বিল্টু ও SPD
বিল্টু ও SPD
বৃদ্ধ বয়স,দ্বিতীয় ছেলেবেলা।তাই দুই শিশুর মধ্যে যে বোঝাপড়া,তা শব্দে প্রকাশ করা কঠিন।মা-বাবা নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত,তাদের মধ্যে বিশেষ কেউ নাক গলায় না।নিঃসঙ্গ দাদুর তাই জগত জুরে শুধুই নাতি।নাতিও দাদুকে পেলে আর কিছু চায় না।
ঘুমানোর সময় spd ভুঁড়ি তে পা তুলে কত গল্প,স্কুল ফিরেই বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে spd সাথে নানা শলা পরামর্শ, এরোপ্লেন ল্যান্ড করিয়ে খাইয়ে দেওয়া,চানের সময় দলাই-মালাই মালিশ,কত খেলা,ক্রিকেট ফুটবল থেকে ব্যাগাডুলি।Spd ছাড়া কেউ বল করলে,ঠিক হাঁকিয়ে ছয় পেটানো যায় না।তার আদরের চাদরে মুড়ে,কি অবলীলায় কত কৌশল শেখা যায়।তার শাসনে,কষ্টের থেকে অনুতাপ হয় বেশি।অনুতাপের শিক্ষা,সারা জীবন স্মরণে থাকে।
Spd-র আদতে খুব কম খেলনা কিনেছে বিল্টু।ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে spd-র সাথে কত খেলনা বানিয়ে ফেলেছে।কয়েকটা তার বন্ধুদেরও দিয়েছে ।এইতো কদিন আগে পাউডার কৌটো দিয়ে একখান উড়োজাহাজ বানিয়েছে।আকাশে না হলেও,ঘরের মধ্যে বেশ ভালোই উড়ে।এরোপ্লেন বানিয়ে বিল্টু আর spd নতুন পার্টনারশিপের নাম "উইলিয়াম ব্রাদার্স"।
Spd-র কাছে পড়া খেলা আলাদা কিছু নয়।সে 'ন' ঘরের নামতার কবিতা শিখেছে,পার্ক যেতে spd বাহনে বসে কটা গাছ আছে গুনেছে।তাই যখন মিস গাছের ছবি দেখিয়ে,ক্লাসে অঙ্ক ধরেছিল,তখন বিল্টু প্রথমেই উত্তর দিতে পেরেছিল।
মন্টুর সাথে মারামারির কথা শুনলে হয়ত মা আরো কয়েক ঘা দিত।কিন্তু spd কে বলাতে,সবটা শুনে সে জোর করেই মন্টুর বাড়ি নিয়ে গেল।দুজোনকেই কোলে বসিয়ে আবার সবটা শুনলো।তারপর বলল "দু একবার ভালো করে এগরোল চাইতে পারতে,নিজের চাউমিনটা আগে মন্টু সাথে ভাগ করে খেতে,তাহলেই মারামারি,কাড়া-কাড়ি ছারায়,মন্টুর এগরোলের ভাগ পেতে,মাঝখান থেকে এগরোলটাও মাটিতে পরে নষ্ট হতো না"।
মন্টুও পরক্ষণে স্বীকার করলো,সে এগরোলটা দিয়ে দিত,তার রোজ রোজ এক এগরোল খেতে ভালো লাগে না।আমি মেরেছিলাম,তাই ও আমার গায়ে হাত তুলেছে।যাইহোক মন্টুর সাথের আবার ভাব করে ফিরল বিল্টু।Spd সফলভাবে কেসটা মিটিয়েছে।আজ বোধহয় spd-র মেশিনটা ফুল-চার্জ।
Spd মেশিনটা একবার গন্ডগোল হওয়ায়,কোথায় যেন সারাতে গেছিল,তখন বিল্টুবাবুর জগৎ প্রায় শূন্য।স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে দেখলো, ঘুড়ি আছে,এরোপ্লেন আছে,কিন্তু তার সাথে উড়ানোর কেউ নেই।মা বলল"চটপট খাবার শেষ করো"।কিন্তু পাইলট ছাড়া খাবারের গ্রাসগুলো কি ভাবে তার মুখে ল্যান্ড করবে!মনটা আরো খারাপ হয়ে গেল।Spd-র মেশিন ঠিক হতে আর কদিন কে জানে!জেদ ধরায়,মা নিয়ে গেল বিকেলে।
গিয়ে বিল্টু দেখলো spd শুয়ে আছে।বরাবর spd পাশের জায়গাটা বিল্টুর দখলে।কিন্তু এ বিছানাটা কেমন যেন ঘেরা,পাশে জায়গাও বিশেষ নেই।spd-র গা জুরে অনেক তার।তাকে দেখে spd বলল" তোমার রোবট-গাড়ি মত চার্জ নিচ্ছি দাদুভাই,ফুল-চার্জ হয়ে গেলে বাড়ি যাব"। বিল্টুরও ইচ্ছে করছিল চার্জ নিতে।বলতেই যাচ্ছিল,বাড়ি চলো,আগে জানলে একদিন না হয় গাড়ি চার্জ না দিয়ে,তোমায় চার্জ দিতুম।কিন্তু এত সময় পাওয়া গেল না।তার আগেই অফিসে দেরি হয়ে যাচ্ছে বলে কোলেতুলে মা বাড়ি চলে এল।
সময় যেন থেমে গেছে।অপেক্ষা করতে করতে, জলপরীর কি হল শেষে না জেনেই ঘুমিয়ে পরল বিল্টু।সকালে স্কুল।
যাই হোক,দু দিন লাগলো spd চার্জ হতে।দু দিন পর ফিরে এলো বটে,কিন্তু spd চার্জ যেন কমে গেছে।তা যাগ্ গে, spd ফিরে এসেছে,তাতেই হবে।সাইকেলে চেপে পার্ক যাওয়া হলোনা কদিন কিন্তু spd-র ভুঁড়ি চড়েই কাশ্মীর,গ্যাংটক ঘুরে এলো বিল্টু।বরফ জলে হেঁটে বেড়ানো,ফুল আপেল,আরো কত কি!
দু সপ্তাহের মধ্যে spd এবার ফর্মে।বিল্টুর সাথেই spd কে বেশি চার্জড দেখায়!
বেশ কাটছিল। কিন্তু হঠাৎ একদিন spd বাথরুমে চিৎ-পটাং।তাইনা দেখে বল্টুর সেকি হাসি!যেমন বিল্টু পরে গিয়ে ব্যথা পেলে spd-র হাসিতে সে উঠে দাঁড়ায়।পা দিয়ে জায়গাটাতে ধমক দিল বল্টু,ঠিক যেমন spd করে।কিন্তু spd উঠছে না কেন!
বোধয় আবার চার্জ শেষ।মা কে ডাকল,"আবার চার্জ দিতে হবে মা"।
Spd কে আবার নিয়ে যাওয়া হল,সন্ধ্যার মধ্যে ফিরেও এল,কিন্তু কেমন যেন সাদা চাদরে এগরোল হয়ে।বিল্টুর তাই দেখে কি হাসি পাচ্ছিল,তার সাথে spd তাড়াতাড়ি সন্ধ্যার মধ্যে ফিরে আসার আনন্দ।spd নাকে তুলো,তবুও হাঁচি দিচ্ছে না।বিল্টু ইচ্ছে করছিল আচ্ছা সে আরো সুরসুরি দিতে।বেশ মজা লাগছিল দেখতে।কিন্তু বিল্টু ছাড়া সবার চোখে জল।বিল্টু অপেক্ষায় ছিল সব ব্যপারটা spd ওকে বুঝিয়ে বলবে।এত লোকের মাঝে spd-র কাছে যাওয়ার সুযোগটা পাচ্ছে না।মাঝে মুনুদি,মাসিমুনিরাও এসেছে।সবার জন্য রান্না হচ্ছে।সব কিছুর মধ্যেও কি spd-র একবারও বিল্টুরকাছে আসতে ইচ্ছা করছে না!
এবার অভিমান হচ্ছে বিল্টুর।এত লোক পেয়ে তবে কি তাকে ভুলে গেছে!
Spd ছাড়া সব কিছু বিষাদ লাগছিল বিল্টুর।কত সুযোগ ছিল বেগুনি হাতানোর,কিন্তু একা একা খাবে....তা ছাড়াও মা'র হাতে ধরা পরলে কে বাঁচাবে তাকে?
এবার বিল্টুর নজরে পরল,spd যেখানে শুয়ে ছিল,সেখানে নেইতো আর!তবে কি বাবার সাথে আবার গাড়ি করে কোথাও গেল?
কিছুক্ষন পর বাবা ফিরে এল।কিন্তু একা।
ছুটে গিয়ে বিল্টু জিজ্ঞাসা করল।উত্তরে বাবা প্রথমবার বিল্টুকে জরিয়ে ধরে আকাশের দিকে দেখিয়ে বলল spd নাকি ওই তারার কাছে চলে গেছে।
চট করে বিল্টুবাবু হাত ছাড়িয়ে ছুটল নিজের ঘরে।নাহ্, উড়োজাহাজটাতো এখানেই আছে।তবে spd কিসে চেপে গেল...কেনই বা গেল।
রাতে শুয়েও তারার দিকে তাকিয়ে বিল্টু।বেশ চক্-চক্ করছে।অভিমানে spd-র সাথে আড়ি করে নিয়েছে।
পরক্ষনে ভাবল জলপরী শেষটা জেনে নিয়ে তারপর আড়ি করবে।তারার দিকে চেয়ে রইল।কিন্তু এ তারা বুঝল না বিল্টুর ঘুম পেয়েছে,গল্প খিদে পেয়েছে।হয়ত spd বলছে।ঘরের সব আয়োজনের আওয়াজে চাপা পরে গেছে।
পরেরদিন spd-র একটা ভালো ছবি বাবা দোকান থেকে নিয়ে এল,সেই অবসর নেওয়ার দিনের ছবিটা।কিন্তু বিল্টুবাবুর এসব দিয়ে কি হবে।কাল spd গল্প বলেনি।আজ কতদিন ব্যাট হাঁকিয়ে ছক্কা মারেনি বিল্টু।spd-র সাথে এই আড়ি,কেউ আর ভাঙাতে এলো না....এমনকি spd ও না।
