লোনা|
উপরন্ত মেয়ে তো বিয়ে দিতেই হবে, হাতা-খুন্তি নড়বে বাচ্চা মানুষ করবে|
যেমন আমিও তো করেছি|
আমার পড়াশোনা কি কাজে লাগলো? কিন্তু আমি নিজেই বিশ্লেষণ করে দেখেছি হাতা খুন্তি নারী বা কাগজ-কলমে ধরি, সুশিক্ষিত হোযে জে আত্মবিশ্বাস, আত্মসম্মানের, বোধ হয়, জন্ম হয়, তাকে অস্বীকার করা যায় কি?
একটা ভালো মানুষ হতে গেলেও মূল্যবোধ দরকার| তার বেশীটাই নির্ভর করে যথার্থ শিক্ষার ওপরে|
এতে কোনো দ্বিমত নেই, আর কোন বিকল্প নেই|
আমি প্রস্তুত এই লড়াইয়ের জন্য
জানি দুই মেয়ের দায়িত্ব নেয়া আমার জন্য খুব সহজ নয়|
সহজ নয় বলেই তো পাথর হাত দিয়ে সরিয়ে ফেলা যায় না|
শক্তি লাগে পথ তৈরি করতে| আর নারী তো শক্তি রুপা|
"শক্তি রুপেনা সমস্থিতা"
যিনি পূজিত হন তিনিও তো নারী| মা ধরিত্রী আমাদের সবাইকে ধারণ করেন|
তাহলে নারী হয়ে আমি আগামী যুগের দুই নারীকে আমাকে গোর্তেয হোবে|
এই ভাবেই তো সমাজকে বদলাবো আমরা|
নিন্দুকে যাদের বলে 'ফেমিনিস্ট' 'নারীবাদী' কবিগুরু বলেছেন "সবলা"|