বন্ধন
বন্ধন
----হ্যালো, আমি কি প্রদ্যোত সেনের সাথে কথা বলছি?
----বলুন।
----আপনি লেখা দেওয়ার সময় একবার বাড়িয়ে নিয়েছেন। আপনার চাহিদা অনুযায়ী অ্যাডভান্স পেমেন্ট আমরা করে দিয়েছি। আগামীকাল লেখা জমা না করলে সমস্যায় পড়ে যাবো। আর কিন্তু সময় দিতে পারবো না। এটা লাস্ট মনে করিয়ে দেওয়া বলতে পারেন।
ফোন কেটে গেল,মানে ওদিক থেকে কেটে দেওয়া হলো।ফোন রেখে দু'হাতে কপালের পাশের রগ চেপে ধরে মাথা নীচু করে কিছুক্ষণ স্থির হয়ে বসে থাকে প্রদ্যোত। শেষের কথাটার শ্লেষ তার সারা শরীরে বিষের মত ছড়িয়ে পড়ে জ্বালা ধরিয়ে দিল। লেখার জগতে সবে নাম ছড়াতে শুরু হয়েছে। বেশ কিছু নামী পত্রিকা তার লেখার চাহিদা করছে। সকলের চাহিদা মেটানোর জন্য সময় চাই। আবার সংসারের দিকে তাকিয়ে চাকরিটাও ছাড়তে পারে না। লেখার থেকে আমদানী যথেষ্ট নয়। একমাস থেকে মা শয্যাশায়ী। তাঁর চিকিৎসা চালিয়ে যেতে আর্থিক অবস্থা টলোমলো। তাই সম্পাদকের থেকে এই অ্যাডভান্স টাকা নেওয়া।
---আদা দেওয়া চা। খেয়ে নাও,আরাম পাবে।
কাছে এসে শান্তা তার মুখখানি দু'হাতে তুলে ধরে। স্ত্রীর সহানুভূতি মাখানো মায়াবী চোখের দিকে চেয়ে তার সব জ্বালা জুড়িয়ে যায়। তার বুকে মুখ ডুবিয়ে নিজে
কে শান্ত করার চেষ্টা করে।
উঠে গিয়ে লেখার টেবিলে বসে প্রদ্যোত। খাতা খুলে কলমদান থেকে টেনে নেয় প্রিয় কলমটা। কি লিখবে! কিছুদিন থেকে সংসারের নানান ঝামেলা সৃষ্টির উৎসমুখে যেন পাথর চাপা দিয়েছে। লেখা তার কলমে স্বতঃস্ফূর্ত ঝরণাধারার মত খাতার ওপর বয়ে যায়। কিন্তু তার জন্য আত্মার পটভূমি চাই। তবেই সেই ঝরণা ক্রমশঃ গভীর নদীর আকার ধারণ করে কলকল ছলছল করতে করতে গভীর সমুদ্রে.. তার মঞ্জিলে গিয়ে অবগাহন করতে পারে। সেই অবগাহনের থেকে যে মণিমুক্তো উঠে আসে তাই সে সম্পাদকের সাহায্যে তার পাঠকের গলায় পরিয়ে দেয়।
কিন্তু আজ সেই পটভূমিতে কম্পন। কি করে লিখবে সে। প্রাণহীন এক পুতুল বানালে তা পাঠকের দরজায় পৌঁছাবে কি করে! না সে এভাবে তাদের ঠকাতে পারে না। সম্পাদক বোঝে না যে কালি আর কলম হাতে থাকলেই লেখা যায় না, আত্মার আত্মীয়তা এতে অত্যন্ত জরুরী। কথায় আছে না,
" কালি,কলম,মন.. লেখে তিনজন"।
---এই নাও সেই অ্যাডভান্সের টাকাটা,আমি খরচ করি নি এখনও। যাও,গিয়ে সম্পাদককে ফিরিয়ে দিয়ে এসো।
কৃতজ্ঞতায় আপ্লুত প্রদ্যোত সেন মুখ তুলে চায় শান্তার দিকে। এবার টাকা নিয়ে বেরিয়ে পরে সে তার আত্মাকে বন্ধনমুক্ত করতে।
(সমাপ্ত)