STORYMIRROR

Suspense queen 'Tinni'

Classics

4  

Suspense queen 'Tinni'

Classics

বিবাহ বিভ্ৰাট

বিবাহ বিভ্ৰাট

5 mins
411

বিয়ের পিঁড়িতে বসে আছে কালু। বউ আসবে পিঁড়ি চেপে মুখে পানপাতা ঢেকে। বউ দেখতে ভারী মিষ্টি তাই বউয়ের নামও মিষ্টি...!! পুরুত ঠাকুর কালুকে বলেন,"বাবা উঠে দাঁড়াও... ছাদনাতলায় তোমার বউ আসবে যে...!!"


কালু চোখ পাকিয়ে বলে ওঠে,"কি বললেন আপনি... আসপান্নায় আমার দারু আসবে...??? এসব কি বলছেন পুরুত মশাই... বিয়েবাড়িতে আসপান্নার কথা বলতে আছে...!! আসপান্না তো ছেরাদ্দ বাড়িতে হয়।" একটু ঠোঁট চেপে হেসে বলে,"তা... আপনি বললে একটু দারু খাওয়া যেতেই পারে..."


কালুর কথা শুনে পুরুত ঠাকুরের চোখ কপালে ওঠে.... তিনি মনে মনে ভাবেন,"এই ছেলে নির্ঘাত কালা... বললাম কি আর শুনলো কি...!!"


ছাদনাতলায় বরের চারিদিকে, তিনবার পাক খাওয়ানোর পর বরের সামনে বউয়ের পিঁড়ি ধরা হয়..... পুরুত ঠাকুর বলেন,"মা পানপাতাটা সরাও, এবার যে শুভদৃষ্টির পালা...!!"


কালু অমনি মুখ কুঁচকে বলে ওঠে,"ধানছাতা সরাবে... এখানে ধানছাতা কোথায় পুরুত ঠাকুর.." হেসে বলে,"আপনার চোখে ব্যামো আছে.. আপনি বোধহয়, চোখের মাথা খেয়েছেন... ডাক্তার দেখান।" পুরুত মশাই তো রেগে লাল... নিজে তো কানে কম শোনে আবার চক্ষুদৃষ্টি নিয়ে প্ৰশ্ন তুলছে... সাহস কি এই ছোকরার...!! কালু আদুরে স্বরে বলে,"বউ.. বউ পানপাতাটা সরাও, তোমার চাঁদপানা মুখখান একটু দেখি...!!"


মিষ্টি পানপাতা সরায়, একরাশ লজ্জা নিয়ে পিটপিটিয়ে কালুর দিকে তাকায়... কালু মুখ হাঁ করে বউয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। কালুর ভাই বালু কালুর মুখটা ফেলেং বন্ধ করে দিয়ে বলে,"মুখটা বন্ধ করো দাদা..!! মুখে মশা ঢুকে যাবে তো.."


কালু চটজলদি বলে ওঠে,"শশা... কে খাবে শশা..!! তুই খাবি...!!" বিয়ে বাড়িতে বরের এহেন কর্মকান্ড ভাবাচ্ছে সব আত্মীয়স্বজনদের। বরের আজব কথা শুনে সকলের চোখ গোলমটল.. পুরুত ঠাকুর চট করে কথা পাল্টে বলে,"শুভদৃষ্টি সুসম্পন্ন হলো..."


কালু বলে,"কুবৃষ্টি....!!! বৃষ্টিও আবার কু হয়...??"

পুরুত মশাই নিজের মাথায় চাপড় মারে... মিষ্টি বউ রেগে ফায়ার, পিঁড়ি নেমে মালা ছিঁড়ে ফেলে চেঁচিয়ে বলে,"এ বিয়ে হবে না... এমন একটা কালা ছেলেকে আমি বিয়ে করবো না।"


কালু কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে,"এমন করে বলো না বউ.... তুমি বিয়ে ভেঙে দিলে যে, আমি লগ্নভ্ৰষ্ট হবো।"


পুরুত কালুর ভাই বালুর কানে কানে বলে,"তোমার দাদা তো হেব্বি শেয়ানা হে.... যেই বলেছে, বিয়ে করবে না... অমনি ঠিকই শুনতে পেয়েছে।"


বালু কিছু বলবার আগেই কালু বলে ওঠে,"বউ আমি এখন থালা আর তেল কোথা পাই বলো তো.... কি করবে তুমি এসব নিয়ে...!! বিয়ে করে তুমি আমার ঘরে চলো... তোমাকে আমি সব দেবো, তুমি যা চাইবে সব... থালা, তেল, প্ৰেম, ভালোবাসা, বাচ্চা, লাভ বাইট....." কালুর কথা শুনে সকলের চক্ষু চড়কগাছ। ছেলেকে কি বলা হল... আর সে কি শুনেছে..!! মেয়ের বাবা তো খালি অজ্ঞান হতে বাকি রেখেছে। 


মিষ্টি কালুর কানের ধারে চেঁচিয়ে বলে,"তোমার মতো কালাকে আমি বিয়ে করবো না...!!"


কালু কানে হাত দিয়ে চেপে বলে,"চেল্লাচ্ছো কেন..?? আমি কি কালা নাকি...!! আর বিয়ের আগে কেন ইয়ে করবে..." একটু লজ্জা অবনত স্বরে বলে,"বিয়ের আগে এসব ভালো ছেলে মেয়েরা এমন করে নাকি...!! আমরা ফুলশয্যার রাতে সব ইয়ে করে নেবো..."


মিষ্টি বউ কপাল চাপড়ে বলে,"ভগবান তুলে নাও..."


কালু লজ্জামুখর হয়েই বলে,"হ্যাঁ হ্যাঁ... সব খুলেই, করবো আর কোলেও তুলবো... তুমি চিন্তা কোরো না বউ।" এরপর, মিষ্টিকে আর সুস্থসবল দেখা যায় না... তার কালা বরের পাগলামি দেখে ভিমড়ি খেয়ে মাটিতে লটকে পড়েছে। সকলে অসুস্থ কনে-কে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লে... বিয়েবাড়িতে আরো এক নতুন... বিপদের উৎপত্তি ঘটেছে। ডাকাত পড়েছে এই বিয়ে বাড়িতে... সব আত্মীয়স্বজন প্ৰায় পালিয়েই গেছে... শুধু, বর, বউ, বরের ভাই, পুরুত ঠাকুর আর হাতে গোনা কয়েকজন পালাতে চেয়েও পালাতে পারেনি, তার আগেই বন্দুক হাতে ঘিরে ধরেছে শিমুলতলী গ্ৰামের ডাকাবুকো ভয়ানক দস্যু ডাকাতের দল.... যাদের ভয়ে হাঁটু কাঁপতে থাকে.... গ্ৰামের পর গ্ৰামের। 


বউ তখনো অজ্ঞান। তার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা চলছে...; জোরকদমে। এই ডাকাতদলের নেতা হাবিলদারের মতো একখান বড়ো বন্দুক হাতে সবার সামনে নিজের পানের পিক ভর্তি মুখ নাড়িয়ে জড়ানো গলায় বলে,"আমি হলাম এই শিমুলতলী গ্ৰামের ডাকাত সর্দার... মাধাই চন্দন... নাম নিশ্চয়ই সবাই শুনেছিস...!!"



কালু ভ্ৰু কুঁচকে বলে,"কি বললেন আপনি... আপনার নাম মালাই চমচম...!!! তা বেশ.. তাতে, আমি কি করবো...?? আমাকে আমার বউকে সামলাতে দিন তো... আপনি ফুটুন তো এখান থেকে...!!"


মাধাই ডাকাত রেগে লাল..... তার নামের এ কি হাল...!!! এতো বড়ো ইনসাল্ট..!! গলা উঁচিয়ে বলে ওঠে মাধাই,"এই ছোকরা তোমার এতো সাহস.. তুমি মাধাই ডাকাতের নামে আজেবাজে কথা বলো...??"


কালু ভ্ৰু কুঁচকে বলে,"মালাই কুপোকাত...!! কিন্তু, একটু আগেই যে, আপনি বললেন আপনার নাম মালাই চমচম... এখন আবার সেপা পাল্টে মালাই কুপোপাত হয়ে গেলো...!!"


মাধাই ডাকাত,"এই ছেলে... তুমি আমার নাম নিয়ে পেঁয়াজি করছো...??"


কালু,"রেয়াজি... না গো... কাকা রেয়াজি খাসি তো বিয়েতে হয়নি...!! কিন্তু, চিকেন সিজলার হয়েছে... তুমি পেট ভরে খেয়ে যেও, রেয়াজি খাসি না হয়... বউভাতে খেও।"


মাধাই চেঁচিয়ে ওঠে,"এই ছোকরা... পাঁয়তারা করছিস তু্ই আমার সাথে...??"


কালু,"পায়খানা করিনি তো কাকু... কিন্তু, হ্যাঁ.. অল্পবিস্তর বায়ু ত্যাগ করেছি এতোক্ষণ ধরে...!!" পেটে একটু হাত বুলিয়ে বলে,"দুপুরের রুই মাছের মাথা দিয়ে ডাল আর চিকেন রেজালাটা... বড্ড ওভারলোড হয়ে গিয়েছিল।"


মাধাই ডাকাত পারলে নিজের চুল ছিঁড়ে ফেলে.... আর এদিকে, বাকিরা একদিকে, ডাকাতের ভয়ে তটস্থ অন্যদিকে, কালুর কথা শুনে হাসিও চেপে রাখতে পারছে না। মাধাই বলে,"এই ছোকরা... তুই কানে শুনতে পাস না ঠিকমতো.. তাই না...??"


কানু,"কাকু... পান আমি খাই না...!! শুধু দুধ খাই... তাও, বউ দিলেই..!!" পুরুত ঠাকুরের গলায় প্ৰাণপাখি আটকে যায়.. কখন না, ফুড়ুৎ করে বার হয়ে উড়ে যায়। 


মাধাই ডাকাত তার বিশ্বস্ত সঙ্গীকে ক্লান্ত স্বরে বলে,"চল আমরা ফিরে যাই...!! এখান থেকে ডাকাতি করে কোনো কিছু তো উদ্ধার করতে পারবোই না... উল্টে পাগল হয়ে পাগলাগারদ চলে যাবো।" কানু আবারও কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে গেলে মাধাই ডাকাত বলে ওঠে,"এইই এইই... তু্ই মুখ বন্ধ কর। আমার কি বলবি না.. বলবি। তারপর দেখা যাবে... সত্যি সত্যি আমি পাগল হয়ে গেছি। চল... ঘনু, আমরা বাবার কাছে যাই। বাবার দারুর দোকানে খেয়ে নেবো।" 


কানু আঁতকে উঠে বলে,"কি সাংঘাতিক...!! হাগুর বাগান..... তোমার বাবার আবার হাগুর বাগানও আছে..!! ছিঃ.... গন্ধে এখান থেকেই বমি পেয়ে গেলো...." 


মাধাই ডাকাত কালুর কথা শুনে সেখানেই চিৎপাত উল্টে খেয়ে পড়ে.... সর্দারের এহেন অবস্থা দেখে.... দলের মধ্যে সবার হুলুস্থুলু কান্ড। বিয়েবাড়িতে উপস্থিত একজন কবিরাজ ছিলেন। ডাকাত সর্দারের নাড়ি চেপে কবিরাজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,"নাহহহহ... হার্ট অ্যাটাক...!! মেজর অ্যাটাক। হাসপাতাল নিয়ে যাও... বাইপাস হার্ট সার্জারি করতে হবে।"


কবিরাজের কথা শুনে ডাকত দল সর্দারকে চ্যাংদোলা করে গাড়িতে তোলে... হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার জন্য...!! এতো ঘটনার মাঝে সবশেষে... বউয়ের জ্ঞান ফেরে, মিষ্টি যখন জানতে পারে যে, এই কালা বরের জন্যই তারা ডাকাতি হতে হতে বেঁচেছে... তখন খুশি মনে মিষ্টি কালুর গলায় মালা দেয়। বিয়ের শেষে... পুরুত ঠাকুর মাথায় হাত রেখে, দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের মনেই বলে ওঠেন,"এ কেমন বিবাহ বিভ্ৰাট রে বাবা....."





সমাপ্ত..................


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics