Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Sucharita Das

Inspirational

2  

Sucharita Das

Inspirational

চলার পথে

চলার পথে

7 mins
509


জীবনে চলার পথে কত মানুষের সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয়।কেউ ভালো শিক্ষা দিয়ে যায়,কেউ বা তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করে আরোও বেশি করে জীবনের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।কেউ ভালোবাসতে শেখায়,কেউ বা আবার ভালোভাবে বাঁচতে শেখায়। তনিমার জীবনে প্রত্যুষের আবির্ভাব এর মধ্যে কোন্ শিক্ষা দিয়ে গিয়েছিল, সেটা জানতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে দশ বছর আগের অতীতে।


তনিমার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল খুব ছোট বেলায়, হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষা দেবার পরই। মধ্যবিত্ত পরিবারে মেয়ে একটু বড়ো হলেই সম্বন্ধ আসতে শুরু করে।তনিমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।নিকট আত্মীয়ের বাড়িতে বিয়েবাড়িতে গিয়েছিল, সেখানেই প্রত্যুষের মা, বাবার ওকে দেখে ভালো লেগে গিয়েছিল।খবরাখবর নিয়ে এরপর বিয়ের কথাবার্তা শুরু হয়। কলেজে পড়বার খুব শখ ছিলো তনিমার। আর শখ ছিলো ওর ভালো ল- ইয়ার হবার। মা, বাবাকে বলেও ছিলো ও সেকথা। কিন্তু ভালো পাত্র দেখে মা, বাবা আর দেরি করতে চাইল না।বললো বিয়ের পর কলেজে ভর্তি হবি।ওরা তো বলেছে পড়াশোনা করাবে যতদূর তুই চাইবি পড়তে। কিন্তু সত্যিই কি তাই? বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়ে, দেখতে দেখতে বিয়ের দিনও এসে গেল। তনিমা আর আপত্তি করতে পারলো না। সবটাই ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিলো।


বৌভাতের দিন সবাই নতুন বউয়ের খুব প্রশংসা করলো। কি সুন্দর দেখতে, কতো অল্প বয়স, একেবারে লক্ষী প্রতিমার মতো বউ হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। তনিমা সবই শুনেছে, যারা প্রশংসা করেছে, শাশুড়ি র কথায় তাদের চুপ করে হাসিমুখে প্রণাম ও করেছে। নিমন্ত্রিতরা সবাই চলে গেলে, বাড়ির লোকজন ও খাওয়া দাওয়া সেরে যে যার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। রিসেপশন এর জন্য যে হল বুক করা হয়েছিল, সেখান থেকে তনিমার শ্বশুরবাড়ি বেশি দূর না। তাই বাড়ি ফিরতে বেশি সময় লাগলো না। বিয়ের জন্য কদিন ধরে শরীরের উপর বেশ ধকল যাচ্ছে। তনিমার দুচোখ ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আসছিল। সবাই ওকে ওর নিজের ঘরে পৌঁছে দিলো।ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো খাটে ওকে আর প্রত্যুষকে বসিয়ে কিছু আচার অনুষ্ঠান পালন করে সবাই চলে গেলো।প্রত্যুষের সঙ্গে অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হওয়ার সুবাদে সেভাবে তো প্রত্যুষকে চেনেই না ও। বাড়ি থেকে বিয়ে ঠিক হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই তো ওদের বিয়ে হয়ে গেল। একটু যেন আড়ষ্ট হয়ে আছে তনিমা। প্রত্যুষ দরজাটা লক করে তনিমার কাছে এসে ওর হাতটা নিজের হাতে নিয়ে, একটা আংটি ওর অনামিকায় পরিয়ে দিলো। তারপর তনিমাকে কিছু বুঝতে না দিয়েই ওর মুখটা নিজের দুহাতে চেপে ধরে ওর ঠোঁটে চুমু খেল। সবটাই কেমন যেন যান্ত্রিক মনে হচ্ছে তনিমার। করতে হয় করা, এরকম আর কি। হঠাৎই তনিমা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সরে গেল। এরকম যান্ত্রিক ভালোবাসা তো ও চায়না।যে ভালোবাসায় কোনো উষ্ণতার ছোঁয়া থাকে না, দুটো হৃদয়ের সম্মতি থাকে না,সেটা আর যাই হোক, ভালোবাসা হয় না। তনিমার তাই মনে হয়েছে, আগে ওরা একে অপরকে চিনুক,জানুক ভালো ভাবে। তারপর তো একে অপরের মনের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ও কাছে আসবে।



তনিমা প্রত্যুষের দেওয়া আংটি দেখে বললো , খুব সুন্দর হয়েছে। প্রত্যুষ সঙ্গে সঙ্গে যে এরকম একটা উত্তর দিতে পারে , সেটা তনিমা স্বপ্নেও ভাবেনি। প্রত্যুষ ওকে বললো,"আমাদের বাড়িতে কোনো সময় খারাপ জিনিস কেনা হয় না।সবসময় ব্রান্ডেড জিনিস ই আমাদের পছন্দ। দিদি এটা এখানকার বেস্ট জুয়েলারি শপ থেকে কিনে এনেছে।" আচ্ছা এই সুন্দর মুহূর্তে এই ধরণের কথা বলাটা কি প্রত্যুষের কোনো দরকার ছিলো। তনিমা তো শুধু মাত্র ওর ভালো লেগেছে জিনিসটা, এটাই বলেছিল। তাতে এত কথা। প্রত্যুষ কি তাহলে এইরকমই। তনিমা র এই ভাবনা টা যে কতটা সত্যি সেটা তনিমা কিছু ক্ষণের মধ্যেই বুঝে গেল। প্রত্যুষ ওর ঠোঁটে চুমু খাবার পর জিজ্ঞেস করলো," লিপস্টিকটা কি তোমাদের বাড়ি থেকে দিয়েছে?"

তনিমা হতভম্ব হয়ে গেল এইধরনের প্রশ্নে। কোনো রকমে ধাতস্ত হয়ে বলল , "হ্যাঁ।" প্রত্যুষ বললো, "জানতাম , বুঝতে পেরেছি, আমাদের বাড়ি থেকে এত খারাপ জিনিস দেবে না তোমাকে।কেমন যেন তেতো ছিল লিপস্টিকটা। ব্র্যান্ডেড জিনিস না হলে এটাই হয়।"

তনিমার মাথা কাজ করছে না ফুলশয্যার রাতে এই ধরণের কথাবার্তায়। ও কখনও এরকম কথাবার্তা শোনেই নি। বেচারা ওর বাবা তো বিয়ের আগে নিজে হাতে কিছুই কেনাকাটা করেনি। মা ও যায়নি। তনিমা আর ওর দিদি মিলেই বিয়ের সমস্ত কেনাকাটা করেছে। আর যথেষ্ট ভালো জিনিস ই ওরা কিনেছে।তা সে শাড়ি, গয়না থেকে শুরু করে কসমেটিকস পর্যন্ত সব ই। কিন্তু সেটা নিয়ে যে ফুলশয্যার রাতে এই ধরণের মন্তব্য শুনতে হবে তনিমা কে , সেটা ও কল্পনাতে ও আনেনি কখনও। 



কথার মাধ্যমেও যে এরকম ভাবে কাউকে ছোট করা যায়, তা প্রত্যুষের সঙ্গে বিয়ে না হলে মনে হয় তনিমা জানতেও পারতো না। কথাবার্তা থেকে শুরু করে আবেগ, প্রত্যুষের সব ই যেন কিরকম যান্ত্রিক মনে হচ্ছে তনিমার। এভাবেও কেউ ভাবতে পারে নাকি। ভাবতে যে পারে, তার প্রমাণ তনিমা পরদিন সকালে ই পেয়ে গেল। ফুলশয্যায় তনিমা দের বাড়ি থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল ওরা ভালো জিনিস দিতে। সেই মত সমস্ত জিনিস তনিমা আর ওর দিদি মিলে কিনেছিল। কিন্তু প্রত্যুষদের বাড়ির লোকজন যে এভাবে আচরণ করবে তাতে, সেটা তনিমা ভাবতে পারেনি। কোনো জিনিস ই এদের পছন্দ হয় না। সবেতেই খুঁত ধরছে।

এদের কাছে কারুর কোনো অনুভূতির কোনো দাম ই নেই। সবটাই যান্ত্রিক, কেমন যেন পেশাদারি মনোভাব।তনিমার এক মুহুর্ত ও ভালো লাগছে না এদের সঙ্গে। এই কদিনেই ও যেন কেমন হাঁপিয়ে উঠেছে। সবজায়গাতেই মানিয়ে নেওয়া আর মেনে নেওয়া মুখ বুজে। একদিন রাতে ও প্রত্যুষকে বললো, পড়াশোনাটা আবার শুরু করতে চায় ও। নিজের ল-ইয়ার হবার ইচ্ছের কথাও প্রকাশ করলো। উত্তর এলো, "মন দিয়ে সংসার করো। নতুন করে আর কিছু শুরু করবার দরকার নেই। শ্বশুর, শাশুড়ি, স্বামী, সংসার নিয়ে থাকো।ঘোরো,বেড়াও ,আনন্দ করো। এইটুকু হলেই তো চলে যায়।এরপর বাচ্চা হবে,তাকে সময় দাও, তার ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবো।এখন আবার নিজের লেখাপড়া কিসের?"

 কেন জানে না তনিমা, সেদিন কেমন যেন একটা জেদ চেপে গিয়েছিল ওর মনের মধ্যে।কিছুতেই প্রত্যুষের এই 'না' বলাটাকে মন থেকে মেনে নিতে পারছিল না সে। বাপের বাড়ি কদিন থাকবে বলে গিয়ে, সমস্ত খোঁজ খবর নিয়ে এসেছিল কলেজে ভর্তি র। শ্বশুরবাড়ি ফিরে গিয়ে কিছু জানায়নি ভয়ে। কিন্তু প্রত্যুষ কিভাবে দেখতে পেয়েছিল কলেজের ফর্ম টা। কতভাবে যে অসম্মান করেছিল তনিমা কে, সেকথা আজ ও মনে আছে তনিমার। কড়া ভাষায় জানিয়ে দিয়েছিল প্রত্যুষ , পড়াশোনা না তো সংসার, এর মধ্যে যে কোনো একটা কে, যেন সে বেছে নেয়। পরদিন তনিমা বেছে নিয়েছিল তার পড়াশোনা কে, তার ক্যারিয়ার কে। এক বস্ত্রে প্রত্যুষ সেদিন ওকে ওর বাপের বাড়ি ফিরে যেতে বলেছিল। কোনো রকমের তর্কে যায়নি তনিমা সেদিন। মা, বাবা ওকে দেখে খুব কষ্ট পেয়েছিল সেদিন। কিন্তু তনিমা কথা দিয়েছিল মা, বাবা কে যে ,সে নিজের জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবে।



এরপর তো তনিমা র জীবনে শুধুই তার পড়াশোনা ছিল। হস্টেলে থেকে পড়াশোনা টা চালিয়ে গেছে ও।এর ই মাঝে প্রত্যুষ দের বাড়ি থেকে ডিভোর্সের মামলা করা হয়েছে।‌ বিভিন্ন ভাবে তার ওপর মিথ্যে আরোপ করা হয়েছিল। একটা মেয়ে যখন তার স্বামী, সংসার আর লেখাপড়ার মধ্যে, লেখাপড়া টাকে ই প্রাধান্য দেয়, তার মানে তো সে মেয়ে ভালো না। হ্যাঁ, এরকমই অভিযোগ আনা হয়েছিল তনিমা র বিরুদ্ধে। কোনো রকমের ঝামেলায় না গিয়ে তনিমা ডিভোর্স টা দিয়ে দিয়েছিলো। কারণ তার সামনে এখন অনেক কাজ।যে কারণে র জন্য সে তার সর্বস্ব ত্যাগ করে এসেছে, সেই কাজটা তাকে করতেই হবে।



সেদিন তনিমা নিজের চেম্বারে বসে ছিল। একটা জরুরী কেসের ব্যাপারে আলোচনা করছিল তার সহকর্মীর সঙ্গে। হঠাৎই একজন পঁয়ত্রিশ,ছত্রিশ বছরের ভদ্রমহিলা ওর চেম্বারে বিনা অনুমতিতে ই ঢুকে এলো। বাইরে গার্ড দেওয়া অল্পবয়সী ছেলেটি পিছন পিছন এসে বললো, "ম্যাডাম অনেক বারণ করলাম , কিছুতেই শুনছেন না ইনি। বলছেন আপনার সঙ্গে দেখা না করে যাবেন না।" তনিমা দেখলো সুশ্রী চেহারার মহিলা, দেখে মনে হচ্ছে খুব চিন্তিত। তনিমা ওর সহকর্মী কে ইশারায় বাইরে যেতে বললো। তারপর ভদ্রমহিলা কে বসতে বললো। তনিমা বললো, "এবার বলুন কেন দেখা করতে চাইছিলেন আমার সঙ্গে।" ভদ্রমহিলা বললো,"সব বলবো । সেজন্যই তো আপনার কাছে ছুটে এসেছি। আমাকে বাঁচান দিদি। আমি আর পারছিনা এইসব নিতে।" তনিমা বললো ,"সব খুলে বলুন আপনি। দেখছি কি করতে পারি আপনার জন্য।"

"প্রত্যুষ মিত্র র স্ত্রী আমি। আমার নাম নমিতা। দেখতে ভালো ছিলাম বলে এরা যৌতুক বাবদ কিছু নেয়নি আমার বাবার থেকে। কিন্তু বিয়ের পর থেকে সবক্ষেত্রে ,সবার সামনে শুধু অপমান করে যায় এরা। গরীব বলে উদ্ধার করেছে আমাকে। আমার বাবা, মা নাকি ভিখারির মতো। শুধু বাচ্ছাটার জন্য কিছু করতে পারিনা দিদি। নইলে এত অপমান সহ্য করতাম না,কবেই কিছু করে নিতাম। শেষ করে দিতাম নিজেকে। আপনার কথা সব জেনেছি পাশের বাড়ির থেকে। সেজন্য আজ ছুটে এসেছি আপনার কাছে।"

তনিমা সব শুনছিল মন দিয়ে। শুধু জিজ্ঞেস করলো, "কি করতে চাও তুমি?"

"আমি আর থাকতে চাই না দিদি ওদের বাড়িতে। ভালো ল-ইয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে যে পয়সা লাগবে,তাও আমি দিতে পারব না। সেজন্য ই আপনার ব্যাপারে সব জেনে ছুটে এসেছি আপনার কাছে। আপনি আমাকে বাঁচান দিদি।"

তনিমা সব জানে প্রত্যুষের কথা,ওর বাড়ির লোকের কথা। সব মেয়ে হয়তো তনিমা হতে পারে না, সেটাও বোঝে ও। শারীরিকভাবে নির্যাতন না করেও যে কোনো মেয়েকে কতটা মানসিক অত্যাচার করা যায় কথার মাধ্যমে, সেটা প্রত্যুষ বা ওর ফ্যামিলির সঙ্গে না থাকলে, তনিমা জানতেও পারতো না। আর তাই নমিতা কি মানসিক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, সেটা তনিমা র বুঝতে কোনো অসুবিধা হয়নি।



তনিমা নমিতার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল সেদিন দিদি র মতো। ওকে সাহায্য করেছিল সবরকম ভাবে। কোর্টে প্রথম দিন তনিমা কে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিল প্রত্যুষ আর ওর বাড়ির লোক। তনিমা যে এভাবে নমিতা র পাশে দাঁড়াতে পারে, সেটা ভাবতে পারেনি প্রত্যুষ।

প্রত্যুষ তনিমা কে জীবনে চলার পথে কি শিক্ষা দিয়েছিল, সেটা তনিমা হয়তো নিজেও জানেনা। কিন্তু জীবনের কিছু খারাপ অভিজ্ঞতা কখনও কখনও মানুষ কে, জীবনের পথে অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। তনিমা এটাও জানে না যে,ওর সেদিনের সংসার ছাড়ার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল কিনা। তবে ও এটুকু বুঝতে পেরেছে যে খারাপ অভিজ্ঞতা আমাদের জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিয়ে যায়। যেটা জীবনে চলার পথে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


Rate this content
Log in

More bengali story from Sucharita Das

Similar bengali story from Inspirational