STORYMIRROR

Arijit De

Tragedy Crime Thriller

3  

Arijit De

Tragedy Crime Thriller

চরিত্র

চরিত্র

7 mins
478

১.

আকাশটা আজ ঘন কালো মেঘে ঢাকা, আর মাঝখানের সিঁদুরে অংশটা যেনো উন্মুক্ত যোনি। শরীরকে খদ্দেরের সাথে খেলিয়ে মুক্ত শরীরে তাই ভাবছে শক্তি। আর ভাবছে তারও যদি একটি ওরকম যোনি থাকতো, যদি এই পুরুষ শরীর তার না হয়ে হতো একটি প্রকৃতি এর মতো নারী তাহলে হয়তো তার জীবনও সুন্দর হতো। পরিবার ও সমাজ দুই জায়গা থেকেই তার বহিষ্কার আর সমকামী ভালোবাসার মানুষ তাকে ব্যবসায় নামিয়ে বানিয়ে তোলে হিজড়ে। 

"অ্যাই বাবু টাকা দিবি না! চুষে তো নিলি সব সঙ্গে আজ তোর রসও ভরে দিলি, বেশি নেবো ১০০," একটু বিরক্তি আর ঘেন্নাতেই বললো শক্তি।

"হারামজাদি মাগী," একটু জিভ কেটে,"তুই তো আর মাগীও নস , হিজড়া," বিশ্রী হাসি হেসে বললো ওই খদ্দের । "একান্ত ভালো মজা দিতে পারিস বলে তোর সাথে দুপুর কাটাই রাত তো কাটাবো চাঁদনিদের সাথে।"

" ওসব আমার জানার ইচ্ছা নেই তুই আমার টাকা দে আর বেরো। এমনিও বউ তোর ভালোই ঢাউস ওকে সুখ তো দিতে পারিস!"

"বাঁরা তোকে আমার বউ এর জন্যে পীড়িত মারতে বলেছি বানচোত! নে তোর টাকা!"

 শক্তি ওই নগ্ন অবস্থাতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে।

"আমার কি দোষ! আমি তো বলিনি আমাকে এইরকম বানাতে , না এরকম থাপানো জীবন দিতে;যাকগে রাত হচ্ছে আবার বেরোতে হবে আবার কাজ শুরু করতে হবে তাই না! অ্যাই বাবু খুব ব্যথা করছে কি! যা নে তোর টাকা ফেরত আর যে ওখান থেকে কষ পড়বে না!"


২.

গত একটা বছর হয়েছে একটি একতলা বাড়ি কিনে ভালোই সংসার করছে সবে দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ করা রাজিয়া আর তার স্বামী অজয়। তবে দু মাস আগেই রান্না করার সময় প্রেসার কুকারটা ফেটে যায় রাজিয়ার সামনে। ভাগ্যক্রমে সেদিন অজয় বাড়িতে ছিল তাই হয়তো রাজিয়া কে বাঁচানো গেলেও তার পেটে বড়ো হতে থাকা তাদের সন্তান আর তার ওই সুন্দর মুখটিকে বাঁচানো যায়নি। এরপর রাজিয়া অনেক ভেঙে পড়ে আর অজয় দুজনকে খুইয়ে ফেলে,তার সুন্দর হাসিখুশি রাজিয়া আর তাদের সন্তান তবে তখনও সে নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করে আর স্ত্রী এর ভালোর জন্যে সমস্ত আয়না সরিয়ে দেয় নিজের চোখ ছাড়া।

আজ তিন–চার দিন ধরেই ওদের বাড়ি থেকে সাপ মরার গন্ধ ছড়াচ্ছে একান্ত নির্জন এলাকা বলে পাড়া পড়শি কমপ্লেন করার মতো কেউ ছিলো না আর তাছাড়া রাজিয়া এই গন্ধের কারণ খুঁজে পায় না শুধু অজয়কে বলে ,"তুমি ঠান্ডার অজুহাতে স্নান করছো না বলে তোমার গায়েরই গন্ধ। এমনিও কলেজে দেখতাম তো এক্সাম এর দিন দেরি হলেই স্নান না করেই আসতে।" অজয় হেসে উত্তর দেয়," ভাগ্যিস তোমার সাথে বসতে হতো না তখন নইলে আজ হয়তো আমাদের বিয়েই হতো না। " 

"হ্যা তাহলে তো তুমি তোমার ওই অ্যাসিস্ট্যান্ট কে বিয়ে করতে," অভিমান করে বলে রাজিয়া।

" ওটা ভুল ছিল আমার স্বীকার করেছি, আমিও মানুষ আমারও মোহ হয়। আর তাছাড়া কালকেই তো তোমার গাড়িতেই অ্যাকসিডেন্ট হয়ে মারাগেলো।"

" সে ঠিক করেছি আর অন্য কাউকে নিয়ে কথা নয় তুমি তো এখন থেকে আমার কাছেই থাকবে শুধু চল আজ দুজনে একসাথে স্নান করবো।"

এই বলে রাজিয়া একটি পচন ধরা কঙ্কাল সার দেহ নিয়ে নগ্ন হয়ে স্নান ঘরে গেলো। আজ যেনো অজয় আর রাজিয়া আবার মিলন করবে।


৩.

চা এর পেয়ালাটা থেকে চা ঢেলে কাটা ঠোঁটে চা খাওয়া এর চেষ্টা করলেও ব্যথায় তা সম্ভব হচ্ছে না।রাতের অন্ধকার আজ যেনো শান্তি এর নিঃশ্বাস ফেলছে তবে তাও যেনো অশরীরীয়। ডাইনিং টেবিলে একটি মোমবাতি জ্বলছে তবে তা যে জীবনকে আলোকিত করতে পারেনা। 

নিশা এর কান্না যেন আজ কেমন হায়না এর হাসি শিকার এর পর।

"অনেক অপমান করেছো রাজ!"নিজের ছেঁড়া জামার একপাশ থেকে উন্মুক্ত স্তন থেকে বেরোনো রক্ত পরিস্কার করতে করতে বললো নিশা।"খুব সস্তা তোমার কাছে মেয়েরা, ধর্ষণ তোমাদের কাছে খেলা। তবে আর না , তুমি আর পারবেনা কোনো মেয়েকে ধর্ষণ করতে।"

ডাইনিং এর যায় জায়গায় মোমবাতি জ্বলছে সেখানেই পড়ে রয়েছে রাজ এর নিথর দেহ।চোখ যা দিয়ে নারীদের শোষণ করতো , যেই জননাঙ্গ দিয়ে ধর্ষণ করেছিলো তাই কোপানো হয়েছে বেশ কয়েকবার ছুরি দিয়ে।

"কিরে সেদিন রাতের অন্ধকারে তো বুঝতে পারিসনি কি সুন্দর করে জীবনটা নষ্ট করে দিলি! তার আগেও গ্রামের মেয়ে বলে কত অপমান করেছিলি, আজ সব কিছু এর হিসাব পূরণ হয়ে গেলো।"নিজের বাঁ হাতের কেড়ে আঙুল এর ভাঙা নখটা পুরো খুপরে তুলে দিলো নিশা। যেনো তার শরীর থেকে সমস্ত ব্যথা চলে গেছে।

একটি ফাঁদ পেতেছিল নিশা রাজ এর জন্য। নিজের রূপের মায়া আকৃষ্ট করে রাতে ওর ফ্ল্যাট এ ডাকে নিশা। তারপর রাজ কে তার ডাইনিং এ একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রেমনিশির আভাস দেয়। তবে রাজ তার কাছে এলেই সে নিশা হাতের পেছনে রাখা ছুরিটা নিয়ে নিশাচরের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে রাজের গায়ে এবং তার প্রথম চোখে আক্রমণ এর সাথেই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আর নিশা তার আরেকটি চোখ খুবলে নেয় আর সেই রাতের ব্যথার আভাস দিতে থাকে। বোঝাতে থাকে একটা মেয়েকে ধর্ষণ করল তার কেমন কষ্ট হয়।সবশেষে রাজ এর জননাঙ্গতেও সে কয়েকবার কোপ মারে।

আজ সব কিছুর বদলা নিয়ে নিয়েছে নিশা। ও বলে,"হ্যা আমিও আজ ধর্ষক।আমিও তোর মতো একজন সুন্দর দেখতে একজনকে নৃশংস ভাবে ধর্ষণ করে খুন করেছি! যেমন তুই লিলি এর সাথে করেছিস। ও গ্রামের মেয়ে বলে অপমান করেছিলি আর সবশেষে ধর্ষণ ওর ও চোখ উপড়ে যোনি তে শাবল!"কেঁদে ফেলে নিশা," ওকে খুব ভালোবাসতাম, ওই আমার কাছে সব ছিল, আমাদের পরিবারও অনেক ঝামেলার পর রাজি হয়েছিল কিন্তু তোদের মতো সমাজের কীট সব শেষ করে দিস। তবে ওকে ভালোবাসি আমি তাই ওর সাথে হওয়া অন্যায়ের বদলা তো নিতে হতো।"

এই বলে নিশা লিলি এর ফটো বার করে ফোঁপাতে ফোঁপাতে এক অদ্ভুত হাসি হাসতে থাকে আর ওই ছুরি দিয়েই নিজের চুল গুলো গোঁড়া সহ কাটতে থাকে কারণ ধস্তাধস্তিতে রাজ এর হাত তার চুলেও পড়েছিল।


৪.

আজ প্রায় পাঁচ বছর হতে চললো গল্পের গরু গাছে চড়ছে না l না কথাটি ভুল দুই বছর হতে চললো কোনো গল্পের চিহ্ন নেই। আসলে ঘটনা যখন চোখে ভেসে ওঠে না তখন কল্প গল্পরূপ নেবে কি করে!

এই ভাবনাই যেনো মিহির বাবুকে আরো জর্জরিত করে ফেলছে। তবে সেই ভাবনা যে আর তিনি প্রকাশ করতে পারছেন না। শুধু এক ভাবনার ওপর আরেক ভাবনা ভেবে যাচ্ছেন , যাকে মেডিকেল এর ভাষায় বলে overthinking syndrome । দীর্ঘ দু'বছর তার এই চিন্তমনি চিত্তের জাগরণ ঘটে চলেছে। না হবারও কোনো কারণ নেই; পাঁচ বছর তিনি জেল এ বন্দী কেনো কেউ জানে না। যারা জানে তারা বলতে গিয়েও শিউরে ওঠে।

আজ থেকে নয় বছর আগে তিনিও একজন সাধারণ মানুষ ছিলেন। সাহিত্যিক হয়ে ওঠা তার এক অনবদ্য স্বপ্ন। তবে তার লেখা কখনোই publisher এর চিলেকোঠা থেকে বেরিয়ে আসেনি। তার একমাত্র কারণ তিনি সমাজ কে নিয়ে লিখতেন , যা ওই publisher দের কাছে মার্কেট এ খাবে না। মানুষের চাই তাদের মনের মতো গল্প।

মিহির বাবু বলতেন,"ওসব ওই গুমুখোদের মূর্খতার চিত্রপট। ওরা কি বোঝে সাহিত্য! যত তো ঘুষখোর দল!" তবে তিনি মনে কষ্টও পেতেন নিজের অবস্থা ভেবে। 

দিনদিন সে নিজেকে আরও গুটিয়ে নিতে থাকে। বাড়িতে তার স্ত্রী পরকীয়া করছে। সে সব জানে কিন্তু ইচ্ছা আর টাকার মধ্যে সে ইচ্ছা কে বেছে নিয়েছে।কিন্তু এই চারিদিকের চাপ তাকে ধীরে ধীরে গহন পথে ঠেলে দিচ্ছে।

একদিন মিহির বাবু তার স্ত্রী কে ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে বললেন," এসব ছাড়ো আর নিতে পারছিনা! মনে পড়ে না কলেজ স্ট্রীট এ দাড়িয়ে নিজে আমাকে propose করেছিলে, নিজেই বলেছিলে আমি যাই করি তাতেই আছো পাশে তুমি।"

" ওসব বলেছিলাম ঠিকই কিন্তু এতটাই সুখ বিসর্জন দিতে হবে! তুমি পাগলামি করলে তো আমি নিজের জীবন বিসর্জন দিতে পারিনা। Ok, it's enough I want divorce। "

"দেখো একদিন ঠিক আমার গল্প ছাপানো হবে শেষবারের মতো তোমায় বলছি।" 

"গল্প লেখার মুরোদ আছে! কারুর মনে লাগেনা তোর গল্প । সই টা করে আমায় মুক্তি দে।"

হঠাৎ হাসতে শুরু করলো মিহির পাগলের মতো। "সত্যি মানুষের মন যেখানে থাকে সেটা দিয়ে লিখলে নিশ্চয়ই লোকের মনে লাগবে," এই বলে মিহির উঠে দাঁড়ায়। তার হাতে একটি হাতুড়ি যা সে টেবিলের তলায় লুকিয়েছিল। তার স্ত্রী বিপদের আশঙ্কা বুঝেও সাহায্য চাওয়ার সময়টুকু পেলনা না। প্রায় কয়েকবার মেরেই সে তার স্ত্রী এর মাথাটি ফাটিয়ে দেয় আর সেই অংশটাকে আরও খুলে ঘিলুর রস আর রক্ত মিশিয়ে তাতে একটু কালি দিয়ে তার গল্প লেখা শুরু করে আর মৃতদেহটিকে তার study room এ রাখে idea পাওয়ার জন্য। আর একদিন সময় বুঝে তার স্ত্রী এর প্রেমিক কেও গাড়ির অ্যাকসিডেন্ট করিয়ে খুন করেন , আর ঠিক সেইরকম ভাবেই কালি বানিয়ে তা দিয়ে লিখতে থাকেন। এক বছরের মধ্যেই তার প্রথম গল্প শেষ যা তাঁর জীবনের উপর অনেকটুকু , যেই গল্পের দুটি চরিত্র রাজিয়া আর তার স্বামী অজয়।

তারপর পরের বছরের শুরু থেকেই তিনি রেড লাইট অঞ্চলে যাতায়াত করতেন । একটি হিজড়ে ছিল তার পছন্দের । তিনি তাকে একদিন নিজের বাড়ি নিয়ে আসেন। ঘরে ঢুকেই তার প্রথম কথা ," বাবু এ কিসের গন্ধ? কি বাজে!"

"ও কিছুনা ইঁদুর মরার নয়তো সাপ।"

এরপর তারা বেশি দেরি না করে নিজেদের গোপন ঘনিষ্ঠতা সেরে নেয় ।

এরপর মিহির বাবু তাকে বলে,"তোকে নিয়ে যদি কিছু লিখি তাহলে কেমন হয়?"

"কি বলেন বাবু আপনি!" একটু ভেবে নিয়ে,"লিখুন যদি চান।"

"তাহলে তো তোর মন জানতে হবে," এই বলে মিহির তার বেডের পাশে ডেস্ক এ রাখা একটি কাঁচি ওই হিজড়ের গোপন অঙ্গে ঢুকিয়ে দেয়। সে যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকলে মিহির তাড়াতাড়ি করে হাতুড়িটা আনে , আর একইভাবে তারও ঘিলু বার করে নেয়।আর লাশটা রাখে study room এ। জন্ম নেয় সেই বছরে তার আরেক গল্প যার চরিত্র শক্তি। 

আপাতত সেই বছরে আর কোনো গল্প তিনি লেখেননি। 

পরের বছর তিনি দুজন মেয়ের সাথে affair চালাচ্ছিলেন। তবে জুলাই এর শেষ সপ্তাহে একজনকে চারদিন একজনকে তিনদিন ঘরে বন্দি করে ধর্ষণ করেন এবং শেষে দুজনকেই নৃশংস ভাবে মারেন সেই একই পদ্ধতিতে আর লাশ দুটিকে study room এ রাখে, আর সেখান থেকেই তাঁর শেষ গল্প জন্ম নেয় যার চরিত্র লিলি এবং নিশা।

একদিন তার কোনো এক প্রতিবেশী হয়তো মতিগতি ফেরার পর প্রায় তিন বছর বাদে পুলিশ এ কমপ্লেন করেন। আর study room এ লাশের সাথে মিহির বাবু ধরা পড়েন। তিনি পুলিশ কে সব বলেন কিন্তু তাঁর বিন্দুমাত্র দুঃখ কিংবা অনুতাপ ছিলনা , যেনো সে চিরো অনুতাপহীন নেমেসিস। তাঁর করা সমস্ত অন্যায় সমস্ত ধ্বংস যেনো নতুন কিছু সৃষ্টি করেছে।আজ তিনি জেল এ তবে তাঁর ফাঁসি হওয়ার কথা ছয় বছর বাদে। কিন্তু পাঁচ বছরেই যেনো তাঁর সময় থেমে আসছে । কেন তা তিনি জানেন না, শুধু তিনি একটি কথাই বললেন," যা ভেসে উঠবে চোখে তাই চরিত্র হতে পারি আমিও কে বলতে পারে।" 

আর সত্যই রচনা কখন রচয়িতা, রচয়িতা কখন রচনা হয়তো স্থূলচক্ষুতে তা অস্পষ্ট।


Rate this content
Log in

More bengali story from Arijit De

Similar bengali story from Tragedy