🌺 বিসর্জন 🌺 পর্ব ২

কন্যাসন্তান জন্মের ঠিক দুদিন পর থেকে তিতলির উপর শুরু হোলো নানারকম শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার । তিতলির জন্য বরাদ্দ হোলো একবেলায় ভাত - ডাল - আলুসেদ্ধ আর রাতের বেলা শুকনো মুড়ি । বাকি সারাদিনের জন্য বরাদ্দ পেটের প্রচন্ড ক্ষিদে আর গঞ্জনা , চড় - থাপ্পড় , চুলের মুঠো ধরে দেওয়ালে ঠুকে দেওয়া ইত্যাদি । এসবের থেকেও চরম মানসিক যাতনা ছিল মেয়ে কাঁদলেও বুকের দুধ না খাওয়াতে পারা । বাড়ির কাজের ঝি - টাকে ছাড়িয়ে দেওয়ায় সব কাজ করতে হোতো তিতলিকেই । বুকের দুধে শরীর ভেসে গেলেও কাজ না শেষ করে মেয়ের কাছে যাওয়ার অনুমতি ছিল না । তিতলির কাছে এই চেনা মানুষগুলো কেমন যেন অচেনা হয়ে উঠলো । এমনকি তিতলির বাপের বাড়ির কেউ ফোন করলেও শ্বাশুড়ী বা শ্বশুর অথবা সন্দীপন কেউ না কেউ সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো যাতে তিতলি কিছু না বলতে পারে । তিতলি ধীরে ধীরে খুবই দূর্বল হয়ে পড়ে । মেয়েকে কি করে বাঁচিয়ে রাখবে সেই চিন্তা রাতের ঘুমও কেড়ে নিয়েছিল । অত্যাচার দিনের পর দিন বাড়তেই থাকে । হঠাৎ একদিন রাতে পাশের বাড়ির লোকেরা অনেক রাতে খুব চীৎকার - কান্নার শব্দ শুনতে পায় । কিন্তু তিতলির মুখরা শ্বাশুড়ীর ভয়ে কিছু বলতে পারে না । দিনের পর দিন এরকম চলতে থাকে । কখনো গালিগালাজ , কখনো জিনিসপত্র পড়ার শব্দ , কখনো তিতলির প্রচন্ড কান্নার শব্দ । দিন বারো এরকম চলার পর পাড়ার গোটা দশেক মহিলা মিলে একরাতে ঐ ঝামেলার সময় তিতলির বাড়িতে যায় । সবাই তিতলিকে দেখেই আৎকে ওঠে, তিতলির অতো সুন্দর মুখটা মারে মারে কালশিটে পড়ে গ্যাছে । সারা শরীরেই অজস্র কালশিটে দাগ । মহিলারা প্রতিবাদ করতেই তিতলি তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বলে , " আপনারা এইসময় কেনো এসেছেন ? এখনি চলে যান এখান থেকে, লজ্জা করে না আমাদের পারিবারিক ব্যাপারে কথা বলতে এসেছেন । " এই বলে সবাইকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় । তিতলির এই আচরণে সবাই যেমন অবাক হয়ে যায় তেমনি রেগেও যায় । আর কেউ ওদের ব্যাপারে মাথা ঘামাতো না । 

তিতলির মেয়ে " মিষ্টির " জন্মের ষোলো দিনের দিন ছিল দূর্গা পূজার ষষ্ঠী । মহালয়ার পর দিন সন্দীপন মায়ের জন্য দুটি শাড়ি , বাবার জন্য একটি পাঞ্জাবি ও একসেট শার্ট-প্যান্ট এবং নিজের জন্য দুই সেট শার্ট-প্যান্ট কিনে নিয়ে আসে । তিতলি খুব আশা করেছিল হয়তো সন্দীপন পূজোর জন্য সব ভুলে ওর জন্য আর মেয়ের জন্য কিছু নিশ্চয়ই নিয়ে আসবে । কিন্তু নাঃ, কিছুই জুটলো না তিতলির আর মেয়ের । খুব কান্নায় ভেঙে পড়েছিল তিতলি । এই কি ওর সেই ভালোবাসার মানুষ, যাকে এতো ভালোবাসলো সেই চেনা মানুষটা এইভাবে বদলে যাবে তিতলি স্বপ্নেও ভাবতে পারে নি । 

তিতলি তাও সন্দীপনকে মুখ ফুটে কিছু বলে নি । ষষ্ঠীর দিন পাড়ার পূজোতে মায়ের বোধনের মন্ত্রপাঠ ঘরে বসেই শুনছিল তিতলি , সেই সময় সন্দীপন মাকে বলে, " কালকে সবাই মিলে ঠাকুর দেখতে যাবো " । তিতলি ভাবলো সবাই মিলে মানে হয়তো

ক্রমশঃ প্রকাশ্য