Ignite the reading passion in kids this summer & "Make Reading Cool Again". Use CHILDREN40 to get exciting discounts on children's books.
Ignite the reading passion in kids this summer & "Make Reading Cool Again". Use CHILDREN40 to get exciting discounts on children's books.

Snigdha Jha

Drama

4  

Snigdha Jha

Drama

বিশ্বাসে মিলায় বস্তু

বিশ্বাসে মিলায় বস্তু

6 mins
1.8K



----মাজী, কাল সে চারদিন নেই আবে সকবো... সম্ভালি লিহ। 

সেদিন আমার নতুন কাজের মেয়েটি এসে বলে। পুরোনো মেয়েটির বিয়ে হয়ে শ্বশুরবাড়ী চলে যাওয়াতে একমাসও হয় নি এ কাজে জয়েন করেছে। এর মধ্যেই চারদিন ছুটি!

----কাহে রে পিংকি? 


জিজ্ঞেস করি।


 ----আপনেকের ইতনা ভী নেই মালুম। 'ছট মাইয়া 'কে পূজা যো ছিকে। বহুত সাফ-সুতরি হইকে পরসাদ বনাবেল পড়তো। কাল 'কদ্দুভাত', পরশো 'খরনা'। খরনাকে দুসরা দিন সামকে সূরজ কো পহলী অরঘ, চৌথা দিন ভোরুয়া উগতা সূরজ কো দুসরী অরঘ দেই কে হাত উঠাইবো। উসকে বাদ পরসাদ খাইকে ব্রত তোড়বো। 


 ---চারো দিন ভুকলো রহবেঁ কি?

আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাই ওর দিকে।


 ---নেই... নেই... কদ্দুভাতকে দিন একটেম আর দুসরা দিন খরনাকে পরসাদ একটেম খাইবো। পহলী অরঘ কে দিন সে বিনা পানিকে ভুখলো রহবো। দুসরী অরঘ দেই কে সমাপ্ত। হামরো পহলা বেটা জনম কে বাদ সে হী বীমার রহে ছেলে। 'ছট মাইয়া' সে মান্নত মাঙ্গে, তব যা কর বেটা মেরা স্বস্থ রহা। বড়ী কিরপা উনকী। জয় ছট মাইয়া।

বলে দু' হাত জুড়ে কপালে ঠেকায় সে। আমারও দু'হাত ওর দেখাদেখি স্বাভাবিক ভাবে কপালে উঠে যায়। 


 ---মাজী, একঠো নয়া শাড়ী দেবোহ্ তো বড়ী কিরপা হতেই। পুরানকা কাপড়া নেই চলেইছে। 

বলেই মুচকি হাসে সে। বুঝতে পারলাম পরিস্থিতির লাভ ওঠাচ্ছে। কিন্তু পুজোর নামে চাইলো, না করতে পারলাম না। একটা নতুন সূতীর ছাপা শাড়ী বের করে দিলাম ওর হাতে। খুব খুশী হলো। 


হ্যাঁ, বিহারে আস্থার মহা উৎসব এই 'ছটপূজা'। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এই ঐতিহ্যবাহী পর্ব অত্যন্ত আস্থার সঙ্গে পালিত হয়। এখন অবশ্য এই উৎসব বিভিন্ন প্রদেশের সংস্কৃতির সাথে জুড়ে গেছে। আমি ছটপুজোর ব্যাপারে কিছুটা জানি। "নহায় খায়" থেকে এই উৎসবের শুরু। অর্থাৎ ঘরদোর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে ( দুর্গাপুজোতে যেমন আমরা করি) স্নান করে ছটব্রতী মাটির উনুন তৈরী করে নিরামিষ খাবার বানায়। বাড়ীর সকলকে খাইয়ে তবে নিজে খাবে। এইদিন খাবারে থাকবে লাউ আর ছোলার ডাল মিশিয়ে একটা তরকারী আর ভাত। তরকারী ওই একটাই থাকবে। একেই বলে "কদ্দুভাত" ( কদ্দু মানে লাউ)। যাদের বাড়ীতে কেউ এই ব্রত করছে তাদের বাড়ীর সকলেই এই চারদিন নিরামিষ খায়। পুরুষরাও ইচ্ছে করলে ব্রতী হয়।


দ্বিতীয় দিন হচ্ছে "খরনা"। এ'দিন ব্রতী সারাদিন উপোষ করে সন্ধ্যেবেলা আখের রসে চাল দিয়ে পায়েস বানিয়ে প্রসাদ হিসেবে গ্রহণ করে। এই প্রসাদ নেওয়ার জন্য পড়োশীদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়। এদিন খাবারে নুন বা চিনি থাকবে না। খুব শুদ্ধাচারে বানানো হয়। অনেকে  "কদ্দুভাত" খাওয়ানোর জন্যও পড়োশীদের ডাকে। আমি দু' দিনের প্রসাদ খাওয়াতেই আমন্ত্রিত হই প্রায় প্রত্যেকবারের পুজোতেই। জানি না কেন এই সাধারণ খাবারেরও স্বাদ যেন অমৃত মনে হয়।  


তৃতীয় দিন ছটপুজোর প্রসাদ বানানো হয় "ঠেকুয়া"( একটু মোটা করে গম পিষিয়ে তাতে খুব ভালো করে ঘিয়ের ময়ান দিয়ে ড্রাই ফ্রুটস ছোট করে কেটে মিশিয়ে শক্ত করে মেখে বিভিন্ন আকারে গড়ে ডীপ ফ্রাই করা হয়), চালের লাড্ডু ( চালের গুঁড়ো ঘিয়ে ভেজে চিনির রস করে মিশিয়ে লাড্ডু বানানো হয়, এতেও ড্রাই ফ্রুটস কুচিয়ে দেয়), আর "খাবুনী" ( একটু মোটা মিষ্টি লুচি বলা যায়)। এছাড়া বিভিন্ন রকমের ফল আর কাঁচা সব্জিও প্রসাদে দেওয়া হয়। বিভিন্ন ফলের সাথে কলা,নারকেল আর বাতাবিলেবু নিতান্তই আবশ্যিক। আখের টুকরো, কাঁচা হলুদ ইত্যাদি নানারকমের জিনিষ দিয়ে প্রসাদের ডালা সাজানো হয়। বাঁশের ডালা বা কুলোতে প্রসাদ সাজিয়ে নিয়ে বিকেলবেলা ব্রতীরা গঙ্গা, কোন নদী বা কোন জলাশয়ের ধারে একত্রিত হয়। সেখানে জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে অস্তগামী সূর্য্যকে জল আর দুধ দিয়ে অর্ঘ্য প্রদান করা হয়। এদিন ব্রতী সম্পূর্ণ উপোষ করে থাকে।


চতুর্থ দিন এইভাবেই আবার উদিত সূর্য্যকে অর্ঘ্য প্রদান করা হয়। তারপর কাঁচা দুধের শরবৎ আর প্রসাদ খেয়ে ব্রতী তার উপোষ ভাঙ্গে। খুব নিষ্ঠার সাথে এই ব্রত পালন করা হয়। বিনা সেলাই করা নতুন কাপড় পরে অর্ঘ্য দেওয়া হয়। তিনদিন ব্রতী মেঝেতে কম্বল বিছিয়ে শোয়। 


আসলে এটা সূর্য্যদেব আর তাঁর পত্নী ঊষাদেবীর পুজো। পুজো ষষ্ঠী তিথিতে হয় বলে "ষষ্ঠী" শব্দের অপভ্রংশ "ছট" পুজো নামে প্রসিদ্ধ। বিহার (অঙ্গদেশ) মহাভারতের চরিত্র কর্ণের জন্মভূমি আর কর্ণ সূর্য্যদেবের পুত্র। কর্ণ প্রথম থেকেই সূর্য্যদেবের উপাসক ছিলেন। কথিত আছে তিনি যখন অঙ্গদেশের রাজা হন তখন ধুমধাম করে এই পুজোর প্রচলন করেন। তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় রাজা ছিলেন, তাই প্রজারা তাঁর প্রতি আনুগত্যে এই পুজো পরম্পরাগতভাবে চালিয়ে যায়। সেই পরম্পরা আজও যথারীতি পালন হয়ে আসছে। তাছাড়া হিন্দুধর্মে প্রকৃতি পুজো তো পুরোনোকাল থেকেই চলে আসছে।  


আমি কয়েকবার গঙ্গার ঘাটে গেছি পুজো দেখার জন্য। ভীষন ভিড় হয় বলে বেশী যেতাম না। এবার বন্ধুরা মিলে ভোরের অর্ঘ্য দেওয়া দেখার জন্য গঙ্গার দিকে রওয়ানা হলাম। গিয়ে ব্রিজের ওপর জায়গা দখল করে দাঁড়ালাম। এখান থেকে নীচে পুজোর জায়গা বেশ দেখা যায়। যারা পুজো করছে তাদের থেকে মনে হয় পুজো দেখতে আসার লোকের সংখ্যাই বেশী। রীতিমত মেলা বসেছে। খাবারের আর বিভিন্ন মনোহারী দোকানের ছয়লাপ। মহিলা ব্রতীরা নাক থেকে সিঁথি পর্য্যন্ত সিঁদুরের রেখায় সুশোভিতা। গঙ্গার ঘাটে তিলধারণের জায়গা নেই। ওরই মধ্যে সবাই নিজের নিজের ডালা কুলো রেখে পুজোর জায়গা বানিয়ে নিয়েছে। দর্শনার্থীদের মধ্যে অনেকে নৌকোয় করে খানিক দূরে গিয়ে পুজো দেখছে। মনোহর দৃশ্য। আমরা ব্রিজের ওপর যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখানে রীতিমত ঠেলাঠেলি কান্ড। আমার দুই শক্তপোক্ত বন্ধু আমাদের দুইধারে মোর্চা সামলে রেখেছে। আবছা আলো ফুটে উঠছে। পূর্বদিকে নরম কমলা রঙের থালার মত আকার নিয়ে সূর্য্যদেব উঁকি দিতে শুরু করেছেন। তৈরী হয়ে থাকা ব্রতীরা ধীরে ধীরে জলে নেমে মন্ত্রোচ্চারণের সাথে অর্ঘ্য দিতে থাকে সূর্য্যদেবের উদ্দেশ্যে। তামার ঘটি থেকে দুধের ধারা বয়ে যায় গঙ্গার বুকে। সে এক ভক্তিময় দৃশ্য। আমরাও এই জীবনদেবতার উদ্দেশ্যে আমাদের হাত জোড় করে মাথা নোয়ালাম।


এরপর ব্রতীরা নারকেল ইত্যাদি ফল নিয়ে জলে ভাসাতে লাগলো। আর সেই ফল নেওয়ার জন্য বাচ্চাদের মধ্যে লেগে গেল হুটোপুটি। আরে আরে....হঠাৎ আর্ত চিৎকার শুনে দেখি সবাই জলের মধ্যে কিছু খুঁজছে! জানতে পারলাম জলে ভাসিয়ে দেওয়া ফল তুলে নেওয়ার জন্য কিছু বাচ্চা জলে নেমে হুড়োহুড়ি শুরু করেছিল, তাদেরই একজন তলিয়ে গেছে জলের তলায়। সর্বনাশ.... বর্ষার জলে পূর্ণযৌবনা গঙ্গার রূপ এখনও উচ্ছল। আর এই ব্রিজের কাছে জল কেন জানি না ভীষণ ঘুরপাক খায় সবসময়। আমরা তাড়াতাড়ি নীচে নেমে ঘাটের দিকে এগোলাম। কিছু সেবাসংস্থা নৌকো নিয়ে ঘোরে এইসময়। তাদেরই কয়েকজন ডুবুরী ঝাঁপিয়ে পড়লো জলে। ঘাটে গিয়ে দেখি ক্রন্দনরতা আর কেউ নয়... আমাদের পিংকি। তারই আঠ/ নয় বছরের বড় ছেলেটির সাথে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে সাহস দেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলাম। বললাম, 


 ----ছটমাইয়ার ওপর ভরসা রাখ পিংকি। তোর ছেলে নিশ্চয় ফিরে পাবি।

 ----অগর ছটমাইয়া হমরো বেটা ন লোটাই তো হম্মু গঙ্গাজীমে কুদি যাইবো।


 বলে পিংকি জলে ঝাঁপ দেওয়ার জন্য ছটপট করে ওঠে।    


আশেপাশে ওর আত্মীয়স্বজনও সান্ত্বনা দেয়...বলে,

 ----ছটমাইয়া কেকরো গোদ খালি নেই করতেই, তোঁ থোরা শান্ত রহ্।


আমি শক্ত করে ধরে থাকি ওকে। আমার বন্ধুরাও এসে ঘিরে ধরে। মনে মনে প্রার্থনা করতে থাকি,

"হে সর্বশক্তিমান সকলের বিশ্বাসের মর্যাদা রাখো"।


প্রায় দশ মিনিট পরে ডুবুরীরা ভেসে উঠলো প্রায় মাঝ গঙ্গার কাছাকাছি। একজনের হাতে বাচ্চাটি। নৌকো তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে ওদের তুলে নেয়। একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি নৌকোর ওপরেই প্রাথমিক উপচার শুরু করে দেয়। আমরা প্রায় নিশ্বাস বন্ধ করে অপেক্ষা করছি। নৌকো ঘাটে আসে। বাচ্চাটিকে ডাঙ্গায় নামাতেই পিংকি ছুটে যায়। ঈশ্বরের কৃপা যে ছেলেটি বেঁচে আছে। সবাই কপালে হাত ঠেকিয়ে চিৎকার করে উঠলো, "জয় ছটমাইয়া"। সামনে এক বোলেরো গাড়ী দাঁড়িয়ে ছিল। মালিককে খুঁজে এনে বাচ্চাটিকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হলো। আমরাও বাড়ী ফিরলাম।  


আরও তিন/চার দিন পর পিংকি কাজে এলো। এর মধ্যে খবর নিয়েছিলাম যে বাচ্চাটিকে একদিন হাসপাতালে রেখে দ্বিতীয় দিন ছেড়ে দিয়েছে ,ভালো আছে সে। পিংকির হাতে ছটপুজোর প্রসাদ। আমার হাতে প্রসাদ দিয়ে পিংকি ছলছল চোখে বলে উঠলো,  

 ---বড়ী কিরপা ছটমাইয়া কী। 

আবার কপালে হাতজোড় করে ঠেকায় সে। সত্যি "বিশ্বাসে মিলায় বস্তু ,তর্কে বহুদূর"।  

(সমাপ্ত)


Rate this content
Log in