RIJU PAUL

Classics Fantasy Inspirational

3.0  

RIJU PAUL

Classics Fantasy Inspirational

চেতনা

চেতনা

3 mins
678


         দৃশ্য এক 


“ এভাবে লটারির টিকিট বেচে আর কতদিন চলবে শঙ্কর? ছেলেটা বড় হচ্ছে তো, কিছু ভাব একটা। “

“ভাবছি তো বাবলুদা, কিন্তু কি করবো বলো, এই বয়সে এসে চাকরি জোটাবো সেই সুযোগ আর ভাগ্য কোনটাই যে আমার নেই গো।“

“ হাহা, ভাগ্য বানাতে হয় রে পাগলা। যাকগে শোন, একটা কাজ আছে, একটু সমঝে চলতে হবে এই আরকি। করবি তুই?”

“সমঝে চলতে হবে মানে? খুলে বলো তো।“

“উহু, এখানে নয় , সন্ধ্যেতে ঝিলপাড়ে দেখা করিস। আর ভালো কথা কাউকে কিছু বলবি না আসার আগে, মনে থাকে যেন। “

“না না, কাউকে বলবো না, সময় মতো পৌঁছে যাবো আমি।“


শঙ্কর প্রামাণিক। বড়পোতা গ্রামের বহু পুরোনো বাসিন্দা প্রামাণিকরা। একসময় গ্রামের গরিবগুর্বো থেকে নায়েববাড়ি, ক্ষৌরকর্ম করার জন্য সবাই ওদেরই ডাকতো। বাপ ঠাকুর্দার থেকে কাজ ভালোই শিখেছিল শঙ্কর। গোটা গ্রামে আর কোন নাপিত না থাকায়, কাজকর্মও ভালোই চলছিলো। বিয়ে করলো, ফুটফুটে ছেলেও হলো। হঠাৎ কি যে হলো তারপর। গ্রামের ছেলেপুলেরা শহুরে কায়দায় সেলুন খুলে বসলো মোড়ের মাথায়। ব্যাস আরকি। কাজকর্ম কমতে শুরু করলো শঙ্করের। বউটা এবাড়ি সেবাড়ি রান্নার কাজ নিলো, তাতেও সংসার চালানো দায় হয়ে উঠছিলো এই মাগ্গিগন্ডার বাজারে। নেহাত বসতভিটেটা পৈতৃক, তবুও তার বেহাল দশা।


              দৃশ্য দুই 


“ না না বাবলুদা, এ কাজ আমি করতে পারবো না। মা শীতলার দিব্যি এমনধারা কাজ আজওব্দি করিনি কখনো। “

“আরে আচ্ছা বোকা তো, তোকে কি করতে বলা হয়েছে? শুধু ডেলিভারি তো? ব্যাস আরকি, প্যাকেটে কি আছে না আছে তোর জানার কি দরকার। এই যে এতদিন ধরে কাজটা করছি, সেই আমিও জানিনা কিসের ডেলিভারি দিচ্ছি। আমার বস সোজা হিসেব টাকা দাও ,সব করে দেবো। হা হা। “

“কিন্তু, এভাবে ..।”

“কিসের কিন্তু! দ্যাখ ভাই, টাকা চাই নাকি? বউটাকে তো লোকের বাড়ির ঝি বানিয়েই ফেলেছিস এক্কেবারে। তাই বলছি চুপচাপ কাজটা কর । “

“আচ্ছা বলছো যখন, করবো। আর উপায়ই বা কি আছে। “

“এই নে অগ্রিম পাঁচশো টাকা, কাজ শেষ হলে বাকিটা পাবি। বেগড়বাই করিস না যেন পরে। মনে থাকে যেন, কাল ঠিক সকাল ছটা ।“


                দৃশ্য তিন 


“এই ব্যাগ খোল হারামজাদা, খোল বলছি। তখন থেকে দেখছি এদিক ওদিক করে যাচ্ছে। ঠিক সন্দেহ হয়েছে। “

“আমি জানি না স্যার, আমি কিচ্ছু জানি না, একজন নিতে আসবে। আমি শুধু ..”

“ খুলতে বলছি খোল, নাহলে কিন্তু মেরে হাড়গোড় এক করে রেখে দেবো? এই দেখুন বড়বাবু ছোট ছোট প্যাকেটে ভর্তি ড্রাগস। কি রে কদিন এই লাইনে? একাই করিস না বউটাকেও লাইনে নামিয়েছিস, হুমম? “

“না না স্যার, আমরা ভদ্রবাড়ির লোক, ওসব ..”

“চোপ, ন্যাকামো হচ্ছে, ড্রাগ ডিল করছে সে নাকি ভদ্রলোক, এই বোস চার্জশিটটা বের করো। “

“স্যার আমায় ছেড়ে দিন, আর হবে না, বাড়িতে ছোট ছেলে আছে। পায়ে পড়ছি স্যার আপনাদের, ছেড়ে দিন।“


“ওগো শুনছো, কি হলোটা কি তোমার ? কাকে ছেড়ে দিতে বলছো ঘুমের ঘোরে? শরীর খারাপ করছে? এই বাবু চট করে ভোম্বল কাকাকে ডেকে আনতো, তোর বাবা কেমনধারা করছে। “


            দৃশ্য চার 


“ বাবলুদা এই নাও তোমার পাঁচশো টাকা। ওকাজ আমি করবো না গো। আমায় দিয়ে হবে না “

“ তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলছিস। “

“না গো, এ লক্ষ্মী নয়, এ যে পাপ। এই পাপের টাকায় ছেলেটাকে বড় করে তুলবো কিকরে? বড় হয়ে ও যদি এভাবে..না গো বাবলুদা আমি বলিকি এই কাজটা তুমিও ছেড়ে দাও। “

“কাজ ছাড়লে খাবো কিরে? সেটা ভেবেছিস ?”

“ শোনোনা ,ওই যে ভোম্বল, আরে আমাদের পাশের বাড়ির রতনজ্যেঠুর ছেলেটা। সাতসকালে বেরিয়ে যায় সাইকেল নিয়ে। হোটেল থেকে খাওয়ার নিয়ে লোকের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেয়। একবার ওকে গিয়ে ধরি না আমরা, যদি কোন সুরাহা হয়। “

“ কিন্তু, ওই কাজে কি আর এত টাকা ..”।

“ টাকার চেয়ে সম্মানটা কি বড় নয়গো? আরে তুমি এখানে জানতে তো পারবে তোমার ব্যাগে কি আছে! ভালো কাজ করলে ভালো বই খারাপ থাকবোনা গো আমরা। চলো চলো আর কোন কথা নয়, ভোম্বলটার বেরিয়ে যাওয়ার সময় হয়ে এলো। “

“বলছিস! চল তাহলে। “


পাইকপাড়ার দিক থেকে শোনা গেল ঢাকের বোল। নীল আকাশের রোদ ঝলমলে হাসি জানান দিয়ে গেলো, শুভ শক্তির আবির্ভাবের বার্তা, পুজো এলো বলে। 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics