STORYMIRROR

RIJU PAUL

Romance Tragedy

2  

RIJU PAUL

Romance Tragedy

মনের গহনে

মনের গহনে

3 mins
510


অফিসে অলস দুপুরে বসে হঠাৎ মনে হল, এতদিন ধরে গল্প লেখার প্লট খুঁজে বেরিয়েছি, রাস্তায়, বাসে, বাজারে এমন কি সিরিয়ালের আস্তাকুঁড়েও। সেই সব ঘষে মেজে শান দিয়েছি লেখনীতে, পেয়েছি পরিচয়, জুটেছে অকৃত্রিম ভালোবাসা নানা বয়সী মানুষদের থেকে। জীবনের বাঁকে লুকিয়ে থাকা অন্ধকার গলি ঘুপচি গুলোতে আলো আসার রাস্তা তারাই খুঁজে দিয়েছে, এগিয়ে চলার সাহস দিয়েছে। সেই সাহসে ভর করে পঁচিশটা বসন্ত কাটিয়ে যখন পিছনে ফিরে তাকালাম, চোখে পড়লো একরাশ হাতছানি ...


"বাহ, দারুণ হাতের লেখা তো তোমার। কি নাম? "

- সুমন।

"বেশ, পারবে ফ্রি বডি ডায়াগ্রামটা করতে? বোর্ডে করো, বাকিরা খাতায় করো, কেউ হেল্প করবে না, প্রত্যেকের কপি চেক করবো "।


কম্পিত হাতে প্রথম বোর্ডের সামনে দাঁড়ানো, চোখ বন্ধ করে মনোনিবেশ করা, করতেই হবে যে করে হোক।

"স্যার, হয়ে গেছে "।

- "ভেরি গুড, জানতাম তুমি পারবে "।


চমকে উঠেছিলাম সদ্য জয়েন করা মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের লেকচারার অনির্বাণ দার কথা শুনে। উনি জানতেন আমি পারবো? হ্যাঁ, মানছি মাধ্যমিকে রাজ্যস্তরে স্কোর করা, উচ্চমাধ্যমিকে ঝাঁ চকচকে রেজাল্টের পর, যতই প্রাইভেটে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে আসি না কেন, ভালো ছেলে ইমেজটাকে ঝেড়ে ফেলতে পারি নি। তা বলে, প্রথম ক্লাসেই অচেনা কোন ছেলের প্রতি এই বিশ্বাস ভাবিয়ে তুলেছিল।

সেই যে ভাবতে শুরু করলাম, থামানো আর গেলো না, হঠাৎ করেই যেন অনির্বাণ দার সব কিছু ভালো লাগতে আরম্ভ করলো, পড়ানোর স্টাইল, ড্রেসিং সেন্স, হাল্কা হাসি এমনকি পারফিউম টাও। না, শুধু সেসব দেখতাম না, যথারীতি পড়া চালিয়ে যেতাম যাতে কোনভাবেই ওনার গুডবুক থেকে ছিটকে না পড়ি। উনি বুঝতে পারতেন আমি যথেষ্ট ওনার প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েছি, নাহলে কি আর মাস বাঙ্ক এর দিন একা ক্লাসে যাই সহপাঠীদের কটুক্তি উপেক্ষা করে। উনি খালি হাসতেন।



ফার্স্ট সেমের রেজাল্ট বেরোলো, 9.23 পেয়ে ডিপার্টমেন্ট টপ করলাম। মেকানিক্সে পেয়েছিলাম আউটস্ট্যান্ডিং গ্রেড। ভীষণ খুশি ছিলাম, ভীষণ। হস্টেলে ফিরে তুমুল আনন্দ, হইচই ...তার মাঝেই এসেছিলো প্রথম ফোন অনির্বাণ দা র। কনগ্র্যাচুলেশন জানানোর জন্য, আমি উত্তেজনায় কথা বলতে পারছিলাম না, বলিওনি সেভাবে। শুধু পরের দিন কলেজের পর দেখা করার প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছিলাম। কেন দেখা করবো, কিসের জন্য করবো, উনি কি চান.....নাহ, এর একটি প্রশ্নও আমার মাথায় সেই মুহূর্তে আসে নি। কারণটা বলার বোধকরি প্রয়োজন হবে না।


"কিরে, কতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছিস?, ভেরি সরি, ফাইনাল ইয়ারের প্রোজেক্ট নিয়ে ..."।

-"না না, সরির কি আছে স্যার , আমি এইমাত্র এলাম"।

কথা হচ্ছিল ভলিবল কোর্টের সামনে। বিকেলের হাল্কা গেরুয়া আকাশে মন কেমন করা সুর তখন। সামনের মাঠে হোস্টেলের ছেলেরা খেলছে।


" সুমন, তোকে একটা কথা বলার ছিলো, আমি জানি না বলাটা ঠিক হবে কিনা ...."।

-"বলুন না, কি বলবেন"।

"সামনের উইক থেকে আমি আর তোদের ক্লাস নেব না, যাদবপুরে জয়েন করছি "।

-"ওহ"।

"শুধু ওহ, আর কিছু না" ? হাল্কা হাসির শব্দ কানে ঢুকছিলো না তখন, গলার কাছে কিছু একটা আটকে ছিলো।

-"এটা বলার জন্য ই ডেকেছিলেন? আচ্ছা আমি আসছি "।


"দাঁড়া, এই পেনটা রাখ, ভালো করে পড়াশোনা করিস, তুই তো আবার সোশ্যাল সাইটে থাকিস না, ফোন তো আছে, কথা হবে "।


উত্তর না দিয়ে একরাশ অভিমান বুকে নিয়ে ফিরেছিলাম হোস্টেলে, পিছনে ফিরে তাকাই ও নি, কষ্টটা শুধু বুঝেছিলো বিছানার বালিশটা, আর হয়তো একজন।



বড্ড মনে পড়ছে আজ তোমায় অনির্বাণ দা, তুমি চলে যাওয়ার পর একদিন ও কথা হয় নি তোমার সাথে, শুধু তিনমাস পর পেয়েছিলাম তোমার অকালে চলে যাওয়ার খবরটা। সেদিন জানো কান্না আসে নি একদম, সত্যি বলছি, শুধু নিজের গালে সপাটে চড় মেরেছিলাম, কেন জানি নাআমার জীবনের প্রথম ভালোলাগার মানুষ তুমি বা বলা ভালো একমাত্র, কোনদিন বলি নি এই সমস্ত গোপন কথা, আজ হাত কেন থামছে না জানি না, আমি রেখেছি আমার কথা, নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি। কলেজের শেষ দিন ওব্দি সব সেমে টপ করেই এসেছি, রোবটের মত বিসর্জন দিয়েছি সব অনুভূতি, শুধু এগিয়ে চলেছি। তোমার দেওয়া পেনটা আমার ব্যাগে সবসময় থাকে, সবসময় ...


সরি, আর কিছু লিখতে পারছি না, মোবাইল স্ক্রিনটা ঝাপসা লাগছে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance