Rinki Banik Mondal

Inspirational

2  

Rinki Banik Mondal

Inspirational

চলো পাল্টাই

চলো পাল্টাই

4 mins
673


বেলতলা স্টেশনের পাশে ওই ছোট্ট বস্তির একটি ঘরে থাকে রতন, ওর স্ত্রী রত্না আর ওদের দুই ছেলে রিন্টু আর টুনু। অভাবের সংসার ওদের। রতন ঠেলাগাড়ি চালায়, আর স্ত্রী রত্না লোকের বাড়ি কাজ করে। রতনের বড় ছেলেটা বস্তির একটি স্কুলে পড়ে, ক্লাস থ্রি। আর ছোট ছেলেটার পাঁচ বছর হয়েছে। রতনের এখন আর্থিক সামর্থ্য নেই টুনুকে স্কুলে ভর্তি করার জন্য। বড় ছেলে রিন্টু কোনো দিন স্কুলে যায়, আবার কোনদিন যায় না। আর দায়িত্ব নিয়ে ঘড়ি ধরে ওকে কেই বা সময় দেবে? রত্না তো লোকের বাড়ি কাজ করে তাই ঠিক সময় দিতে পারেনা রিন্টুকে। ছোট ছেলেটাও ওরকম হেলাফেলায় বড় হচ্ছে। পেটের ভাত দুটো জোগাড় হলেই তাদের কাছে এখন যথেষ্ট। রতন তাও প্রায় দিনই রিন্টুকে জিজ্ঞেস করে ঠিকমতো পড়াশোনা করছে কিনা। রিন্টু হ্যাঁ বলে। রতন তো পড়াশোনা জানেনা, তাই ঠিক বোঝেও না পড়াশোনার ব্যাপারে ছেলের সত্যি মিথ্যে কথা। আর স্কুল থেকেও কিছু জানায় নি। যাইহোক, এভাবেই চলছে ওদের কষ্টের সংসার।

মিন্টুর বয়সটা আট হলেও, সে বস্তিতে কতগুলো ওর চেয়ে বয়সে বড় খারাপ ছেলের সাথে মিশতে শুরু করেছে। এই বয়সেই ওর মধ্যে একটা হাতটানের স্বভাব রপ্ত হয়েছে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ওর মধ্যে ছোটখাটো পকেটমারি, মিথ্যে বলা এই সব রপ্ত হতে থাকে। রতন বা ওর স্ত্রী কেউই রিন্টুর এই দিকটার দিকে লক্ষ্য করেনি। অবশ্য তারা পেটের চিন্তা করবে না ছেলের এসব ব্যাপারে খেয়াল করবেন! খিদের জ্বালা যে বড় জ্বালা! তবে সেদিন হয়েছে এক কাণ্ড!

-------"আমি মাফ চাইছি,,,,ভুল হয়ে গেছে আমার,,,,আর মেরো না।"

-----"বাড়ি কই তোর? থানায় নিয়ে যাব এক্ষুণি।" বলেই একটি লোক থাপ্পড় লাগালেন রিন্টুর গালে। পাশের লোকটা আবার বললেন-

-----"ভাই থামলেন কেন?দেন আর কয়ডা" এই শুনে কান বরাবর সজোরে আরেকটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো লোকটা। রিন্টু গালে হাত দিয়ে দেয়াল ঘেঁষে বসে রইল, গাল দুটো ওর চোখের জলে ভেসে যাচ্ছে। গায়ের রং কালো হলেও আঘাতে রেখাগুলো স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। কান্না আর হৈ-হুল্লোড়ের শব্দে রিন্টুরই স্কুলের এক শিক্ষক সজল রায় ব্যাপারটা বোঝার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়লেন। স্কুলের শিক্ষক সজল বাবু কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই রিন্টু উনার পা জড়িয়ে ধরল।

------"স্যার আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি আর চুরি করবো না। ওদের একটু বলুন না আমায় আর না মারতে। আমায় ছেড়ে দিতে বলুন না স্যার।"

সজলবাবু দেখলেন ভয়ে রিন্টুর হাত-পা কাঁপছে। তিনি সবার উদ্দেশ্যে বললেন-

------"এইভাবে গণপিটুনি দিও না। একটা বাচ্চাকে কেউ এইভাবে মারে নাকি? ওকে একটু কেউ জল দাও।"

রিন্টু যেন সজল বাবুর কথায় একটু বল পেল। তখন পাশে থেকে কেউ সজল বাবুকে বলে উঠল-

------"এত দরদ দেখাবেন না স্যার এদেরকে, মাথায় চড়ে বসবে। চোর কোথাকার! এদের মা-বাবার কোন শিক্ষাদীক্ষা নেই। আমার মানিব্যাগ আর খাবারের দেখুন ওর কাছে এখনো আছে।"

সজলবাবু দেখলেন সত্যিই একটা মানিব্যাগ আর খাবারের প্যাকেট রাস্তায় পড়ে আছে। সজলবাবু ওগুলো উঠিয়ে রিন্টুর কাছে দিয়ে বললেন ওগুলো যার থেকে নিয়েছে তাকে ফেরত দিয়ে ক্ষমা চাইতে। রিন্টু শিক্ষকের কথামত তাই করল। সজলবাবু রিন্টুর বাবা-মাকে সব জানালেন, আর বললেন ছেলের দিকে খেয়াল রাখতে।সজল বাবু শাস্তি হিসেবে রিন্টুকে বললেন-

------"এবার থেকে রোজ ভালো ছেলে হয়ে স্কুলে যাবি। আর যদি না যাস তাহলে কিন্তু তোকে কেউ ভালোবাসবে না, যে সৎপথে থাকে সে ঠিক সবার মন জয় করতে পারে, তাতে নাইবা থাকল গাড়ি-বাড়ি। বুঝলি?"

রিন্টু সজলবাবুর কথায় ঘাড় নেড়ে বলে-

-------"হ্যাঁ স্যার, এবার থেকে আমি রোজ স্কুলে যাবো। ভালো ছেলে হয়ে থাকবো।"হয়তো গল্পে যতটা সহজ ভাবে এই ব্যাপারটা বলা গেল বাস্তবে কাজে করে দেখাতে হয়তো ঠিক ততটাই কঠিন হবে। সজলবাবুর মত একজন লোক সেদিন তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল বলেই হয়তো রিন্টু ভালো হতে পারবে। একটা ছোট্ট কুঁড়ি যখন শুরুতেই ভুল করতে যাচ্ছে তখন তাকে মারধোর না করে ভালোবেসেও বদলানো সম্ভব। আমরা প্রথমেই কেন আদিম মানুষের ন্যায় ওদের দেখে হিংস্র হয়ে উঠি কেউ বলতে পারেন? নিজের অজান্তেও তো একটা মানিব্যাগ পকেট থেকে রাস্তায় পড়ে কতবার হারিয়ে যায়। তাহলে? আজ রিন্টুর মত এরকম শত শত বাচ্চা ভুল পথে চলে যাচ্ছে। এটা কি ওই বাচ্চাগুলোর দোষ নাকি এই সমাজটা ওদের কলুষিত করছে? আজ আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবারে বা ধনী পরিবারের কোনো না কোনো বাচ্চা এরকম ভুল বারবার করছে। স্কুলে গিয়ে অন্যের পেন্সিল নিয়ে চলে আসছে, মা'র ব্যাগ থেকে দশ টাকা নিয়ে নিচ্ছে। তাহলে কি আমরা ওদেরকে এই ভাবেই মারধর করি? একটু অন্যভাবে ভাবতে পারি না কি? ওরা তো মাটির পুতুল। যেভাবে আমরা গড়বো সেভাবেই গড়ে উঠবে। তবে কোনো কোনো সময় অর্জিত কিছু খারাপ আচরণ ওদের মধ্যে স্বভাব সিদ্ধ হয়ে পড়ে। সেটাতো আমাদেরই খেয়াল রাখতে হবে। নাহলে সেই সব বাচ্চাগুলো বড় হয়ে কোন বড় ভুল কাজ করবে। তখন আমরা চেয়েও তাদের আটকাতে পারবো না। ওদেরকে মারধর করলে ওদের জিদটা যে আরও বেড়ে যাবে। তা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। তাই কঠিন কাজ হলেও একটু চেষ্টা তো করাই যায়। চলুন না এবার আমরা নিজেরা একটু পাল্টে দেখি। আর বাচ্চার সব দোষের জন্য দায়ি কিন্তু তার মা-বাবা নয়। আমাদের সমাজকেও ওদের ভুল পথের রাস্তাটা বন্ধ করতে এগিয়ে আসতে হবে। ওদের একটা সহজ-সুন্দর জীবন ফিরিয়ে দিতে আমাদেরও সাহায্যের হাতটা বাড়িয়ে দিতে হবে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational